সোরিয়াসিসের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
সোরিয়াসিস এক ধরনের চর্মরোগ। এতে চামড়ার ওপর শুকনো ক্ষত জন্মে, তার ওপর কখনো মামড়ি পড়ে। ওই মামড়ি কখনো আঁশের মতো ভুসির মতো খসে পড়ে। সবক্ষেত্রে চুলকানি থাকে না। হাত, পা, কনুই, হাঁটু, মাথার চুলের নিচে বা দেহের নানা স্থানে হতে পারে। হার্ট, লিভার, কিডনি প্রতিস্থাপন তো এখন বিশ্বব্যাপীই হচ্ছে। এত আশার মাঝেও দুরাশা ছড়াচ্ছে ত্বকের একটি রোগ, নাম সোরিয়াসিস। ডায়াবেটিসকে যেমন জীবনব্যাপী রোগ বলা হয়, তবে একে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়- সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে এই একই কথা প্রযোজ্য। তাই জটিল এই রোগকে নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়, অহেতুক ভীতিও নয় বরং দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন নির্বাহ করতে পারলে এর তীব্রতা কমে যায়। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে সোরিয়াসিস নির্মূল করা সম্ভব হয়। কিভাবে বুঝবেন সোরিয়াসিস এ রোগে চামড়া লাল হয়ে মাছের আঁশের মতো সাদা সাদা হয়ে উঠে যায়। মেডিকেলের ভাষায় একে সিলভারি স্কেল বলে। আমাদের দেহে কোষ চামড়ার নিচের স্তর থেকে উপরে আসতে ২৮ দিন সময় নেয়। কিন্তু সোরিয়াসিসের রোগীদের এ কোষ ৪-৫ দিনে উপরে উঠে আসে। ফলে কোষ পরিপূর্ণতা লাভ করে না এবং সিলভারি স্কেল তৈরি করে। সোরিয়াসিসের লিশন বা ক্ষতস্থানগুলো শুকনো, গোলাকৃতি বা এবড়োথেবড়ো হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ স্থানে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া থাকতে পারে। তবে কখনোই সোরিয়াসিসের রোগীর ত্বক থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় না। নখ দিয়ে চুলকালে ওই স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয় এবং সোরিয়াসিস বেড়ে যায়। এ রোগীদের কোথাও কেটে বা ছিলে গেলে ওই স্থানে সোরিয়াসিস হতে পারে। কারা কারা আক্রান্ত হয় পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড় নির্বিশেষে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। সাধারণত ২৭ বছরের পর থেকে এটি হতে দেখা যায়। যারা বেশি মানসিক চাপে থাকেন তাদের এ রোগ হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। কোথায় হয় সাধারণত হাতের কনুই, মাথা ও হাঁটু দিয়ে এ রোগ শুরু হয়। তবে পিঠের নিচের অংশ, বগল, কুঁচকি, চামড়ার ভাঁজেও হতে পারে। অনেকের নখ আক্রান্ত হয়। ফলে নখ মোটা ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মাথায় হলে স্কাল্পের চামড়া উঠে যায়, যা কপালেও বিস্তার লাভ করে। মনে হয় যেন খুশকি হয়েছে। কেন হয় সোরিয়াসিসের সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। তবে বংশগতভাবে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একে বলা হয়ে থাকে অটো-ইমিউন ডিজিজ অর্থাৎ আমাদের শরীরে কোনো রোগজীবাণু ঢুকলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবলে ওই জীবাণুকে শরীর আক্রমণ করে এবং এন্টিবডি তৈরি করে রোগ ঠেকায় কিন্তু সোরিয়াসিসের রোগীদের দেহে এ রোগের কারণকে চিহ্নিত করতে পারে না, ফলে রোগ ঠেকাতেও পারে না। কিছু কিছু পরিবেশে এটি হতে সাহায্য করে। একাধিক কারণ এ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া বা অন্য কোনো জীবাণু দিয়ে হয় না। সোরিয়াসিস কি শুধু ত্বককেই আক্রমণ করে হঁ্যা, এটি ত্বকের রোগ। তবে দেহের ছোটবড় জয়েন্টকেও আক্রমণ করতে পারে। তখন তাকে সোরিয়াসিস আর্থ্রোপ্যাথি বলে। এ অবস্থায় জয়েন্ট বিকৃত হয়ে নড়াচড়ায় অসুবিধা হয়। তবে এটি দেহের অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে কখনোই আক্রমণ বা ক্ষতিগ্রস্ত করে না। সোরিয়াসিস কি ছোঁয়াছে রোগ এটি ছোঁয়াছে নয়। এই রোগীর সঙ্গে পাশাপাশি জীবনযাপন করলেও সুস্থ ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। রোগীর থালা-বাসন, কাপড়-চোপড় থেকেও রোগ ছড়ায় না। এ রোগীরা শ্যাম্পু, তেল, সাবান ব্যবহার এবং প্রতিদিন গোসল করতে পারবেন। সোরিয়াসিসে কি করবেন না এ রোগীরা গরু ও খাসির মাংস খেতে পারবেন না। তবে স্বাভাবিক অন্যান্য খাবার খেতে পারবে। কিছু ওষুধ যেমন বিটা বকার (উচ্চ রক্তচাপ কমানো), লিথিয়াম (প্রশান্তিদায়ক), এন্টি ম্যালেরিয়াল, মুখে খাওয়ার স্টেরয়েড খেতে পারবে না। স্টেরয়েড খেলে প্রথম দিকে এ রোগ কমে যায়, তবে পরে এটি আবারও তীব্র হয়ে শরীরে ছড়ায়। চিকিৎসা সোরিয়াসিস নির্মূলের জন্য অ্যালোপ্যাথিতে কোনো চিকিৎসা আজও আবিষ্কৃত হয়নি। শুধু মাত্র হোমিওপ্যাথিতে এর চিকিৎসা আছে কারণ হোমিওপ্যাথি কোনো রোগের চিকিৎসা করে না এমন কথা নেই; রোগীর রোগের লক্ষণ বুঝে ওষুধ দিলে এ রোগ নির্মূল সম্ভব। সোরিয়াসিস এমনই একটি রোগ যা একবার কমে গিয়ে আবার ঘুরে-ফিরে আসে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হয়।