বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা

প্রকাশ | ২৯ মে ২০১৯, ০০:০০

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্য সমস্যা ও তার চিকিৎসা বা প্রতিকার অন্যদের তুলনায় খানিকটা আলাদা হয়ে থাকে। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বংশগত প্রথা, জীবনধারা, পরিবেশগত প্রভাব এবং ব্যক্তিগত অভ্যাস যেমন তামাক জাতীয় দ্রব্য (সিগারেট, জর্দা) মদ্যপান ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বয়োবৃদ্ধদের বেশকিছু স্বাস্থ্য সমস্যাকে বার্ধক্যজনিত সমস্যা হিসেবে ধরে নিয়ে তার উপসর্গ নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়। তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এ বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর আবার বয়সভিত্তিক কোনো নির্দিষ্টতা নেই। অর্থাৎ একই বয়সে যে সবার একই ধরনের সমস্যা দেখা দেবে তা বলা যায় না। কেউ হয়তো ষাট বছরে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন। কেউ আবার আশি পেরিয়েও দিব্যি সুস্থ থাকছেন। বিষয়টি নির্ভর করে, আপনি আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কতটা সচেতন তার ওপর। কেননা, বংশগত প্রভাবকে বাদ দিলে অন্য যে বিষয়গুলো থাকে তার সবই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যেমন : জীবনধারায় পরিবর্তন আনা যায়। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, আপনার বিভিন্ন ক্রনিক রোগ যেমন হাই বস্নাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ রোগসমূহের প্রভাব, প্রতিক্রিয়া সাধারণ বয়সীদের চেয়ে বয়োবৃদ্ধদের ক্ষেত্রে অনেক ভয়ঙ্কর হয়। তাদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলোও থাকে ভিন্ন ধরনের। ধরা যাক, ৪০ বছর বয়সী কোনো ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ হলে তিনি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, কিন্তু ৮৫ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি একই ধরনের সংক্রমণের ফলে তার মধ্যে অসংলগ্ন কথাবার্তা, পড়ে যাওয়ার ঘটনা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার রোগের জটিলতা ও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও বয়োবৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। সে কারণে তাদের রোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যেসব অঙ্গ বা তন্ত্রের সমস্যা বেশি হয় বয়োবৃদ্ধদের সব শরীরবৃত্তীয় ক্ষমতাই সাধারণভাবে হ্রাস পায়। তবে মস্তিষ্ক, চোখ, কান, হৃদপিন্ড, কিডনি, মূত্রনালি ও প্রস্টেট গ্রন্থি অস্থি এবং মাংসপেশিজনিত রোগ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন, জরায়ু এবং মনোপোজ সংক্রান্ত রোগ বেশি হয়। এ ছাড়াও ক্রনিক ডিজিজ যেমন : হাই বস্নাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ইত্যাদি হওয়ার প্রবণতাও বেশ থাকে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নির্ণয় এবং বিভিন্ন বয়োবৃদ্ধদের প্রতি বছর অন্তত একবার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরীক্ষা করা উচিত। যে কোনো প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করতে পারলে তার চিকিৎসা অনেক সহজ এবং জটিলতা কমানো যায়। বয়োবৃদ্ধদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে তা হলো- হৃদপিন্ড, কিডনি, মূত্রনালি ও প্রস্টেট গ্রন্থি, অস্থি এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ও জরায়ু সংক্রান্ত এ ছাড়া ক্রনিক ডিজিজের মধ্যে হাই বস্নাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ডিজলিপিডেমিয়া, বিভিন্ন ক্যান্সার এবং মহিলাদের মনোপোজ সংক্রান্ত। শেষ কথা : বয়োবৃদ্ধদের নির্দিষ্ট কোনো একটি রোগের চিকিৎসা করে তাদের ভালো রাখা যাবে না। তাদের সুস্থ রাখার জন্য পরিবার তথা পুরো সমাজের কিছু ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে চিকিৎসকদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বয়োবৃদ্ধরা সাধারণত কথা বলতে পছন্দ করেন। অনেকে আবার বেশি চুপচাপ থাকতে চান। দুই ক্ষেত্রেই আমাদের সময় দিয়ে তাদের সমস্যাগুলোকে বলতে দেয়া উচিত। খোলা মনে কথা বললে অনেক উপসর্গের তীব্রতা কমে যায়। এ ছাড়াও এতে করে চিকিৎসক এবং তার ব্যবস্থাপনার ওপর রোগীর আস্থা বাড়ে। একটা কথা আছে। অনেক বেশি বয়স্ক এবং একদম কম বয়সী শিশুদের বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। আমরা আমাদের শত আনন্দের খুব সামান্য অসুস্থতাতে যেমন উদগ্রীব হই, আমাদের পরিবারের বয়োবৃদ্ধদের ক্ষেত্রে প্রায়ই তেমনটা দেখা যায় না। ঠুনকো কোনো প্রশ্ন বারবার করলেও আমরা সন্তানদের ওপর বিরক্ত হইনা, অথচ বয়োবৃদ্ধদের প্রশ্ন শুনতে আমরা অভ্যস্ত নই। আমাদের সন্তানদের আমরা যেভাবে সেবা করি, এক সময় আমাদের পিতামাতা সেভাবেই আমাদের করেছেন। আজ আমাদের পিতামাতা যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, কাল আমরা সেখানে গিয়ে দাঁড়াব। আমাদের সন্তান আসবে আমাদের স্থানে। আমরা আমাদের সন্তানদের কাছে যেমন আচরণ বা গুরুত্ব পাওয়ার স্বপ্ন দেখি, আমাদের পিতামাতাও তেমনটা আশা করেন আমাদের কাছে।