হবু মায়েদের যতœ হচ্ছে কি?

গভের্র শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিপূণর্ বিকাশের পূবর্শতর্ হচ্ছে মায়ের সুস্থতা সুনিশ্চিতকরণ। এ জন্য একজন নারীকে নিজেই যেমন হতে হয় স্বাস্থ্য সম্পকের্ সচেতন, তেমিন গভর্বতী মায়েদের প্রতি যতœশীল হতে হয় পরিবারের সবার। গভর্বতী মায়ের পরিচযার্ ‘গভর্স্থ সন্তান ও মা’ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূণর্...

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক
গভের্র শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিপূণর্ বিকাশের পূবর্শতর্ হচ্ছে মায়ের সুস্থতা সুনিশ্চিতকরণ। এ জন্য একজন নারীকে নিজেই যেমন হতে হয় স্বাস্থ্য সম্পকের্ সচেতন, তেমিন গভর্বতী মায়েদের প্রতি যতœশীল হতে হয় পরিবারের সবার। গভর্বতী মায়ের পরিচযার্ ‘গভর্স্থ সন্তান ও মা’ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূণর্। ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৮০০০ মহিলা গভর্সঞ্চারজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। পাশাপাশি নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮৩ জন। মা ও শিশুর এ অকাল মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ প্রতিরোধ আমাদের দেশে সম্ভব হয়ে উঠছে না মূলত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে। তাই গভর্বতী মায়ের যতœ সম্পকের্ নিজেকে জানতে হবে ও অনেক জানতে সাহায্য করতে হবেÑ গভার্বস্থায় করণীয় : চিকিৎসকের সাহায্যে গভার্বস্থা সম্পকের্ নিশ্চিত হলেÑ চিকিৎসকের পরামশর্ অনুযায়ী প্রতিমাসে চেকআপে থাকতে হবে। নিধাির্রত সময়ে টিটালল ইনজেকশনও নিতে হবে। গভার্বস্থায় দৈনন্দিন চলাফেরা : গভার্বস্থায় ঘরের নরমাল কাজকমর্ করে দিনে ২ ঘণ্টা পূণর্ বিশ্রাম, রাতে আট ঘণ্টা ঘুম ও বিকালে খোলা বাতাসে কিছুক্ষণ হঁাটলে খুব ভালো। গভার্বস্থায় প্রথম ৩-৪ মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে গভর্পাতের সম্ভাবনা ভেড়ে যায় আর শেষ তিন মাস পরিশ্রম বেশি করলে অপুষ্ট শিশু জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোজ ভালো করে গোসল করতে গিয়ে স্তনের অগ্রভাগ নরম চামড়া কোল্ড ক্রিমের সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে এবং হাতের বুড়া আঙুল ও তজর্নীর মাধ্যমে স্তনের বেঁাটাকে উপরে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এ সময় চাপা জামা-কাপড় পরা উচিত নয়। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই নিজের ও শিশুর প্রয়োজনীয় কঁাথাকাপড় গুছিয়ে রাখবেন। দীঘর্ ভ্রমণ ও উড়োজাহাজে চড়তে হলে তাও চিকিৎসকের পরমাশর্ অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। গভার্বস্থায় পা অস্বাভাবিক ফুলে গেলে, কম-বেশি রক্তপাত হবে, প্রস্রাব প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে, চোখ হলুদ হয়ে গেলে, সন্তানের নড়াচড়া কমে গেলে, চোখে ঝাপসা দেখলে ঘুম খুব কম হলে, ঘন ঘন মাথাব্যথা হলে, অন্য কোনো মারাত্মক সমস্যা হলেÑ সত্ব¡র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। গভার্বস্থায় কিছু স্বাভাবিক সমস্যা : অরুচি ও বমি বমি ভাব হতেই পারে। তাই যা খেতে ভালো লাগে তাই খাবেন। তবে ঢক ঢক করে ডাল, দুধ ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। এ সময় বুকজ্বালা ও বদহজম একটা স্বাভাবিক সিমটম তাই হালকা সহজপাচ্য অথচ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তা ছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানীয় ও টাটকা ফল, বেল, কলা পেয়ারা দুধ-ভাত-কলা/দুধ-আটার রুটি ইসপগুলের ভুসি খাওয়া যায় এতে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ হয়। এ সময় কোমর ব্যথার জন্যÑ শাক, ছোট মাছ, দুধ, ডিম, মাখন অথার্ৎ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, মাড়িস্ফীতি ও রক্তক্ষরণ, পাইলস ও পায়ের শিরাস্ফীতি হলে দ্রæত চিকিৎসকের পরামশর্ নেবেন। আশঙ্কাজনক গভার্বস্থা : যে যে অবস্থা থাকলে ঘরে প্রসবের ব্যবস্থা করানো উচিত নয় সেগুলোÑ ১৬ বছরের আগে বা ৩০ বছরের পরে প্রথম গভার্বস্থা, পঞ্চম বা ততোধিক গভার্বস্থা। ডায়াবেটিস, কিডনির অসুস্থতা কিংবা হাটের্র অসুস্থতা সংবলিত গভার্বস্থা। অশিক্ষিত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের গভর্বতী, যারা কোনোদিন ডাক্তার দেখায় না, বিবাহের অনেকদিন পর অধিক বয়সে গভার্বস্থা, পূবর্বতীর্ গভের্ সিজারিয়ান অপারেশন ছিল বা জটিল সমস্যা ছিল, রক্তচাপ বেশি (১৪০/৯০ মি. মি. মারকারির উপরে); রক্তস্রাব, মারাত্মক রক্তশূন্যতা, প্রসব হওয়ার নিধাির্রত তারিখের পর ১০-১৪ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলে, জন্ডিস, যমজ সন্তান বা সন্তানের অস্বাভাবিক অবস্থান, প্রসবকাল ১৪-১৮ ঘণ্টার বেশি প্রলম্বিত হওয়া বাধাগ্রস্ত প্রসব, সঠিক সময়ের আগেই পানি ভাঙা, শিশুর নড়াচড়া গভার্বস্থায় বা প্রসবকালে নিয়মের চেয়ে কম হওয়া। গভর্বতী মায়ের খাদ্য : প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারীর দৈনিক ২১৬০ কিলো- ক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হলেও একজন গভর্বতীর প্রয়োজন হয় তার চেয়ে ৩৫০ কিলো ক্যালরি খাদ্যের। তা না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভোগে ও কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মায় যার মৃত্যু আশঙ্কাজনক। এ সময় আমিষজাতীয় খাবার, উদ্ভিজ্য চবির্, যা পূরণে ভোজ্য তেল, সয়াবিন, সরিষা বাদাম। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে দুধ, স্টিমড ব্রকোলি, পনির, কম চবির্যুক্ত ইয়োগট, এককাপ ক্যালসিয়ামযুক্ত অরেঞ্জ জুস বা সয় দুধ বা চার আউন্স ক্যান করা শ্যামন মাছ খেয়ে ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে পারেন। আয়রন ও ফলিক এসিড যা কঁাচা কলা, কচুশাক, অন্যান্য ঘন সবুজ ও লাল শাক, মাছ, মাংস ও ডিমে রয়েছে। ভিটামিনের জন্য প্রচুর শাক-সবজি, টক, মিষ্টি ফল, জুস খেতে হবে। পানি যা গভর্স্থ শিশু, পুষ্টির সরবরাহ সঠিক রাখতে এবং শরীর থেকে বজর্্য পদাথর্গুলো নিষ্কাষণে সহায়ক। তাই গভর্বতীকে প্রতিদিন ১৫-২০ গøাস পানি পান করতে হবে তবে একবারে ২ গøাসের বেশি পানি পান করা যাবে না। শকর্রা যা অধিক খেলে শরীরে ওজন বেড়ে যায় তাই অঁাশযুক্ত শকর্রা যেমন ঢেঁকিছঁাটা চালের ভাত, গমের রুটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। আলু ও মিষ্টি আলু স্বাস্থ্যসম্মত যা শকর্রার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমিষ; লৌহ ও থায়ামিন, ভিটামিন সরবরাহের উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখে। তবে শাক-সবজি, ডিম, মাছ বা মাংস ভালো করে সিদ্ধ করে খেতে হবে। লিভার কিংবা লিভারজাত অন্য খাবার কম খেতে হবে। কারণ এগুলোতে উচ্চমাত্রায় ভিটামনি ‘এ’ থাকায় তা গভর্স্থ শিশুর ক্ষতি করতে মায়ের অবাঞ্ছিত গভর্পাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ কিছু কিছু খাবার যেমনÑ কঁাচা পেঁপে, আলু, ছোলা, গাজর, বিট, ফুলকপি, ধনেপাতা পুদিনাপাতা, চীনাবাদম, কাজু বাদাম, পেস্তা ইত্যাদিতে এমন কিছু উপাদন আছে যা রান্না না করলে জরায়ুর ভ্রƒণের ক্ষতিসাধন করে। ফলে গভর্পাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ভালোভাবে সিদ্ধ করলে এসব ক্ষতিকারক উপাদান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এগুলো কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। গভার্বস্থায় আনারসও ঝুঁকিপূণর্। গভার্বস্থায় সবোর্ত্তম ব্যায়াম সোজা হয়ে দ্রæত হঁাটা এবং ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এটা সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম। হবু মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যÑ প্রাকৃতিক নিমর্ল পরিবেশে হঁাটা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, নিয়মিত ধমর্ পালন, পরনিন্দা বা পরচচার্ না করা, অনৈতিক কোনো ভাবনা মনের মধ্যে না আনা, এ ছাড়া ধূমপায়ীদের থেকে দূরে থাকা, ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত কারও সংস্পশের্ না আসা উচিত।