মুখগহŸরের ক্যান্সার প্রতিরোধে

উন্নত বিশ্বে মুখগহŸর ক্যান্সার মাত্র ২/৩ শতাংশ। আমাদের দেশে ২৫-৩০ শতাংশ হলো মুখের ক্যান্সার। পুরুষদের মাঝে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হলেও মহিলা রোগীর সংখ্যাও প্রচুর। দেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর মাঝে মুখগহŸর ক্যান্সার হচ্ছে তৃতীয়...

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক
শরীরের অন্যান্য অংশের মতো মুখেও ক্যান্সার হয়ে থাকে। মুখগহŸরের যে কোনো জায়গা বা জিহŸায় অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি হচ্ছে মুখগহŸর ক্যান্সার । শরীরের অন্যান্য অংশের মতো মুখে ক্যান্সার হতে পারে। মুখের ক্যান্সার সাধারণত ঠেঁাট, জিহŸা, গাল, জিহŸার নিচে, তালু প্রভৃতিতে হতে পারে। উন্নত বিশ্বে মুখগহŸর ক্যান্সার মাত্র ২/৩ শতাংশ। আর আমাদের দেশে সব ক্যান্সারের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ হলো মুখের ক্যান্সার। পুরুষদের মাঝে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হলেও মহিলা রোগীর সংখ্যাও প্রচুর। দেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর মাঝে মুখগহŸর ক্যান্সার হচ্ছে তৃতীয়। আমেরিকায় প্রতিবছর ৩৪ হাজার জন ওরাল বা মুখগহŸর ও ঠেঁাটের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার জন মারা যায়। আমাদের দেশে ছেলেদের যত ক্যান্সার হয় তার মধ্যে দ্বিতীয় ও মেয়েদের তৃতীয় স্থানে আছে এটি। ধীরে ধীরে এ ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। শুরুতে এ ক্যান্সার নিণর্য় করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু অজ্ঞতা, রোগকে পাত্তা না দেয়ার কারণে যখন এ ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন কিছুই করার থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৭৫ ভাগই এমন অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে আসে, যখন ক্যান্সার সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে। এমনটিই ঘটেছে আমাদের পপগুরু আজম খানের ক্ষেত্রে। দেশে এ রোগ নিণর্য় হওয়ার পর গত বছরের ১৪ জুলাই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান। মুখগহŸরে সফল চিকিৎসার পর তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। আগে কথা বলতে, খেতে কষ্ট হলেও সমস্যা থেকে মুক্তি পান। এমনকি তিনি ‘ইত্যাদি’র জন্য গানও করেন। কিন্তু তিনি চিকিৎসা অসম্পূণর্ রেখে হোমিও ওষুধ সেবন করতে থাকেন। এতে তার সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে। ধূমপান, মদপান, জদার্, পান-সুপারি, খয়ের, সাদাপাতা, হুকা, সিসা এ ঘাতক ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ওরাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া প্রতি চারজনে তিনজনের মূল কারণ ধূমপান। যারা যত বেশি দিন ও পরিমাণে ধূমপান করে তাদের এ ক্যান্সার হওয়ার হার তত বাড়ে। মদপান করলে ঝঁুকি আরও বেড়ে যায়। দীঘর্ক্ষণ ধরে রোদে থাকলে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি এ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাফিলোমা ভাইরাসও এ ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত। শুরুতে এ ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির মুখগহŸরে যেমনÑ জিহŸা, মাড়ি, তালু বা ঠেঁাটে-সাদা বা লালচে প্রলেপ বা প্যঁাচ পড়ে। এটি ঘষলে ওঠে না। মুখগহŸরে ক্ষত বা আলসার দেখা দেয়। মুখে অনেকের প্রায়ই সাদা প্রলেপসহ ক্ষত হতে দেখা যায়। এ সময় খেতে কষ্ট হয়। ক্ষত সাতদিনের মধ্যে এমনি ভালো হয়ে যায়। একে আবার ক্যান্সার ভেবে ভুল করবেন না। মুখের কোনো কোনো ক্ষত যদি দিনের পর দিন না সারে তবেই তা ক্যান্সার হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখগহŸরে মোটা মাংসপিÐ হতে পারে। পরবতীর্ সময়ে ক্ষত ও মাংসপিÐ বড় হতে পারে। মাড়ি ফুলে গেলে যারা আলাদা দঁাত লাগান তাদের আলগা দঁাত ঠিকমতো লাগে না। জিহŸা ও চোয়াল নাড়াতে কষ্ট হয়। খাবার গিলতে ও চিবোতে কষ্ট হয়। ওজন কমে যেতে থাকে। ক্ষতস্থান থেকে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করে ক্যান্সার কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ছাড়া রোগের অগ্রগতি সম্পকের্ জানা যায়। অগ্রগতি সম্পকের্ জানার জন্য এন্ডোসকপি, এক্স-রে, এমআরআই, সিটিস্ক্যানের প্রয়োজন হতে পারে। এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে তা নিভর্র করে ক্যান্সার কোন স্টেজে আছে। সাধারণত সাজাির্রর মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ ফেলে দিয়ে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। শুরুতে এ ক্যান্সার নিণর্য় করে সঠিকভাবে নিণর্য় করতে পারলে ক্যান্সার জয় করা সম্ভব। ৮০-৯০ শতাংশ পুরোপুরি সুস্থ হয়। কিন্তু দেরি হয়ে গেলে এ সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে থাকে। এরপরও গবেষণায় দেখা গেছে, দেরিতে রোগ নিণর্য় হওয়ার পরও যারা চিকিৎসকের পরামশর্মতো কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি নিয়েছেন তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ বছর বেঁচে থাকার হার শতকরা ৬০ ভাগ। এটাও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। আমাদের পপগুরু সঠিকভাবে কেমোথেরাপি ও টমোওথেরাপি সম্পন্ন করলে আমাদের মধ্যে তাকে আরো বেশিদিন পেতাম হয়তো বা। এ রোগ প্রতিরোধে ধূমপান বাদ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, এ রোগ নিণর্য় করার পরও যদি ধূমপান ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে রেডিওথেরাপি ভালো কাজ করে। বেশি রোদে গেলে ছাতা বা হ্যাট বা স্কাফর্ ব্যবহার করুন। ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সীরা প্রতি তিন বছরে একবার এবং ৪০ বছর বয়সীরা প্রতিবছর একবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।