গরমে কী খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে?

প্রচন্ড গরমে এমনিতেই শরীরে প্রচুর তাপ উৎপাদন হয়, খাবার থেকে যে বিপাকজনিত তাপ উৎপন্ন হওয়ার কথা, তার প্রয়োজন আর অনুভূত হয় না। শরীর তাপ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার জন্য খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। তা ছাড়া এ সময় আমরা প্রচুর পানি পান করি বলে ক্ষুধাও মরে যেতে থাকে। কিন্তু গরমের সঙ্গে লড়তে হলে দরকার প্রচুর শক্তি। না হলে সারা দিন পরিশ্রান্ত ও দুর্বল লাগবে।

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
খাবারে অনীহা, ঘুমে ব্যাঘাত আর সারাক্ষণ ক্লান্তি লাগা- এই তিনটা উপসর্গ গরমে খুব স্বাভাবিক। কেন খুব গরম পড়লে আমাদের খাওয়ার আগ্রহ বা ইচ্ছে কমে যায়? গবেষকরা বলেন, প্রচন্ড গরমে এমনিতেই শরীরে প্রচুর তাপ উৎপাদন হয়, খাবার থেকে যে বিপাকজনিত তাপ উৎপন্ন হওয়ার কথা, তার প্রয়োজন আর অনুভূত হয় না। শরীর তাপ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার জন্য খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। তা ছাড়া এ সময় আমরা প্রচুর পানি পান করি বলে ক্ষুধাও মরে যেতে থাকে। কিন্তু গরমের সঙ্গে লড়তে হলে দরকার প্রচুর শক্তি। না হলে সারা দিন পরিশ্রান্ত ও দুর্বল লাগবে। তাই জেনে নিন এই প্রচন্ড দাবদাহে নিজেকে সতেজ রাখতে কী খাবেন। পানি প্রথম কথা যা সবাই জানি, তা হলো পান করতে হবে প্রচুর, প্রচুর পানি। মনে রাখবেন এই গরমে, তাপমাত্রা যখন ৩৬-৪২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওঠানামা করছে, তখন শরীর প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই লিটার পানি হারাচ্ছে। পানিশূন্যতার জন্য সব সময় ঘাম হবে, তা নয়। ঘাম ছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রায় ত্বক এমনিতেই পানি হারাতে থাকে, যাকে বলে ইনসেনসিবল লস। এই পানি পূরণ করতে দিনে অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার বা ছয়-আট গস্নাস পানি পান করতে হবে। পানির অভাব পূরণ করতে পানিই সবচেয়ে উত্তম পানীয়। তবে এর বাইরে ফলের রস, জুস, ডাবের পানি, স্মুদি ইত্যাদিও পান করতে পারেন। তবে এর পরিমাণ দৈনিক ১৫০ মিলিলিটারের মধ্যে রাখা ভালো। কারণ, এগুলোতে আবার চিনি থাকে। কীভাবে বুঝবেন যথেষ্ট পানি পান করেছেন কি না? আপনার তৃষ্ণাবোধই তা জানান দেবে। পানির দরকার হলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের তৃষ্ণাকেন্দ্র সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আপনার পিপাসা পায়। এখন যারা বৃদ্ধ বা মস্তিষ্কের কোনো রোগ যেমন স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া, পারকিনসন্স ইত্যাদিতে ভুগছেন বা যাদের মানসিক রোগ আছে, তারা এই বিষয়টি না-ও টের পেতে পারেন। তাই এদের দিকে বিশেষ নজর দিন। এ ছাড়া আরেকটি উপায় হলো প্রস্রাবের রং ও পরিমাণ লক্ষ্য রাখা। বিশেষ করে শিশুদের এই দিকে সতর্ক নজর রাখুন। যদি দেখেন প্রস্রাবের রং গাঢ় বা প্রস্রাবের পরিমাণ কম, বুঝবেন সে পানিশূন্যতায় ভুগছেন। ফলমূল কিছু তাজা ফল পানিশূন্যতা দূর করতে ও শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। বলা হয়, আমাদের পানির চাহিদার ২০-৩০ শতাংশ পূরণ করে খাবার। এ গরমে এমন খাবার বেছে নিতে হবে, যাতে জলীয় অংশ বেশি। যেমন শসা। শসা যে শুধু পানিশূন্যতা দূর করে, তা-ই নয়, শরীরকে দ্রম্নত ঠান্ডাও করে। এই সময় শসা আস্ত কেটে, সালাদ করে বা জুস করে খেতে পারেন। তরমুজ, বাঙ্গিজাতীয় ফলের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি। এগুলো খেলে পানির সঙ্গে বাড়তি পাবেন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি- যা আপনাকে শক্তি জোগাবে। সবুজ তাজা শাকসবজিও গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে। যেমন পালংশাক, পুঁইশাক, লেটুস, পুদিনা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। এ সময় দুপুরে বা রাতের খাবারে সালাদ অবশ্যই রাখবেন। গরমে আমও খুব ভালো ফল। আম খেলে পানিশূন্যতা যেমন দূর হয় তেমনি এটি শক্তি ও ক্যালরি জোগায় শরীরে। লেবু শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। লেবু খাবারের সঙ্গে, লেবু পানি হিসেবে, লেমোনেড করে বা সালাদের মধ্যে দিয়ে খেতে পারেন। লেবুর ভিটামিন সি এই গরমে ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন দই, টক দই, দইয়ের তৈরি লাচ্ছি, মাঠা ইত্যাদি শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। পানিশূন্যতা পূরণ করার পাশাপাশি আমিষ ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। এ ছাড়া এগুলো অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়ায় এবং হজম করায়। গরমে শর্করা বা চর্বিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করে। এর চেয়ে লিন প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর আমিষ গ্রহণ করা ভালো। যেমন মাছ এ সময় উপাদেয়। মাছে আমিষ ছাড়াও আছে উপকারী ফ্যাটি এসিড- যা শক্তি জোগাবে। প্রচন্ড গরমে মাছের সঙ্গে নানা ধরনের সবজি যেমন লাউ, চালকুমড়া, কাঁচা কলা, পটোলের ঝোল দিয়ে রান্না করলে এর জলীয় অংশ বাড়বে, শরীর ঠান্ডা থাকবে। যত ঠান্ডা খাবেন, তত ভালো? গরমের দিনে বেড়ে যায় ঠান্ডা পানি, বরফ, আইসক্রিম, শীতল পানীয় খাবারের হিড়িক। আসলেই কি এসব ঠান্ডা শীতল খাবার বা পানীয় শরীর ঠান্ডা রাখে? আসলে এটি ভুল। তৎক্ষণাৎ একটা শীতল অনুভূতি আসে বটে কিন্তু এই শীতল পানীয় বা খাবারকে বিপাক করতে শরীরকে আরও বেশি বিপাকক্রিয়া করতে হয়, আরও বেশি তাপ উৎপন্ন হয়। ফলে পরে আরও পানিশূন্যতা হতে পারে। বরং স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাবার ও পানি এ সময় গ্রহণ করা ভালো। কী খাবেন না? গরমে অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার বেশি তাপ উৎপন্ন করবে, ঘাম ও গরম বাড়াবে। তাই খাবার যত হালকা বা পাতলা হয় তত ভালো। চা, কফি, অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় পানিশূন্যতা বাড়াবে। এর পরিমাণ সীমিত করা উচিত। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া খাবারও গরম বাড়াবে।