সারোগেট মাদারহুড

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
আজকাল অবশ্য ঝঁৎৎড়মধঃব সড়ঃযবৎযড়ড়ফ বা মাতৃভূমিকা পালন কথাটা ব্যবহার করা হয় একটি বিশেষ প্রসঙ্গে- সেটা হলো নিঃসন্তান দম্পতির জন্য নিজের গর্ভে তাদের সন্তান ধারণ করে জন্মের পর তাদের সেই সন্তানকে দিয়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে তাদের কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে একটু ব্যাপক অর্থে। অনেক সময়ে সেই নিঃসন্তান দম্পতির ইংরেজি ংঁৎৎড়মধঃব কথাটা ল্যাটিন ংঁৎৎড়মড় থেকে এসেছে- যার অর্থ কারোর পরিবর্তে। ংঁৎৎড়মধঃব সড়ঃযবৎ বলতে বোঝায় আসল মায়ের অবর্তমানে যে মায়ের ভূমিকা নিয়েছে। স্বামীর শুক্র কৃত্রিম উপায়ে ংঁৎৎড়মধঃব সড়ঃযবৎ বা মাতৃভূমিকা পালিকা নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয়। অর্থাৎ, সেই পুরুষের সন্তান নারী ধারণ করে। সন্তানের জন্ম হলে নিঃসন্তান দম্পতি সন্তানটি লাভ করে। এ ক্ষেত্রে সন্তানটির সঙ্গে মাতৃভূমিকা পালিতা নারীর একটি জৈবিক যোগ থেকে যাচ্ছে, কারণ সন্তানটি তারও সন্তান। এসব ক্ষেত্রে 'নিজের' সন্তান পরিত্যাগ করার সময়ে একটি প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে নারীটি যেতে পারে। তবে আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই নিঃসন্তান দম্পতির নিজেদের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কাজে লাগানো হয়। যদি সেগুলোর কোনও একটিতে অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে তৃতীয় কোনো নারী বা পুরুষের ডিম্বাণু বা শুক্রাণু ব্যবহৃত হয়। শুক্রাণু দিয়ে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করা হয় একটি টেস্ট টিউব-এ। এই পদ্ধতিকে ওঠঋ বা রহ ারঃৎড় ভবৎঃরষরুধঃরড়হ বলা হয়। স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহৃত হলে টেস্ট টিউব-এ যে ভ্রুণের সৃষ্টি হয়, সেটি এই দম্পতিরই আপন সন্তান। এই ভ্রুণকে পরে ংঁৎৎড়মধঃব সড়ঃযবৎ-এর গর্ভাশয় বা জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। এ ক্ষেত্রে ংঁৎৎড়মধঃব সড়ঃযবৎ-এর জরায়ুটা বা গর্ভাশয়কে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যের সন্তানকে বড় করতে দেয়ার জন্য। সেই জন্য অনেক সময়ে ড়িসন ভড়ৎ ৎবহঃ কথাটা ব্যবহার করা হয়। অনেক দেশেই এইভাবে সন্তান লাভ আইন-সঙ্গত নয়। সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইত্যাদি ইউরোপের কতগুলো দেশে ংঁৎৎড়মধঃব সড়ঃযবৎ-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিছু দেশে এটির ব্যাপক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ ছাড়া এ বিষয়ে লেনদেনকে বে-আইনি ঘোষিত করা হয়েছে। এই পদ্ধতি সন্তানহীন দম্পতিকে আপন সন্তান লাভের সুযোগ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরিবর্তে অন্য একটি নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যে প্রভাব ফেলছে- তা মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। যে নারী ংঁৎৎড়মধঃব মায়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন, তার নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এতে বিপন্ন হতে পারে- গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে এবং সন্তানকে হস্তান্তর করার সময়ে। ভারতবর্ষে ংঁৎৎড়মধঃব সড়ঃযবৎ-এর ব্যাপারে এখনেে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়নি। ওহফরধহ ঈড়ঁহপরষ ড়ভ গবফরপধষ জবংবধৎপয-এর কিছু নির্দেশিকা এ ব্যাপারে আছে, কিন্তু সেটি মেনে চলার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নির্দেশাবলীর মধ্যে রয়েছে: যেসব ক্লিনিক-এই ব্যাপারে জড়িত তারা বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। ংঁৎৎড়মধঃব মায়ের নাম এবং যে দম্পতির সন্তান সে বহন করছে- তাদের দুজনের নামই রেজিস্ট্রিতে রাখতে হবে। কোনো নারীই তিনবারের বেশি ংঁৎৎড়মধঃব মায়ের ভূমিকা পালন করতে পারবে না; ংঁৎৎড়মধঃব মায়ের গর্ভ সংক্রান্ত সমস্ত খর্চা সন্তানের আইনসম্মত পিতামাতাকে বহন করতে হবে। ংঁৎৎড়মধঃব মা-কে তার কাজের জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে ইত্যাদি। ংঁৎৎড়মধঃব মায়েদের টাকা নেয়ার অধিকার আমেরিকাতেও রয়েছে। সেখানে সাধারণত ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার থেকে ৯ লাখ টাকা এই দায়িত্বের জন্য ংঁৎৎড়মধঃব মায়েরা পায়। তারওপর আনুষঙ্গিক ডাক্তারি খর্চাতো আছেই। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতিতে সন্তান পাওয়ার খর্চা ষাট হাজার ডলার বা ২৭ লাখ টাকার মতো হওয়া বিচিত্র নয়। ভারতবর্ষে সেই তুলনায় অনেক কম পয়সায় ংঁৎৎড়মধঃব মা পাওয়া যায়। টাইম্‌স অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী ংঁৎৎড়মধঃব মায়েদের জন্য এই খর্চা ভারতবর্ষে ১ লাখ থেকে ৩ লাখের মধ্যে। ক্লিনিক ইত্যাদির খরচ নিয়ে পুরো ব্যাপারটা পাঁচ সাড়ে পাঁচ লাখের মধ্যেই চুকে যায়। এর অর্থ 'রিপ্রোডাক্টিভ টু্যরিজম' ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে বাড়বে। সেটা কতটা বাঞ্ছনীয় সেটা অবশ্যই একটা প্রশ্ন। সানন্দে এই কাজ খুব অল্প নারীই নেয়। এই দায়িত্ব পালন করতে স্বীকৃত হন সাধারণভাবে দুস্থ নারীরা- যাদের অর্থের বিশেষ প্রয়োজনে। গরীব দেশে যেখানে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এমনিতেই ভঙ্গুর, লোকে অপুষ্টিতে ভুগছে, সেখানে কোনো দুঃস্থ নারীর গর্ভধারণ এবং সন্তানের জন্ম দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা-সঙ্কুল। এ ছাড়া সামাজিক ও মানসিক চাপের ব্যাপারটাও উপেক্ষণীয় নয়। পয়সার বিনিময়ে গর্ভধারণ এবং পরে সেই সন্তানকে 'পরিত্যাগ' করা বহু নারীর পক্ষেই একটি তীব্র মানসিক ধাক্কা। রিপ্রোডাক্টিভ টু্যরিজমের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এলেও বিদেশি দম্পতিদের সুবিধার্থে দেশের দুঃস্থ নারীদের শরীরকে এ ভাবে ব্যবহার করতে দেয়ার বিরুদ্ধে একটা জনমত গড়ে উঠছে।