কালাজ্বর শনাক্তকরণ

প্রকাশ | ১২ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
কালাজ্বর বা ভিসেরাল লেসমেনিয়াসিস একটি পতঙ্গবাহিত পরজীবীঘটিত রোগ। এ রোগটির বাহক বেলে মাছি। এ মাছি গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। আর এ কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি আক্রান্ত হয়। বর্তমানে কালাজ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। কালাজ্বর প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যথাদায়ক, জটিল ও ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশে আক্রান্ত রোগীর মূত্রের নমুনা হতে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা বিভাগ। মূত্রের নতুন থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি বিশ্বের আর কোথাও প্রচলিত নেই। এই প্রথম বাংলাদেশের এক দল গবেষকের নিরলস পরিশ্রমের ফল কালাজ্বর নির্ণয় পদ্ধতি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। এ গবেষণা দলে ছিলেন গোলাম মুসাব্বির খান, শফিউল আলম, মিল্কা প্যাট্রিসিয়া পোদ্দার, মাকাতো ইতোহ, কাজী এম জামিল, রশিদুল হক, ইউকিকো ওয়াগাত সুমা। জাপানা-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের এ গবেষণার অর্থায়ন করেছে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করেছেন পরজীবী গবেষক দেবাশীষ ঘোষ, নাজমুল হুদা, এইচএম রুবায়েত এলাহী ও শারমিনা দেলয়ার। সাধারণত কালাজ্বর দুটো পরজীবী প্রগতি লেসমেনিয়া ডনোভানি, লেসমেনিয়া চাগাসির জন্য দায়ী। এদের মধ্যে রয়েছে ৩৯ অ্যামাইনো অ্যাসিডবিশিষ্ট পরিবর্তিত জেনেটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রোটিন অণু। লেসমেনিয়া ছাড়া অন্য কোনো পরজীবী বা অণুজীবে এটি পাওয়া যায় না। আক্রান্ত রোগীর মূত্রের নমুনায় খুঁজে পাওয়ার ওপর ভিত্তি করেই উদ্ভাবন করা হয়েছে নতুন পদ্ধতিটি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির নাম আরকে-৩৯ স্ট্রিপ টেস্ট। মূত্রের নমুনা থেকে রোগ নির্ণয়ের এ পদ্ধতির মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে জানা যাবে কালাজ্বরের পরজীবীর উপস্থিতি। আগের প্রচলিত পদ্ধতিতে কোনো নমুনায় অ্যান্ট্রি আরকে-৩৯ ইমিউনোগেস্নাবিউলিন অণু খুঁজে পেতে লাগত ৩০ মিনিট। নতুন পদ্ধেিত ১০ মিনিটেই 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগেস্নাবিউলিন অণু খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এতে আলাদা কোনো দ্রবণও যোগ করার প্রয়োজন হয় না। এখান থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত পরিসংখ্যানের সফটওয়্যার এসপিএসএস ব্যবহার করে নির্ভুল ফল পাওয়া সম্ভব। সহজে নমুনা সংগ্রহের কারণে এ পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী। বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধ রোগীদের অস্থিমজ্জা, পস্নীহা সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে ছিদ্র না করে নমুনা সংগ্রহ অনেক সহজ, আরামদায়ক। কালাজ্বরের এ গবেষণায় প্রথমে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে একশ স্বেচ্ছাসেবী রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ওই ১০০ রোগীকে প্রথমে রক্তরস বা পস্নাজমা ও সিরামে টেস্টের মাধ্যমে কালাজ্বর আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। পরে তারে মূত্রের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায় তাদের ওই নমুনার মাধ্যমেও কালাজ্বরের উপস্থিতি বলে দেয়া সম্ভব। এ গবেষণা আইসিডিডিআরবির মহাখালী শাখায় পরজীবী বিদ্যা গবেষণাগারের পাশাপাশি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়ও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাপানের আইচিয়ে মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সুকুবা। এ গবেষণাকর্ম গত বছরের ২৬ নভেম্বর বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োমেড সেন্ট্রালের 'প্যারাসাইটস অ্যান্ড ভেক্টরস' নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।