আঁশযুক্ত খাবার যে কারণে খাবেন

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
ছোটবেলা থেকেই আমরা জানি খাদ্যের উপাদান ৬টি- শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ, লবণ আর পানি। তবে আঁশ জাতীয় খাবারের অনেক গুরুত্বের কথা চিন্তা করে এটিকে এখন আরেকটি খাদ্য উপাদান হিসেবে ধরা হয়, এটিকে বলা হয় ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার। সাধারণভাবে আঁশ জাতীয় খাবার হলো উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত যে অংশটুকু, যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রে হজম হয় না। এর কারণ হলো এ জাতীয় অংশ হজম করার জন্য আমাদের পরিপাকতন্ত্রে কোনো পাচকরস বা এনপ্রাইম নেই। আর যেহেতু হজম হয় না যেহেতু এটি হতে আমরা কোনো ক্যালরি পাই না। এ জন্য ধারণা হতে পারে এটি তাহলে কি প্রয়োজনহীন? এটা ঠিক নয়। খাবারে আঁশ জাতীয় অংশটুকু হলো হজম না হওয়া শর্করার অংশ। এগুলো আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি বা শক্তি সরবরাহ না করলেও তা অনেক দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করবে। যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য বড় শর্ত। খাদ্যের আঁশ অংশ হজম না হওয়ার জন্য এগুলো পরিপাকতন্ত্রের বেশকিছু জলীয় অংশ শোষণ করে ধরে রাখে এবং এ জলীয় অংশসহ এগুলো মলের সঙ্গে বের হয়ে আসে। ফলে মল নরম হয় ও পরিমাণে বেশি হয়। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ হয়। এ আরামদায়ক মলত্যাগের জন্য মলদ্বারের বেশকিছু জটিল রোগ প্রতিরোধ হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো পাইলস বা অর্শ্ব, ভগন্দর বা এনালফিসার, এমনকি বায়ুপথের ফোড়া বা পেরিওনাল অ্যাবসেস। যারা বেশি পরিমাণে আঁশমুক্ত খাবার খান তাদের পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সার অ্যাপেনডিসাইটিস, ডাইভারটি কুনাইটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য হারনিয়া হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে, কিছু আঁশ জাতীয় খাবারে তা অনেকাংশে প্রতিরোধ সম্ভব। খাবারের আঁশ পরিপাকনালি থেকে আমাদের খাবারের কোলেস্টরল শোষণে বাধা দেয়, যাতে রক্তে কোলেস্টেরলসহ চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে বিভিন্ন হৃদরোগ, রক্তনালির রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। খাদ্য গ্রহণের পর আমাদের রক্তের গস্নুকোজের মাত্রা যাতে হঠাৎ বেড়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে আঁশ জাতীয় অংশের গুরুত্ব রয়েছে। যা ডায়াবেটিস রোগের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আবার যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীর অনেক সময় রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে সে ক্ষেত্রে আঁশ জাতীয় খাবার সেটিকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দেখা গেছে যারা বেশি আঁশ জাতীয় খাবার খায় তাদের পিত্তথলির রোগ বা লিভারের রোগ কম হয়। অনেক দিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে অনেক সময় এর প্রভাবও মনের ওপর পড়ে। যেমন দেখা যায় সকালের মূল্যবান সময়ের অনেক বড় অংশ দিতে হয় মলত্যাগের কাজে। এতে দিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। মানসিক দিক থেকে অশান্তি, উদ্বিগ্নতা, মন খারাপ হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে হয়। উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত মোটামুটি সব খাবারের মধ্যেই কমবেশি আঁশ জাতীয় অংশ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে শাকসবজিতে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমরা দিনের পর দিন খাবার টেবিলে সবজির অংশটা অনেক নিচে নামিয়ে দিয়েছি। যা আমাদের ভুল খাদ্যাভাসের জন্য বা অসচেতন ও উদাসীন পুষ্টিজ্ঞানের জন্য। হয়তো বা এ কারণে আমাদের মধ্যে উপরোক্ত রোগের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটা কি খুশির সংবাদ নয় যে, খাবারের এ অভ্যাসগত পরিবর্তনের দ্বারা অনেক জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে আমরা নিজেকে অনেক দূরে রাখতে পারি? তাই জরুরি হলো খাদ্যে আঁশ অংশের পরিমাণ বিবেচনায় আনা। আঁশসমৃদ্ধ খাবারের তালিকা কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলা শাক, জটা শাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার আগা-ডোগায় প্রচুর আঁশ অংশ রয়েছে। সবজি অপেক্ষাকৃত বেশি আঁশযুক্ত সবজির মধ্যে রয়েছে সাজনা, কলার মোচা, ঢেঁড়স, ডাঁটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, গাজর, শিম, পটোল, কচু, বেগুন, বরবটি ও মটরশুঁটি। ফল : আঁশ জাতীয় ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আঁশ অংশ থাকে বেল, পেয়ারা, কদবেল, আমড়া, আতাফল, নারিকেল, কালোজামের মধ্যে। তাছাড়াও গাব, কামরাঙ্গা, পাকা টমেটো, পাকা আম, পাকা কাঁঠাল, আপেল ও আমলকির মধ্যে মাঝারি পরিমাণে আঁশ থাকে। ডাল : মটর, মুগ, ছোলা ডালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আঁশ পাওয়া যায়। অন্যান্য যব, ভুট্টা, আটা, তেল, কাঁচামরিচ ও সরিষাতেও উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে আঁশ অংশ বিদ্যমান। এমন নয় যে, খাবারগুলো সহজলভ্য নয়, দামি বা স্বাদে ভালো নয়, শুধু চাই একটু ইচ্ছা তাতেই আপনি আপনার অভ্যাসকে পরিবর্তন করে পেতে পারেন সুস্থ শরীর এবং সেই সঙ্গে সুস্থ মন। দূর করতে পারেন অনেক জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা।