শিশুর পরিপূরক খাবার

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
বাংলাদেশে শিশুদের পুষ্টির অবস্থা খুবই নাজুক। শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয়মাস মায়ের দুধই সবোর্ৎকৃষ্ট। এরপর শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির হার দ্রæত হয়। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পূণর্ ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূপূরক খাবার দেয়া প্রয়োজন। যেমন নরম ভাত, সেদ্ধ করা চটকানো মাছ-মাংস, ফলের রস, চটকানো আলু, চটাকানো শাক-সবজি, ডিমের কুসুম, বিভিন্ন প্রকার হালুয়া, পাকা কলা ইত্যাদি। খাদ্যের ছয়টি উপাদান যেমনÑ শকর্রা, লৌহ, আমিষ, ভিটামিন, খনিজলবণ ও পানি। শকর্রা জাতীয় খাবার যেমনÑ চালের গুঁড়া, চাল, সুজি, আটা, রুটি, ভাতের মাড়, আলু সিদ্ধ, ক্ষীর, সেমাই, পায়েশ ইত্যাদিতে গুড়, চিনি মিশিয়ে খাবার নরম ও পাতলা করে শিশুকে দেয়া যায়। এসব খাবার শরীরের শক্তি যোগায়। আমিষ জাতীয় খাবার যেমনÑ মাছ, মাংস, ডিম, ডিমের পুডিং, ডাল, সীমের বিচি, বাদাম ইত্যাদি খাবার সেদ্ধ ও পিষে নরম করে শিশুদের খাওয়ানো যায়। ভিটামিন ও খনিজ লবণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে পাকা আম, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, আপেল, কমলা, মাল্টা, জাম ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন শাক-সবজি যেমনÑ লালশাক, পালং শাক, কঁাচকলা, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, ফুলকপি, মটরশুটি, বরবটি, টমেটো ইত্যাদি তৈল দিয়ে সেদ্ধকরে চটকে শিশুকে খাওয়ানো যায়। শিশুদেরকে ছয়মাস বয়স থেকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি নিরাপদ ফুটানো পানি ও পানি জাতীয় ফল যেমনÑ কমলা, ডালিম, মাল্টা, জামরুল, আঙ্গুর ইত্যাদি ও মৌসুমি বিভিন্ন ফলের রস দেয়া যায়। শিশুর খাদ্য তৈরিতে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অন্যান্য খাদ্যের সঙ্গে তেলের মিশ্রণের ফলে বাড়তি শক্তি, স্বাদ, আমিষ, লৌহ এবং ভিটামিন এওডি এর চাহিদা মেটায়। শিশুকে যেভাবে পরিপূরক খাবার দেবেন : প্রথমে ১-২ চামচ করে স্যুপ, ফলের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ বিশুদ্ধ ফুটানো পানি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। পরবতীের্ত পানি বাদ দিয়ে রসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিনে ২ বার করে খায়াতে হবে। পরিপূরক খাবার শুরু করার সয় পথমে নরম করে তরল, আধা-তরল অভ্যাস হয়ে গেলে আধাশক্তি থেকে শক্ত খাবার দিতে হবে। যেমনÑ ফলে দেবার ১ সপ্তাহ পর ১-২ চামচ করে দিনে ২ বার দুধের সঙ্গ সুজি বা চালের গুঁড়া, গুড় ইত্যাদি মিশয়ে নরম করে শিশুকে খাওয়াত হবে। শষ্য দেবার ১ সপ্তাহ পর ১ চামচ করে নরম সেদ্ধ ডিমের কুসুম দেয়া যাবে। ডিম দেবার ১ সপ্তাহ পর ১-২ চামক করে দিনে ২ বার শাক-সবজি যেমনÑ মিষ্টি কুমড়া, আলু, লাল শাক ইত্যাদি সেদ্ধ করে চটকিয়ে নরম করে খাওয়াতে হবে। সবজি দেয়ার ১ সপ্তাহ পর চাল, ডাল, আলু, শাক-সবজি, খিচুড়ি নরম করে খাওয়াতে হবে। খিচুড়ি দেবার ১ সপ্তাহ পর ১-২ চামচ করে দিনে ১ বার কলিজা, মাংস ইত্যাদি সেদ্ধ করে পিষে খাওয়াত হবে। হুট করে কোন খাবার দেয়া যাবে না। ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে গেলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। সহজলভ্য এবং সামথর্্য অনুযায়ী পরিবারের খাদ্য থেকে খাওয়াতে হবে। জোর করে শিশুদেরকে খাওয়াতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। কোন বয়সে কতবার পরিপূরক খাবার খাওয়াত হবে যেমনÑ ৬-৭ মাস বয়সে দিন ২ বার, ৭-৮ মাস বয়সে তিনে ৩ বার, ৯-১২ মাস বয়েসে দিনে ৪ বার, ১-২ বৎসর বয়সে কমপক্ষে ৫-৬ বার পরিপূরক খাবার খাওয়ানো যাবে। শিশু অপুষ্টিতে ভুগলে বাড়তি পরিপূরক খাবার দেয়া প্রয়োজন। ২ বছর পযর্ন্ত পরিপূররক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। হঠাৎ করে মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। এক বছর বয়স থেকে শিশুকে নিজের হাতে পরিবারের অ্যান্য সদস্যদের সঙ্গে খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করলে ভাল হয়। পরিপূরক খাবার তৈরি করার সময় মনে রাখতে হবে, প্রথমে সহজে তৈরি করা যায় এমন খাবার অল্প করে পতালা ও নবম করে ১-২ চামক করে খাওয়াত হেব। সহজে হজম হয় এমন খাবার দিতে হবে। প্রথমে কোন খাবার দিতে হলে দুধ খাওয়ান কিছু আগে দিতে হবে। অল্প খাবার অধিক শক্তি যোগায় এমন খাবার দিতে হবে, যেমন তেল, গুড় বা চিনি। মৌসুম অনুযায়ী টাটকা ও তাজা খাবার দিতে হবে। শিশু পরিমাণে কম খায়। তাই অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে। এলাজির্ ও ডায়োরিয়া হলে নিদির্ষ্ট কিছু খাবার বাদ দিতে হবে। শিশুর পছন্দ অনুযায়ী খাবার দিতে হবে। খাবারের চামচ বা কাপ/বাটিতে করে দিতে হবে। শিশুকে খাওয়ানো সময় ধৈযর্্য সহকারে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারের মধ্যে বৈচিত্র আনতে হবে। শিশুকে খাবার খাওয়ানোর সময ধৈযর্্য সহকারে খাওয়াতে হবে। শিশুকে খাওনানোর সময় ধৈযর্্য সহকারে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারের মধ্যে বৈচিত্র আনতে হবে। শিশুকে জার করে খাওয়ানো যাবে না। হাসিখুশি পরিবেশে গল্প করে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। শিশুর খাবার তৈরি করার সময় হাত ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। শিশুর ব্যবহৃত হাড়ি-পাতিল থালা-বাসন, চামুচ, গøাস ইত্যাদি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। খাবার খোলা রাখা যাবে না। মশা, মাছি, ধুলা-বালি না পারতে পারে এমন মত করে ঢেকে রাখতে হবে। রান্না খরা খাবার ২ ঘণ্টার মধ্যে না খাওয়ালে তবে সে খাবার আবার ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে। উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শিশুকে সংক্রামক রোগ, কৃমি রোগ ইত্যাদি থেকে নিরাপদ রাখে। সুস্বাস্থ্য দেহের সুস্থ মন শিশু থাকবে হাস্যোজ্জল।