হঁাটুর স্পোটর্স ইনজুরি ও করণীয়

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক
বাস্তব সত্য যে, জীবনের কোনো না কোনো সময় শৌখিন বা পেশাগত খেলোয়াড় হঁাটু ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়। হঁাটু এমন একটি জটিল এবং গুরুত্বপূণর্ জোড়া যা খেলতে, বসতে, দঁাড়াতে, হঁাটতে, দৌড়াতে, উপরে উঠতে এবং নামতে একান্ত প্রয়োজন। শরীরের বড় ও ওজন বহনকারী জোড়াগুলোর মধ্যে হঁাটু অন্যতম। হঁাটু জোড়া তিন হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হঁাটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট ও দুইটি মেনিসকাস (তরুণাস্থি) থাকে। লিগামেন্ট হলো ইলাসটিক টিস্যু যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে, জোড়ায় শক্তি প্রদান করে, হাড়ের নড়াচড়ায় অংশগ্রহণ করে এবং জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। মেনিসকাস শরীরের ওজন সমভাবে উরুর হাড় থেকে পায়ের হাড়ে সরবরাহ করে, হাড়ের প্রয়োজনীয় নড়াচড়ায় সহায়তা করে এবং জোড়ার দৃঢ় অবস্থা বজায় রাখে। ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি ও হাডুডু খোলোয়াড়দের হঁাটুতে স্পোটর্স ইনজুরি হয়। এ ধরনের অধিকাংশ স্পোটর্স ইনজুরি মচকানো (টুইসটিং) প্রকৃতির। মচকানো আঘাতে হঁাটুর লিগামেন্ট ও মেনিসকাস ইনজুরি হয়ে থাকে। স্পোটর্স ইনজুরিতে লিগামেন্ট বিস্তৃত হতে পারে এবং আংশিক বা সম্পূণর্ ছিঁড়ে যেতে পারে। হঁাটুর মচকানোর জন্য মেনিসকাসের বিভিন্ন ধরনের ইনজুরি ছাড়াও মেনিসকাস আংশিক বা সম্পূণর্ টিয়ার হতে পারে। ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি খেলোয়াড়দের মাঝে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট ও মিডিয়াম কোল্যাটারাল লিগামেন্ট ইনজুরি বেশি হয়। ৭০ ভাগ ব্যক্তির এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরির সঙ্গে মেনিসকাস ইনজুরি থাকে। এ ছাড়াও জোড়ার হাড় (টিবিয়াল স্পাইন) ফ্র্যাকচার হতে পারে। স্পোটর্স ইনজুরির লক্ষণসমূহ ১. আক্রান্ত ব্যক্তি আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবে। ২. প্রথমে তীব্র ব্যথা পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে। এ ব্যথা হঁাটুর বাহির পাশ্বের্ এবং পেছনে অনুভ‚ত হবে। হঁাটু ভঁাজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়। ৩. আঘাতের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে হঁাটু ফুলে যায়। প্রথম না ফুললে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পরও হঁাটু ফুলতে পারে। ৪. পড়ে গেলে, দঁাড়াতে বা হঁাটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হঁাটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে। ৫. ফোলা ও ব্যথার জন্য হঁাটু নড়াচড়া করা যায় না। ৬. হঁাটু সোজা করতে কষ্ট হয়। ৭. অনেক সময় হঁাটু আটকিয়ে যায়, বেশিক্ষণ বসলে রোগী হঁাটু নড়াচড়া করিয়ে সোজা করে। ৮. উঁচু নিচু জায়গায় হঁাটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়। ৯. হঁাটু অস্থিতিশীল বা ছুটে বা ঘুরে যাচ্ছে, এ রকম মনে হবে। ১০. দীঘির্দন ধরে লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হঁাটুর পেশি শুকিয়ে যায় এবং হঁাটুতে শক্তি কমে যায়। ১১. সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে মাঝে মধ্যে হঁাটু ফুলে, হাড় ও তরুণাস্থি ক্ষয় হয় এবং অল্প বয়সে ওসটিও আথর্্রাইটিস হয়। প্রাথমিক করণীয় ১. হঁাটুকে পূণর্ বিশ্রামে রাখতে হবে। ২. বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠাÐা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফোলা কমে আসবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টার পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে এটা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এ পদ্ধতি আঘাতের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পযর্ন্ত চলবে। ৩. হঁাটুতে ইলাসটো কমপ্রেশন বা সিপ্লন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে। ৪. হঁাটুর নিচে বালিশ দিয়ে হঁাটুকে হাটের্র লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফোলা কম হবে। ৫. এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন। ৬. হঁাটুর লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম এমন চিকিৎসকের কাছে বা সেন্টারে রোগীকে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা নিরাময় প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফোলা সেরে ওঠার পর, হঁাটুর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে কী কী লিগামেন্ট ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নিণর্য় করা যায়। কখনো কখনো এক্স-রে ও এমআরআইএর সাহায্য নিতে হয়। হঁাটুর লিগামেন্ট বিস্তৃত (স্ট্রেস) ইনজুরি ও মেনিসকাসের ক্ষুদ্র ইনজুরি হলে প্রাথমিক চিকিৎসায় ভালো হয়। তবে কিছু কিছু আংশিক টিয়ারের ক্ষেত্রে হঁাটুর পেশির ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজকমর্ পরিবতের্নর মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। বতর্মানে হঁাটুর বাইরে থেকে টেনডন নিয়ে ছোট দুইটি ছিদ্র দিয়ে অথের্্রাস্কোপ যন্ত্র হঁাটুতে প্রবেশ করিয়ে নতুন লিগামেন্ট তৈরি করা হয়। বড় ধরনের মেনিসকাস ইনজুরি হলে রিপেয়ার করা হয়। অথের্্রাস্কোপিক সাজাির্রর পর নিয়মিত ও পরিমিত পরিচযার্র (রিহেবিলিটেশন) মাধ্যমে রোগী দ্রæত স্স্থু হয়ে উঠবে এবং খেলায় ফিরে যেতে পারবে।