শীতকালীন রোগ ও তার প্রতিকার

শীতের সময়টা অনেক মানুষকে প্রায়ই চরমভাবে ভোগায়। এ সময়টাতে নানা অসুখ-বিসুখ মানুষকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়। যেমন সদির্-কাশি-হঁাচি ও নিঃশ্বাসে কষ্ট। এ সময় কারও ঠাÐাজনিত সমস্যা হলে তা সহজে না সারার প্রবণতাসহ বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে....

প্রকাশ | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
শীতকাল কিন্তু এসে গেছে। যদিও বাংলা পঞ্জিকার হিসাব মতে পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই শীতের একটা আমেজ সবাই কমবেশি উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। এই যে হঠাৎ আবহাওয়া ও জলবায়ুর এ পরিবতর্ন তাতে কিন্তু অনেকেই সহজে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন না। আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই পরিবতের্নর এ সময়টাতে অনেকেই নানা অসুখে ভুগতে শুরু করেন। শীতের এই আসন্ন সময়টা অনেক মানুষকে প্রায়ই চরমভাবে ভোগায়। এ সময়টাতে নানা অসুখ-বিসুখ মানুষকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়। যেমন সদির্-কাশি-হঁাচি ও নিঃশ্বাসে কষ্ট। এ সময় কারও ঠাÐাজনিত সমস্যা হলে তা সহজে না সারার প্রবণতাসহ বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঋতু পরিবতের্নর সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়ানোর সময়ে বিভিন্ন শীতকালীন অসুখ আমাদের শরীরে আক্রমণের সুযোগ নেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভৌগোলিক কারণে আবহাওয়া ও পরিবেশেরও পরিবতর্ন হয়ে থাকে। কারও কারও অ্যালাজির্ সমস্যা এ সময়ে বাড়ে। এমনটা ঘটেÑ কারণ আমাদের শরীর কোনো পারিপাশ্বির্ক পরিবতের্নর জন্য সময় নেয়। তাই হঠাৎ এই তাপমাত্রা বা আবহাওয়ার পরিবতর্ন মানুষকে নানা অসুখে ভোগানোর জন্য দায়ী। কিন্তু কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে সহজেই এগুলোকে দূরে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তেমন কিছু রোগ সম্পকের্ জেনে রাখুন- ভাইরাস জ্বর আবহাওয়া পরিবতের্নর সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস জ্বরের অবিভার্ব বেশ পরিচিত একটা সমস্যা। শীতকালেও আমরা এই সমস্যায় ভুগি। শীতকালে ভাইরাস জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। বিভিন্ন ভাইরাস যেমন- অ্যাডিনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি মূলত ভাইরাস জ্বরের জন্য দায়ী। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও যাদের শরীরে অন্য রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস আছে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পযার্প্ত বিশ্রাম, প্রচুর তরল জাতীয় খাবার, বিশেষত খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবু-চিনির শরবত এ সময়টায় বেশ উপকারী। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে ঠাÐা পানীয় ও আইসক্রিম সম্পূণর্ নিষেধ। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। যাদের ক্রনিক ডিজিস আছে তাদের ভ্যাকসিন দেয়া যেতে পারে। ছয় মাস বয়সের পর শিশুকেও ভ্যাকসিন দেয়া যেতে পারে। অ্যালাজির্ ও অ্যাজমা শীতকালের বেশ পরিচিত সমস্যা হচ্ছে অ্যালাজির্ ও অ্যাজমা। শীতকালে অ্যালাজির্ ও অ্যাজমা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। অ্যালাজির্ ও অ্যাজমা রোগ দুটি অনেক ক্ষেত্রে একসঙ্গে হয়, যদিও কোনোটির প্রকাশ আগে হতে পারে। বারবার সদির্-হঁাচি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বুকে চাপ সৃষ্টি করে ও আওয়াজ হয়। এ সময় ঠাÐা লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়। যেসব কারণে অ্যালাজির্ হয় সেসব থেকে দূরে থাকা জরুরি। প্রয়োজনে অ্যালাজির্র ওষুধ, নাকের স্প্রে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ইনহেলারও ব্যবহার করতে হতে পারে। শীতের সময় অনেকে আবার সাইনোসাইটিসের সমস্যায় ভোগেন। সাইনোসাইটিসের লক্ষণ হতে পারে বারবার মাথা ধরা, সদির্-কাশির প্রবণতা, কাশতে কাশতে বমি হওয়া, জ্বর ইত্যাদি। কোনো কিছুতে অ্যালাজির্ থাকলে সেদিকে নজর দিতে হবে। অ্যালাজির্ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিকস খাওয়াও জরুরি। তবে তা যেন অতিরিক্ত পযাের্য়র না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ফুসফুসের সংক্রমণ শীতের সময় অনেকে আবার ফুসফুসের সংক্রমণের সমস্যায় ভোগেন। ফুসফুসের সংক্রমণকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক সংক্রমণ যা সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। আর লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক সংক্রমণ যা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। তবে ভাইরাল নিউমোনিয়াও হতে পারে। জ্বর, কাশি, কফ, শরীর ব্যথা ও বমি বমি ভাব হলো ফুসফুস সংক্রমণের লক্ষণ। তবে ভাইরাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে সদির্-হঁাচি, নাক দিয়ে পানি পড়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে। সাধারণত শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এগুলো বেশি দেখা যায়। শীতে এসব রোগের হাত থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আসুন জেনে নেয়া যাক প্রয়োজনীয় টিপসগুলো * শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রতিদিন উষ্ণ গরম পানি বা যে কোনো গরম পানীয় যেমন- চা, কফি, স্যুপ, দুধ খাওয়া ভালো। তাতে শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ও বাইরের ঠাÐা বাতাস কম ক্ষতি করে। * বেশি শীতে শুধু একটা ভারী কাপড় না পরে, একাধিক পোশাক পরিধান করুন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী হলো হালকা কোনো কাপড়Ñ যা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে এমন কিছু নিচে পরা, তার ওপরে কয়েক লেয়ারে ফুল হাতা অন্যান্য জামা-কাপড় পরা। এটা বেশি ঠাÐায় সবচেয়ে কাযর্করী। * প্রতিদিন কিছু পরিমাণ কালিজিরা রান্না করে বা রান্না ছাড়া খেতে পারেন। কালিজিরা প্রায় ৩০০ রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। * শীতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি ঠাÐা লাগার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। * প্রতিদিন খাবারে রসুন ব্যবহার করুন। কারণ কঁাচা রসুন ঠাÐা লাগা কমায়। * ঠাÐা লাগলে বা কাশি হলে আদা ও লবঙ্গ অত্যন্ত কাযর্করী। আদা ও লবঙ্গের রস ঠাÐা কাশি কমাতে সহায়ক। আদা ও লবঙ্গ দিয়ে চা খুবই কাযর্কর। * শীতের সকালে-বিকালে নাক বন্ধ মনে হলে নাকে গরম পানির ভাপ নিলে ভালো বোধ হয়। উপকার বেশি পেতে হলে গরম পানিতে কিছু ফিটকিরির টুকরা দিয়ে গরম ভাপ নিলে নাক বন্ধ হওয়া কমে যায়। * সরিষার তেল শরীর গরম রাখে যা ঠাÐা লাগার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। * শীতে পানি খাওয়া কম হয়। যে কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সেই জন্য পানি জাতীয় গরম খাবার বেশি খেতে হয়। * শীতকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা বেশি প্রয়োজন। শীতে ধুলাবালি বেশি থাকায় তাতে রোগ-জীবাণু বেশি থাকে এবং সে কারণে অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে যত ঠাÐাই পড়ুক না কেন এই শীতে আপনিও সুস্থ থাকতে পারবেন।