উচ্চ রক্তচাপ নীরব ঘাতক

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রক্তচাপ কি? রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিতে যে চাপ দেয় তাকেই রক্তচাপ বলে। উচ্চ রক্তচাপ কি? রক্তচাপ ধমনি, শিরা তথা রক্তনালির আকারের ওপর নিভর্র করে। আর রক্তনালি সংকীণর্তর হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে একই পরিমাণ রক্ত সরবরাহের জন্য হৃদযন্ত্রকে অপেক্ষাকৃত বেশি কাজ করতে হয়। এরকম অবস্থায় হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ দিয়ে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে হয়। আর এ বেশি চাপ দেয়ার অবস্থাকেই উচ্চ রক্তচাপ বলে। উচ্চ রক্তচাপ কি কি কারণে হতে পারে? ৩০-৫০ বছর বয়সে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা ও প্রকটতা নারীদের চেয়ে বেশি। গভর্কালীন ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণকালে নারীদের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যাদের ওজন উচ্চতার তুলনায় বেশি, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। পরিবারের কোনো আত্মীয়ের (যেমন : বাবা-মা) উচ্চ রক্তচাপ থাকলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরে কি কি ক্ষতি করতে পারে? উচ্চ রক্তচাপ জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। দীঘের্ময়াদি অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতি করে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে যেসব সমস্যা হয় তা হলো ১. স্ট্রোক ( মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া), ২. হাটর্ অ্যাটাক ৩. হাটর্ ফেইলর ৪. কিডনি ফেইলর ৫. চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ৬. রক্তনালি শক্ত হয়ে যাওয়া ৭. রক্তনালিতে বøক হওয়া ৮. যৌন কাজে অক্ষমতা। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের সম্পকর্ কি? উচ্চ রক্তচাপ দীঘের্ময়াদি অনিয়ন্ত্রিত থাকলে হৃদযন্ত্রের করোনারি ধমনিতে চবির্র আস্তর জমে বøকেজ হতে পারে, ফলে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশিতে রক্ত সরবরাহ কম হলে মাংসপেশিতে অক্সিজেন ও খাবার ঘাটতি দেখা দেয়, এতে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও হৃদযন্ত্রের কাযর্ক্ষমতা কমে যায়। ফলে এনজাইনা বা বুকে ব্যথা এমনকি হাটর্ ফেইলর পযর্ন্ত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কি কি? অধিকাংশ ক্ষেত্রে অথার্ৎ ৫০ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ বা রোগীর কোনো কষ্ট নাও থাকতে পারে কিন্তু দীঘের্ময়াদি রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এজন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে পরামশের্র জন্য গেলে রক্তচাপ মাপলে উচ্চ রক্তচাপ রোগ ধরা পড়ে। উচ্চ রক্তচাপ হলে যে যে লক্ষণগুলো হতে পারে সেগুলো হলো মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঝিমঝিম ভাব, ঘুম কম হওয়া, শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি। উচ্চ রক্তচাপে কি কি ধরনের হৃদরোগ হয়? উচ্চ রক্তচাপ দীঘের্ময়াদি অনিয়ন্ত্রণ থাকলে হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে চবির্র আস্তর জমে বøক হতে পারে ফলে এনজাইনা বা বুকে ব্যথা এমনকি হাটর্ ফেইলর পযর্ন্ত হতে পারে। তাছাড়া হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি মোটা হতে পারে যাকে হাইপারটেনসিভ হাটর্ ডিজিজ বলে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার কি কি পরিবতর্ন করতে হয়? উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা যেমন ওজন কমিয়ে আদশর্ ওজন বজায় রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার বা ড্যাশ ডায়েট অবলম্বন করা, খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনা, অধিক পটাসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা ও মদ্যপান পরিহার করলে ওষুধ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রক্তচাপ কমানো সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। নিদির্ষ্ট সময় পর পর আপনার চিকিৎসকের পরামশর্ নিতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রক্তচাপ কীভাবে মাপতে হবে? রক্তচাপ কয়েকবার মাপতে হবে। সকালে ওষুধ খাবার পূবের্ ও রাতে খাবার খাওয়ার আগে ১ মিনিট পর পর অন্তত ২ বার করে রক্তচাপ মাপতে হবে। রক্তচাপ প্রতিদিন মাপতে হবে ও লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোনো নতুন ওষুধ যোগ করার বা ওষুধের মাত্রা বা পরিমাণ কমানোর ২ সপ্তাহ পযর্ন্ত প্রতিদিন ও ২ সপ্তাহ পর সপ্তাহে ১ দিন রক্তচাপ মাপা নিয়ম। ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ১ সপ্তাহ প্রতিদিন রক্তচাপ মাপতে হবে ও লিপিবদ্ধ করতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মেশিনের মেমোরিতে সংরক্ষিত রক্তচাপের মানের ফলাফল বা আলাদা কাগজে লিপিবদ্ধ রক্তচাপ মাপার মান রোগীর সঙ্গে আনতে হবে। প্রফেসর (ডা.) মো. তৌফিকুর রহমান (ফারুক) এমবিবিএস (ডিএমসি), এমডি (কাডির্ওলোজি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এফএসিসি (আমেরিকা), এফএসিপি, এফএএসই, এফআরসিপি, এফসিসিপি, এফইএসসি, এফএএইচএ, এফএপিএসআইসি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান- কাডির্ওলোজি, মেডিনোভা মেডিকেল সাভিের্সস মালিবাগ মোড়, ঢাকা