চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হতে হতে রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পথকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ (বস্নক) করে দেয়াকেই হার্টে বস্নক বলা হয়ে থাকে।
হার্ট বস্নকের লক্ষণ :
হৃৎপিন্ডে বেশি পরিমাণে বস্নক থাকলে বুকে ব্যথা হয়। আস্তে আস্তে ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। হাঁটার সময়, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বুকে ব্যথা হয়, থামলে ব্যথা কমে যায়। দম নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়। বুকে জ্বালাপোড়া ও ধড়ফড় করে। গলা, কপাল ও মাথা ঘাম হওয়া। নিচের দিকে হেলে কিছু করার ও একটু ভারী কিছু বহনের সময় কষ্ট হয়। খাবার হজম না হওয়ার মতো অস্বস্তি লাগে।
হার্ট বস্নকের কারণ:
রক্তনালিতে চর্বিজাতীয় বস্তু খুব ধীরে ধীরে জমা হতে থাকে। তাই হার্ট বস্নকখুবই ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যেমন ধরুন একটি বস্নক ১০% থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে ৮০%-এ পৌঁছাতে ব্যক্তিভেদে ১০ থেকে ৩০/৪০ বছর সময় লাগতে পারে। তাই বলা হয়ে থাকে, ব্যক্তি হার্ট বস্নক নিয়ে দীর্ঘসময় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
হার্ট বস্নকের সংখ্যা এবং পারসেন্টেজ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় না পৌঁছানো পর্যন্ত রোগী কোনোরূপ শারীরিক অসুস্থতা বোধ করেন না। হার্ট বস্নকের কারণে রোগীর হার্টের রক্ত সরবরাহের স্বল্পতা দেখা দেয়। হার্ট বস্নকের (%) পার্সেন্টেজ বৃদ্ধি পেলে বস্নকের ভাটির দিকের অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।
ফলশ্রম্নতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে পরিশ্রম বা টেনশনকালীন সময়ে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয়ায় এ সময়ে রোগী বুকে চাপ, ব্যথা, বুক ধড়ফড় বা সহজে হয়রান বা পেরেশান হয়ে পড়েন। তবে দিনে দিনে রোগী ঘনঘন এসব অসুবিধায় পতিত হয়ে থাকেন। এভাবে বেশ কিছু বছর চলে যেতে পারে। দিনে দিনে বস্নকের তীব্রতা (পার্সেন্টেজ) বৃদ্ধি পেয়ে অসুস্থতাকে আরও জটিল করে তোলে। হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট স্ট্রোক এক ধরনের মারাত্মক অসুস্থতা।
যার ফলশ্রম্নতিতে রোগীর মৃতু্য পর্যন্ত ঘটতে পারে এবং চিকিৎসা খুবই দ্রম্নততার সঙ্গে নিতে হয়। প্রায় সময়ই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। বহুবিধ কারণে হার্ট বস্নকের চর্বিজাতীয় বস্তুতে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। তাতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে অথবা চর্বি জাতীয় বস্তুর ওপর রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালিতে রক্তপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বা মারাত্মক পর্যায়ে বন্ধ করে দিতে পারে।
যার ফলে ওই বস্নকের ভাটির দিকের অংশে রক্ত সরবরাহ মারাত্মক পর্যায়ে কমে যাওয়ায় হার্টের ওই অংশের মাংসপেশি অক্সিজেন ও খাদ্য সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়ে অকেজো হয়ে যায়। ফলশ্রম্নতিতে হার্টের পাম্পিং পাওয়ার কমে যায়। হার্ট শারীরিক চাহিদা মাফিক পাম্প করে রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। রক্ত সরবরাহ মারাত্মক পর্যায়ে কমে গিয়ে রোগীর মৃতু্যও ঘটে।
হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে যত রোগী ভর্তি হন তার মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক রোগীর আগে কোনো ধরনের হার্টের অসুস্থতা আছে তা তিনি কখনো জানতেন না বা বুঝতে পারেননি। বাকি অর্ধেক সংখ্যক রোগী আগে থেকেই হার্টের অসুস্থতায় ভুগতে ছিল বলে রোগীর জানা ছিল। এসব কিছু বিবেচনায় এনে এটা বলা যায় যে, হার্ট অ্যাটাক এক ধরনের দুর্ঘটনা।
অনেককে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় বা বহু বছর থেকে হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন কিন্তু কখনই হার্ট অ্যাটাক হয়নি। তবে এ কথা সত্য যে, হার্ট বস্নকছাড়া খুব কমই হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকে অর্থাৎ যাদের হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকে তাদের প্রায় সবারই কোনো না কোনো পর্যায়ের হার্ট বস্নক থাকে, হতে পারে বস্নক প্রাথমিক পর্যায়ের বা জটিল পর্যায়ের। বর্তমানে হার্ট বস্নকে উপযুক্ত মেডিসিন গ্রহণের মাধ্যমে সুচিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।
সেই সঙ্গে রোগীকে অবশ্যই নিরাপদ মাত্রায় কায়িক শ্রমে অভ্যস্ত হতে হবে এবং হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন করতে হবে। জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হার্ট বস্নকের কারণে যাদের হার্ট ফেইলুর দেখা দিয়েছে অথবা হার্ট বস্নক অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের রিং, বাইপাস অথবা ইসিপি থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হয়।
তবে মনে রাখতে হবে, এসব পদ্ধতি গ্রহণ করেও রোগী সুস্থ থাকতে পারবে না, যদি না জীবনধারা পরিবর্তন না করে উপযুক্ত মেডিসিন গ্রহণ না করে এবং হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন না করে।
