আপনি কি ‘সারকেডিয়ান রিদম’ সম্পকের্ জানেন?

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া, মানবদেহ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সকল জীবের ভেতরেই আছে এক অদৃশ্য ছন্দ। এটাকেই বৈজ্ঞানিকভাবে বলা হয় ‘সারকেডিয়ান রিদম’। ‘সারকেডিয়ান রিদম’ হলো একটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার চক্র পূরণ করে এবং জীবিত বস্তুর অস্তিত্বকে এক অদৃশ্য ছন্দে বেঁধে দেয়। একেই বলা হয় দেহঘড়ি। কিন্তু এটা সম্পকের্ আপনি কতটা জানেন? এটা আপনার জীবনকে কতটা প্রভাবিত করে তা কি আপনি জানেন? ‘সারকেডিয়ান রিদম’ : ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে প্রথম যখন থেকে সেল বা কোষ পাওয়া যায় তখন থেকেই ছিল এই সারকেডিয়ান রিদম। এ ছাড়া এটাও মনে করা হয় যে, সূযের্র আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে দিনের বেলায় যে কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতো রাতে সেগুলো নিজেদের সারিয়ে নিতো। ‘দেহঘড়ি’ সবারই আছে : ধারণা করা হয়, যে কোনো জীবিত সত্তাÑ তা সেটির গঠন ও আকৃতি যাই হোক না কেনÑ যদি সূযর্ থেকে নিজের শক্তি সংগ্রহ করে তাহলে এটির একটি দেহঘড়ি থাকবেই। আলো ও অন্ধকারের সূত্র মেনে এই ঘড়ি কাজ করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘মিমোসা লিভস’ বা লজ্জাবতী পাতা অন্ধকারেও নিজেকে গুঁটিয়ে নেয় এবং মেলে ধরে। অথার্ৎ সূযর্ঘড়ি অনুসরণ না করে বরং লজ্জাবতী তার দেহঘড়ি মেনেই চলে। দেহঘড়ি জীবকে দেয় সীমানার বোধ : দেহঘড়ি জীবকে নানা ধরনের সুবিধা দেয়। যেমন : দেহঘড়ির কারণে জীব টের পায় দিন-রাত ও শীত-গ্রীষ্মের ব্যবধান। আর সেই অনুযায়ী শরীর নিজের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলোও নেয়। শরীরের ভেতরেই আছে এক ‘মহাঘড়ি’ : গ্রিনিচ মান সময় ভুলে যান, আপনার শরীরের ভেতরেই আছে আপনার ঘড়ি মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাস অংশে এই মহাঘড়ির বাস। এটি অনেকটা ‘কন্ডাক্টর’ বা নেতা গোছের একটি বস্তু। দিনজুড়ে সমস্ত শরীরে যে সক সিগন্যাল বা নিদের্শাবলির আদান-প্রদান চলতে থাকে এখান থেকেই তার সব নিয়ন্ত্রণ ঘটে। শরীরে আরেকটা প্রান্তীয় বা ‘পেরিফেরাল’ ঘড়িও আছে : প্রত্যেক সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করে মানুষের শরীর। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এবং টিস্যুরও রয়েছে নিজস্ব ঘড়ি। এ সব ঘড়িগুলোকে একটি তাল ও লয়ে সমন্বয় করে রাখে হাইপোথেলামাসে থাকা সেই মহাঘড়ি। শরীরের প্রতিটি কোষের ভেতরেও আছে স্বতন্ত্র ঘড়ি : শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এবং টিস্যুরও রয়েছে নিজস্ব ঘড়ি। শরীরের প্রতিটি কোষের ভেতরে রয়েছে একেকটি স্বতন্ত্র ঘড়ি। ২৪ ঘণ্টায় যার চক্র পূরণ হয়। সারক্যানুয়াল রিদম : রাত যত দীঘর্ হয়, ঘুম যত প্রলম্বিত হয়, মস্তিষ্ক তত মেলাটোন নিষ্কাষণ করে। এই হরমোনের কারণেই মানুষের ঘুম ও জেগে ওঠা নিয়ন্ত্রিত হয়। অনেক প্রাণী, যেমন হরিণ, এই ছন্দ মেনেই নিজেকে সঙ্গম ও হাইবারনেশানের জন্য প্রস্তুত করে। আর এটিও মনে করা হয় যে, রোগ-বালাই ও অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করার জন্য মানুষের শরীর শীতকালে বেশি মাত্রায় এন্টিবডি তৈরি করে। সূযাের্লাক মানুষকে রাখে সুষম, সুস্থির : যদি কাউকে অন্ধকারে ফেলে রাখা হয় তাহলে তার দেহঘড়ি ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে পড়বে। মানুষের চোখের ভেতর এক ধরনের সেন্সর রয়েছে। যেগুলো দিয়ে আলোকে শনাক্ত করা হয় এবং মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় অংশে সংকেত পাঠানো হয়। আর এভাবেই শরীরের ভেতরে গোপন দেহঘড়ি নিজের ছন্দ ধরে রাখে। এখন ঘুমের সময় : আপনার ঘুমোতে যাওয়ার সময় কখন আপনি কি তা জানেন? ভোরে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর থেকেই শরীরে ঘুমের জন্য একটু-একটু করে চাপ তৈরি হতে থাকে। কিন্তু সামান্য চাপেই কেউ ঘুমে তলিয়ে যায় না। বরং দেহঘড়ি যখন বলে, এখনই ঘুমের উপযুক্ত সময় তখনই শরীর ঘুমে ঢলে পড়ে। জেট লেগ : একেকটি টাইম জোন পার হলে শরীরের ঘড়ি ওলোটপালট হয়ে যায়, শরীর কখনো কখনো বেতাল লাগে। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিলে এমন হয়। একদিকে ঝিমুনি-ঝিমুনি লাগে, অন্যদিকে ঘুমও ঠিক আসে না। সাধারণত শরীরের ভেতরে থাকা মহাঘড়িটি যখন একটা সময়ে থাকে কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন পাকস্থলি, মস্তিষ্ক বা এরকম অন্য অঙ্গগুলো যখন ভিন্ন-ভিন্ন ছন্দে থাকে তখনই এমনটা হয়। একেকটি টাইম জোন পার হওয়ার পর শরীরের মহাঘড়িটি তার নিজের ছন্দে ফিরে আসতে সাধরণত ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। সামাজিক জেট লেগ : আপনার শরীরের ঘড়ি অ্যালামর্ দিচ্ছে আপনার বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন, কিন্তু আপনার এখনো ডিউটি করতে হবে। যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিফটের কাজ করে তাদের দেহঘড়িটি অনেক সময় এলোমেলো হয়ে যায়। এই দশাটিকে বলা হয় ‘সোশাল জেট লেগ’ বা সামাজিক পরিস্থিতির কারণে তৈরি হওয়া শারীরিক বিড়ম্বনা। ক্লান্ত টিনেজারদের সকালে কিছুক্ষণ বেশি ঘুমোতে দিন : ক্লান্ত টিনেজারদের সকালে কিছুক্ষণ বেশি সময় ঘুমোতে দিন। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের শরীরের ভেতর হরমোনের একটা বন্যা বয়ে যায়। এর ফলে, এই বয়সীদের দেহঘড়ি ঘণ্টা দু’য়েক পেছানো থাকে। তাই অতি সাত সকালে তাদের ঘুম থেকে ডেকে না তুলে আরও কিছু সময় ঘুমাতে দেয়া দরকার। অবশ্য বয়স হলে পরে আবার এই দেহঘড়ি পাল্টে যায়। বয়ঃসন্ধিকালের আগে যেমন ছিল বয়সকালে শরীর আবার সেই অবস্থায় ফিরে যায়।