ওয়াক্স বা কানের খইল

কানের বহিঃকর্ণে নিয়মিতভাবে খসে পড়া মরা চামড়া, কানের ভেতরের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ঘাম একসঙ্গে মিলে তৈরি হয় ওয়াক্স বা খইল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই খইল নরম আঠালো পদার্থের মতো থাকে। আঠালো অবস্থায় এটি কান থেকে এমনিতেই বেরিয়ে যায়...

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
রাত তখন ১২টার কম হবে না। হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠল আপনার শিশু। একটি হাতে কান চেপে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল, কান ব্যথা। আপনি কী করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। কানে টর্চ লাইটের আলো ফেললেন। এতে কানের মধ্যে আপনি যা দেখলেন তা থেকে ব্যথা হওয়ার কারণ সম্পর্কে কোনো ধারণা পেলেন না। কিংবা কানের মধ্যে খয়েরি বা কালচে রঙের কিছু দেখতে পেলেন। ভাবলেন ময়লা জমেছে। তাই ব্যথা কমানোর জন্য কানে তেল দিলেন, কিন্তু ব্যথা কমল না। অগত্যা ব্যথা কমানোর ওষুধ প্যারাসিটামল দিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলেন। একসময় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল শিশু। সকালে যখন ঘুম থেকে উঠল তখন আর ব্যথা নেই। উলিস্নখিত এই দৃশ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণ হলো- ওয়াক্স বা কানের খইল। কানে খইল জমা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কানের বহিঃকর্ণে নিয়মিতভাবে খসে পড়া মরা চামড়া, কানের ভেতরের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ঘাম একসঙ্গে মিলে তৈরি হয় ওয়াক্স বা খইল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই খইল নরম আঠালো পদার্থের মতো থাকে। আঠালো অবস্থায় এটি কান থেকে এমনিতেই বেরিয়ে যায়। আমরা যখন চিবিয়ে খাই, কথা বলি- তখন আমাদের চোয়ালের যে নড়াচড়া হয় তাতেই এই খইল বহিঃকর্ণ থেকে বাইরের দিকে চলে আসে। এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে বহিঃকর্ণের নালিতে অবস্থিত লোম। এই লোম ঝাড়ুর মতো করে বাইরের দিকে ঝেড়ে কানের ময়লাকে বের করে দেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় কানের নরম আঠালো পরিষ্কার করার দরকার নেই, এটি কোনো সমস্যাও করে না। এই খইল অনেক সময় শক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যাদের ত্বক কম তৈলাক্ত তাদের কানের খইল শক্ত হতে পারে। মাথায় যাদের খুশকি থাকে তাদের কানেও প্রচুর খইল জমে। তবে খুশকির কারণে জমা খইলের সঙ্গে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জমা খইলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সামান্য কিংবা অতিরিক্ত শক্ত খইল কানে জমে কানে ব্যথা হয়। অনেক মা-বাবা আছেন যারা কানে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কটন বাড ব্যবহার করেন এবং ময়লা কান থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন। যারা এই কাজটি করছেন তারা ঠিক করছেন না। প্রকৃতপক্ষে কান পরিষ্কার করার দরকার নেই। প্রকৃতিগতভাবেই কান নিজে নিজে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। অধিকাংশের কানই নিজে থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। হঠাৎ কারো কারো কান পরিষ্কার করার দরকার পড়ে। আর যদি কান পরিষ্কার করার দরকার পড়ে তাহলে সেই কাজটি নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞকেই করতে দেয়া উচিত। তা না হলে সমস্যা হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কান পরিষ্কার করতে গিয়ে কানের ময়লা কিছুটা বের করে আনার সময় কিছু ময়লা ধাক্কা খেয়ে ভিতরে চলে যায়। এই ময়লাটুকু আর স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারে না। এভাবে বারবার কান পরিষ্কার করার কারণে একটু একটু করে ময়লা বাড়তে থাকে এবং তা কানের পথকে রুদ্ধ করে দিলে ব্যথার উদ্রেক করে। ফলে এই দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ ছাড়া কান পরিষ্কার করতে গিয়ে কানে খোঁচা খাওয়া কিংবা কানে যে কোনো ধরনের ইনজুরি এবং কানের মধ্যে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। কারো কারো কান খইল ভর্তি থাকে কিন্তু ব্যথা হয় না। এসব ক্ষেত্রে পানিতে ডুব দিয়ে গোসল করার কারণে যখন কানে পানি ঢুকে যায়, তখন সেই পানি শুষে নেয় খইল। ফলে খইল স্ফীত হয়ে বহিঃকর্ণের পথে চাপের সৃষ্টি করে এবং কানে ব্যথার উদ্রেক করে। তবে সব ক্ষেত্রেই একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ খুব সহজেই কান দেখে বুঝে নিতে পারেন কানের ভিতরকার অবস্থা। কানের ভিতরে ময়লা থাকলে তা বের করে দেয়ারও ব্যবস্থা করবেন তিনি। যদি ময়লা খুব শক্ত হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ময়লা বের করে আনা একটু কঠিন, এতে শিশু কিছুটা ব্যথা পেতে পারে। অনেক সময় শিশু ভয়েই অস্থির থাকে তখন শিশুর কান পরিষ্কার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে শিশুর কান পরিষ্কার করতে না গিয়ে কানে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ময়লাটি বের করে আনার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। সাধারণত ৭.৫% সোডিবাইকার্বের দ্রবণ দিয়ে কান পরিষ্কার করার কাজটি করা হয়। এই দ্রবণ কানের ময়লাকে গলিয়ে কান থেকে বের করে দেয়। এই ওষুধে কান পরিষ্কার হতে চার-পাঁচ দিন সময় লাগে। তবে কানে খইল আটকে যাওয়ার জন্য তীব্র ব্যথা হলে অনেক সময় রোগী অজ্ঞান করে কান পরিষ্কার করে দেয়ার দরকার পড়ে। কান পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর আর কখনো শিশুর কান পরিষ্কার করতে যাওয়া ঠিক হবে না। তাতে ঘটনার পুনরাবৃত্তিই ঘটবে। একবার কানের মধ্যে ওয়াক্স বা খইল হলে তা বারবার হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যাদের এমনটি হয় তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কানের মধ্যে ময়লা জমেছে সন্দেহ হলে নিয়মিতভাবে প্রতি কানে প্রতিবার চার-পাঁচ ফোঁটা করে অলিভ অয়েল দৈনিক তিন বার করে একটানা ১৫ দিন দিতে পারেন। এতে কান পরিষ্কার থাকবে। কানে খইল দীর্ঘ দিন থাকলে নানা রকম জটিলতা হতে পারে। তবে কানে ময়লা তথা খইল হয়েছে বলে সন্দেহ হলে কান পরিষ্কার করার চেষ্টা না করে কানের মধ্যে অলিভ অয়েল দেয়াটাই নিরাপদ।