হিটস্ট্রোক : কী, কেন ও করণীয়

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হতে কত দিন পর্যন্ত সময় লাগবে সেটা এর তীব্রতা বা ধরনের ওপর নির্ভর করে। যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে হিটস্ট্রোক রোগীর মস্তিষ্ক, পেশি, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশ। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সেই সিগন্যাল হাইপোথ্যালামাসে পৌঁছালে তার হিট সেন্সর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য রক্তনালি প্রসারিত করে অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। আবার ঘামের মাধ্যমেও তাপ কমানোর মেকানিজম মেনে চলে শরীর। তবে প্রচন্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রমের কারণে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। মস্তিষ্ক ও শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণক্ষমতাও তখন নষ্ট হয়ে যায়। হিট স্ট্রোকের বাংলা পরিভাষা আতপাঘাত। দেশে শুরু হয়ে গেছে প্রচন্ড তাপদাহ। এই তাপদাহের একটি মারাত্মক দিক হলো হিটস্ট্রোক। এটি একটি অত্যন্ত জরুরি অবস্থা। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এর ফলে মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে। তাই গরমে আমাদের সব সময় সতর্ক থাকা উচিত। শ্রমজীবী মানুষ বিশেষ করে যারা রোদে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন তারা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া শিশু ও বয়স্করা হিট স্ট্রোকে সহজেই আক্রান্ত হয়ে থাকে। হিটস্ট্রোক হওয়ার কারণসমূহ হিটস্ট্রোক কয়েকটি কারণে হতে পারে হ পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা হ শরীরে পানিস্বল্পতা বা লবণের অভাব হ কিছু ওষুধের এডভারস ইফেক্ট যেমন : ডাই-ইউরেটিক্স, বিটা বস্নকারস ইত্যাদি হ অ্যালকোহল হ হৃদরোগ হ চর্মরোগ ইত্যাদি লক্ষণ বা উপসর্গ হিটস্ট্রোক-এ প্রাথমিক কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি বুঝতে পারলে অনেক জটিল অবস্থা থেকে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। সাধারণত হিটস্ট্রোক-এ যে লক্ষণগুলো দেখা যায় হ শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায় হ মাথাব্যথা হ দুর্বলতা হ ঝিমুনি ভাব হ বমি বমি ভাব হ হার্টবিট বেড়ে যাওয়া তবে রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে গেলে এর সঙ্গে আরো কিছু উপসর্গ দেখা দেয় হ চামড়ার রং লালচে হয়ে যাওয়া হ মানসিক ভারসাম্যহীনতা হ হাঁটতে অসুবিধা হওয়া হ চোখের মণি বড় হয়ে যাওয়া হ বমি হওয়া হ ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া হ খিঁচুনি হওয়া হ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া করণীয় হ গরমে কড়া রোদ ও ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। হ এই রকম পরিস্থিতিতে প্রথমেই যা করা দরকার তা হলো, রোগীর শরীর ঠান্ডা করা এবং খোলা বা ফাঁকা স্থানে নিয়ে যাওয়া। হ ভারি পোশাক পরে থাকলে সেটা চেঞ্জ করে পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরিয়ে দিতে হবে। হ ঠান্ডা বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। হ প্রচুর পরিমাণে লিকুইড জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিশুদ্ধ পানির কোনো বিকল্প নেই। ডাবের পানি, ফ্রেশ জুস, ঠান্ডা শরবত এগুলোও পান করতে পারেন। হ ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ অবশ্যই সূর্যোদয়ের আগে বা খুব ভোরে করতে হবে। হ গরমের দিনগুলোতে অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কারণ, অ্যালকোহল বা সুগার ড্রিংকগুলো শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতার সৃষ্টি করে। হ অনেক সময় শরীরে লবণ বা মিনারেলস-এর ঘাটতি দেখা যায়। সেই সময়ের জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো ওরস্যালাইন। রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হলে মুখে খাওয়া সম্ভব না হলে শিরার মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিন্তু হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে সব সময় এটা নিরাপদ নাও হতে পারে। কারণ, স্যালাইনের সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে সঙ্গে সঙ্গেই। হ বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি আলাদা নজর রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন তাদের শরীরে কোনোভাবেই পানিস্বল্পতা দেখা না দেয়। যেহেতু ১-২ বছর বয়সি শিশুরা নিজেদের শারীরিক অসুবিধাগুলোর কথা বলতে পারে না। তাই গরমের দিনে তাদের বারবার পানি বা তরল খাবার দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। তাদের খোলামেলা জায়গায় বা প্রচুর বাতাস আছে এরকম জায়গায় রাখতে হবে। হ শিশুদের মতো বয়স্কদের জন্যও খোলামেলা স্থান বাছাই করা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে তাদের রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হ যেহেতু এটি একটি জরুরি অবস্থা, তাই এর চিকিৎসাও দ্রম্নত হওয়া প্রয়োজন। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হতে কত দিন পর্যন্ত সময় লাগবে সেটা এর তীব্রতা বা ধরনের ওপর নির্ভর করে। যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে হিটস্ট্রোক রোগীর মস্তিষ্ক, পেশি, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। \হডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নীলফামারী সদর, নীলফামারী।