বারবার মিসক্যারেজের জন্য পুরুষও দায়ী

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
একটি প্রেগন্যান্সি মানে একটি স্বপ্ন, অনাগত সন্তানের জন্য কত কি পরিকল্পনা। কিন্তু তা হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায় প্রেগন্যান্সি নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। যা গভর্পাত বা মিসক্যারেজ হিসেবে পরিচিত। চিকিৎসকরা সাধারণত গভর্পাতের কারণ শনাক্ত করতে নারীদের স্বাস্থ্য পযের্বক্ষণ করে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গভর্পাতের পেছনে পুরুষের স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা পালন করে। বিজ্ঞানীদের মতে, নিম্নমানের শুক্রাণু নারীদের বারবার গভর্পাতের জন্য দায়ী হতে পারে। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, তিন বা ততোধিক গভর্পাত হয়েছে এমন নারীদের স্বামীদের শুক্রাণুতে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ থাকার প্রবণতা বেশি। বিশেষজ্ঞর মতে, এটি হতে পারে প্রেগন্যান্সি ব্যথর্ করার প্ররোচক। এ আবিষ্কার সম্পকের্ নিশ্চিত হতে এবং নতুন উবর্রতা চিকিৎসা উদ্ভাবন করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। গবেষকরা এখন বলছেন যে পুরুষদের শুক্রাণু কেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা খুঁজে বের করাও গুরুত্বপূণর্। তারা ধারণা করছেন যে, অতীতের ইনফেকশন বা এসটিআই, স্থূলতা অথবা বয়স বেড়ে যাওয়া ডিএনএ-ড্যামেজিং মলিকিউলের উচ্চ মাত্রা প্ররোচিত করতে পারে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এই গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেসব নারী বারবার গভর্পাত হয়েছে তাদের স্বামীদের ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ থাকার সম্ভাবনা গড় পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ এবং তাদের অক্সিজেন রিয়্যাক্টিভ সেপসিজের উচ্চ মাত্রা চারগুণ বেশি (অক্সিজেন রিয়্যাক্টিভ সেপসিজ হচ্ছে কমন কিন্তু শক্তিশালী মলিকিউল- গবেষকরা ধারণা করছেন যে এরা ডিএনএর ক্ষতি করতে পারে)। প্রধান গবেষক ডা. চান্না জয়সেনা বলেন, ‘সাধারণত বারবার গভর্পাতের কারণ নিণের্য় চিকিৎসকরা নারীদের ওপর মনোযোগ ফোকাস করেন। পুরুষদের স্বাস্থ্য ও তাদের শুক্রাণুর স্বাস্থ্য তেমন একটা বিশ্লেষণ করা হয় না। কিন্তু এ গবেষণার প্রমাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, শুক্রাণুর স্বাস্থ্যও প্রেগন্যান্সির স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আগের গবেষণা সাজেস্ট করছে যে গভের্র ফুল গঠনে শুক্রাণু গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা পালন করে, যা ভ্রƒণের জন্য অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গভর্পাতকে বিরল মিসটেক ভাবলে ভুল হবে, কারণ এটি সফল প্রেগন্যান্সির তুলনায় বেশি কমন- অনেক গভর্পাত এত তাড়াতাড়ি হয় যে লক্ষ্য করা যায় না। এ গবেষণার লেখক/বিজ্ঞানীদের মতে, এর কারণ হচ্ছে ডিম্বাণুর মারাত্মক জেনেটিক অস্বাভাবিকতা যা ডিম্বাণুকে শিশুতে বিকশিত হতে দেয় না। সন্তানের আশা করেন এমন যে কোনো দম্পতিকে গভর্পাত খুব হতাশ করতে পারে, কিন্তু এমনকি বয়স ২০-এর দশকে আছে এমন নারীদেরও নিষিক্ত ডিম্বাণু হতে বাচ্চা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০, দাবি করেন ইউনিভাসিির্ট অব ক্যালিফোনির্য়ার গবেষকরা। নারীদের বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গভর্পাতের হারও বেড়ে যায়- যেসব নারীর বয়স ৪০ দশকের ঘরে তাদের একটি বিকশিত ভ্রƒণের বিপরীতে গভর্পাতের গড় সংখ্যা ৩০ এরও বেশি। সাধারণ বা স্বাভাবিক গভর্পাতের বিষয়ে দম্পতিদের জ্ঞান আহরণ করা উচিত যাতে তারা সচেতন হতে পারেন। সাধারণত নারীদের ইনফেকশন অথবা ইমিউন সমস্যাকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু ইম্পেরিয়ালের ছোট গবেষণায় ১১০ জন পুরুষ স্বেচ্ছাকমীের্দর মধ্যে যাদের স্ত্রীদের গভর্পাত হয়েছে এবং যাদের স্ত্রীদের গভর্পাত হয়নি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাথর্ক্য পাওয়া গেছে। গবেষকরা স্ত্রীদের বারবার গভর্পাত হয়েছে এমন ৫০ জন পুরুষ স্বেচ্ছাকমীের্দর শুক্রাণুকে অন্য ৬০ জন পুরুষের (তাদের স্ত্রীদের পুনরাবৃত্তিমূলক গভর্পাত হয়নি) শুক্রাণুর সঙ্গে তুলনা করেন। অক্সিজেন রিয়্যাক্টিভ সেপসিজ (যা বারবার গভর্পাত হয়েছে এমন নারীদের স্বামীদের বেশি থাকে) শুক্রাণুকে ব্যাকটেরিয়া ও ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে, কিন্তু এরা উচ্চ ঘনত্বের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। গবেষকরা নিণর্য় করতে চেষ্টা করছেন যে, কোনো কোনো বিষয় মলিকিউলের মাত্রাকে প্রভাবিত করে এবং তারা ধারণা করছেন যে এসটিআই বা যৌন সংক্রমিত ইনফেকশনের ইতিহাস, স্থূলতা বা বয়স এসব মলিকিউলের মাত্রাকে অ্যাফেক্ট করতে পারে। ডা. জয়সেনা বলেন, ‘যদিও এই ট্রায়ালের কোনো পুরুষের তখন কোনো ইনফেকশন (যেমন- ক্ল্যামিডিয়া) ছিল না যার ওপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম যে এটি শুক্রাণুর স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, কিন্তু আগের ইনফেকশনের কোনো ব্যাকটেরিয়া প্রোস্টেট গ্রন্থিতে (যা বীযর্ তৈরি করে) থাকলে এমনটা হতে পারে। এটি স্থায়ীভাবে রিয়্যাক্টিভ অক্সিজেন সেপসিজের উচ্চমাত্রার কারণ হতে পারে।’ তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, এসব মলিকিউল বৃদ্ধিতে শরীরের উচ্চমাত্রার চবির্রও ভ‚মিকা থাকতে পারে এবং গবেষকরা পেয়েছে যে মিসক্যারেজ গ্রæপের পুরুষদের মধ্যে চবির্ বেশি ছিল। তিনি যোগ করেন, ‘যদিও এটি একটি ছোট গবেষণা, কিন্তু এটি আমাদের অনুসরণ করার মতো ক্লু দিয়েছে। যদি আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে বীযের্ উচ্চমাত্রার রিয়্যাক্টিভ অক্সিজেন সেপসিজ গভর্পাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, তাহলে আমরা এসবের মাত্রা কমাতে এবং সুস্থ প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা বাড়াতে চিকিৎসা ডেভেলপের জন্য চেষ্টা করতে পারব। এখন আমরা বুঝতে পারছি যে বারবার গভর্পাতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ভ‚মিকা থাকতে পারে। আমরা হয়তো এ সমস্যার আরও পরিষ্কার চিত্র পাব এবং আরও বেশি সুস্থ বাচ্চা বিকশিত করতে ব্যবস্থা নিতে পারব।’