মন ভালো তো সব ভালো

মন ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কেউ বলছেন ভ্রমণ, খেলাধুলা ও কাজে ব্যস্ত থাকলে মন ভালো থাকে। আবার কেউ কেউ বলছেন দৈনন্দিন জীবনযাপনে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যার ছাপ মনের মধ্যে রয়ে যায়। আর তা দূর করা গেলে মন ভালো থাকে...

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
মন কেমন তা চোখে দেখা যায় না, হাত দিয়ে ধরা যায় না কিংবা ছোঁয়া যায় না। অথচ পুরো মানব দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে মন। আর তাই অনেকেই বলেন, 'মন ভালো তো সব ভালো।' এ মনকে ভালো রাখতে বিশ্বব্যাপী হচ্ছে, নানা গবেষণা। মন ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কেউ বলছেন ভ্রমণ, খেলাধুলা ও কাজে ব্যস্ত থাকলে মন ভালো থাকে। আবার কেউ কেউ বলছেন দৈনন্দিন জীবনযাপনে এমন অনেক কিছুই ঘটে যার ছাপ মনের মধ্যে রয়ে যায়। আর তা দূর করা গেলে মন ভালো থাকে। এ কাজটি করা যায় ধ্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততায় আমাদের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। সকালে ঘর থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের জরুরি কাজ করতে গিয়ে উদ্বিগ্নতা, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে। এতে মন অস্থির হয়ে ওঠে। মনের এ অবস্থার প্রভাব পড়ে দেহে। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক- দেহের ওপর মন কীভাবে প্রভাব ফেলে ও তার প্রতিকারের উপায়। সুস্বাস্থ্য দৈহিকভাবে মাংশল পেশি থাকলেই তাকে সুস্বাস্থ্য বলা যায় না। সুস্বাস্থ্য হচ্ছে কর্মক্ষমতা। অধিকসময় নিরলসভাবে কাজে লেগে থাকার মনোদৈহিক সামর্থ্য। ইতিবাচকভাবে যে কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতিকে অতিক্রম করার শক্তি। এর সবই সম্ভব যখন আপনি মনোদৈহিকভাবে সুস্থ থাকবেন। অসুখ কী? অনেককে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের অসুখে ভুগতে দেখা যায়। অসুখ হচ্ছে, (অ+সুখ) = অসুখ। মনে সুখের অভাব হলেই সেখানে নানা ধরনের অসুখের জন্ম হয়। আর তার বহির্প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন ধরনের রোগযন্ত্রণার মাধ্যমে। কেন দরকার মনের সুখ? শরীর সুস্থ থাকলে যেমনি শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষেত্রে ক্লান্তি স্পর্শ করতে পারে না। তেমনি মন সুস্থ থাকলে যে কোনো রোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। মন ও দেহের ভারসাম্য দেহ থেকে মনকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। দুটো নিয়েই আমাদের শরীর ও জীবন। আর তাই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দরকার মনোদৈহিক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা। মনের আবর্জনা দূর মন ও দেহের সুস্থতার জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু ব্যায়াম। আমরা দেহের সুস্থতার জন্য ব্যায়াম করি। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করি, জিমে যাই কিংবা ইয়োগা করি। কিন্তু মনের সুস্থতার বিষয়ে অধিকাংশই অসচেতন। মনের ভেতরকার জমে থাকা দুঃখ, কষ্ট, স্ট্রেস, হতাশা অবচেতনে শারীরিক সুস্থতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই এগুলোকে বলেন মনের আবর্জনা। আমরা ঘুমানোর আগে যেমন করে শলা দিয়ে বিছানা ঝেড়ে পরিষ্কার করে ঘুমাই তেমনি ঘুমানোর আগে মনের এসব আবর্জনা দূর করার উপায় হচ্ছে, মেডিটেশন বা ধ্যান। স্ট্রেস থেকে মুক্তি সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে কিছু সময়ের ধ্যান মনকে স্ট্রেস মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। অল্প সময়েই দেহমন চাঙা হয়ে ওঠে। মেডিটেশনের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু মনোদৈহিক ব্যায়াম। গভীর দমচর্চা ও অবলোকনের মাধ্যমে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো আগের চেয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাড়ে চিন্তাশক্তি। ধ্যানের মাধ্যমে মন কিছু সময়ের জন্য সব ধরনের ক্লান্তি ও অবসাদ থেকে মুক্তি পায়। এতে দেহ সতেজ ও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কোথায় শিখবেন? দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মেডিটেশন শেখায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি মেডিটেশন হচ্ছে সিলভা মেডিটেশন ও কোয়ান্টাম মেডিটেশন। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে ইন্টারনেট থেকে জেনেও মেডিটেশন চর্চা শুরু করে দিতে পারেন। কেন দরকার মন হচ্ছে সকল শক্তির উৎস। মনের শক্তিকে জাগ্রত করা গেলেই প্রকৃতপক্ষে শক্তিমান হওয়া যায়। ক্লান্তি দূর করে : প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় নানা রকমের নেতিবাচক পরিস্থিতি অতিক্রম করতে হয়। এতে মনের ভেতর জমে থাকা চাপ, দুঃখ, কষ্ট রাতের স্বাভাবিক ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে পরের দিন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ও কাজে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে। আর তাই ঘুমানোর আগে কিছু সময় মেডিটেশন শরীর ও মন থেকে স্ট্রেস দূর করবে। একাগ্রচিত্ততা : মনকে বিশেষ কোনো কাজের জন্য একাগ্র করতে দরকার মানসিক প্রশান্তি। মানসিক প্রশান্তি নিয়ে যে কোনো কাজ তুলনামূলক অল্প সময়ে করা যায়। মানসিক অস্থিরতা নিয়ে কোনো কাজ শুরু করলে তাতে বেশি সময় লাগে। তাড়াহুড়া করে কাজ করতে গিয়ে কাজে ভুলের আশংকাও থাকে বেশি। এ ধরনের ক্ষেত্রে মেডিটেশন বা ধ্যান দারুণ কাজ করে। অ্যান্টিভাইরাস : আমাদের শরীরকে যদি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে মন হচ্ছে সফটওয়্যার। ভাইরাস কিংবা অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম যেমন- কম্পিউটারে কাজের গতি কমিয়ে দেয় তেমনি স্ট্রেস, দুঃখবোধ, দুশ্চিন্তা, রোগব্যাধি ও হতাশা শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কম্পিউটারের ভাইরাস দূর করার জন্য রয়েছে অ্যান্টিভাইরাস, তেমনি মনের জট খোলার উপায় হচ্ছে মেডিটেশন। আর তাই সুস্থজীবনের জন্য দরকার পরিকল্পিত জীবনযাপন, পরিমিত খাদ্যাভাস, ব্যায়াম ও মেডিটেশন।