গরমে ঠান্ডার সমস্যা

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
গরমে শিশুদের ক্ষেত্রে ঠান্ডার সমস্যা বেশি দেখা যায়। গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই শিশু ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর মুছে দিয়ে কাপড় বদলে দিতে হবে। গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং তাকে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এ সময় ঠান্ডা লেগে শিশুর মামস হতে পারে। মামস অনেক সময় অল্প দিনে সেরে যায়। কিন্তু বেশি দিন গড়ালে শিশুকে এমএমআর ইনজেকশন দেয়া হয়। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞের পরমার্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। গরমে চুলের গোড়া ঘেমে যায়, সঙ্গে ধুলাবালির আক্রমণ তো রয়েছেই। তাই রোগপ্রতিরোধে প্রথমেই শিশুর চুলের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। অনেক সময় অতিরিক্ত গরমে চুলের ত্বকে খুশকি বা ঘামাচি বের হয়। তাই গরমের শুরুতেই শিশুর চুল ছেঁটে ছোট করে দিতে হবে। এতে চুলের গোড়া ঘেমে গেলেও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এক বছর বা তার কম বয়সে শিশুদের গরমের সময় মাথা অবশ্যই ন্যাড়া করে দিতে হবে। আর চুল একান্তই লম্বা রাখতে চাইলে তার প্রতি আরো একটু যত্নশীল হোন। গোসলের পর চুল ভালোভাবে মুছে দিন। বড় ফাঁকওয়ালা চিরুনি দিয়ে চুলটা ঠিকভাবে আঁচড়ে দিন। এরপর চুল শুকিয়ে গেলে তা ভালোভাবে বেঁধে দিন। শিশুর চুলে তাদের উপযোগী ও ভালোমানের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তাদের জন্য আলাদা চিরুনি ব্যবহার করা উচিত। সপ্তায় দুই দিন শিশুর চুলে শ্যাম্পু করা ভালো। প্রয়োজনীয় কিছু পরমার্শ ক. গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং ধুলাবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। খ. বাইরে বের হলে শিশুর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সব সময় সঙ্গে রাখতে হবে। গ. শিশু ঘেমে গেলে ঘাম মুছে দিতে হবে। শরীরের ঘাম শুকিয়ে গেলে শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে। ঘ. গরমে যতটা সম্ভব শিশুকে নরম খাবার খাওয়ানো ভালো। ঙ. শিশুর ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে, যেনর্ যাশ-জাতীয় সমস্যা না হয়। চ. গরমে শিশুকে প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে, যেন প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। ছ. সদ্যোজাত শিশুকে সব সময় ঢেকে রাখতে হবে, যেন তাদের শরীর উষ্ণ থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সে যেন ঘেমে না যায়। বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জেন যেমন ধুলাবালি, ধোঁয়া, ফুলের রেণু, কল কারখানার নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, গাড়ির ধোঁয়া, বিশেষ কিছু খাবার, ওষুধ ইত্যাদি অ্যালার্জি ও অ্যাজমার সৃষ্টি করে। যে কোনো সুস্থ ব্যক্তিরও অ্যালার্জি হতে পারে। সামান্য উপসর্গ থেকে শুরু করে মারাত্মক উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি হঠাৎ তীব্র আকারে আক্রমণ করতে পারে। নিউইয়র্কে গবেষকরা বলেছেন, যানবাহনে, রাজপথে হাঁচি উদ্রেককারী অ্যালার্জেন সৃষ্টি করে। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির মতে, প্রস্তরফলক, ইট প্রভৃতি দ্বারা আস্তর করার পথে বিভিন্ন উৎস থেকে কমপক্ষে ২০টি অ্যালার্জেন পাওয়া যায়। ফুটপাতের ধূলিকণাকে বর্ণনা করেন এভাবে যে এগুলো হচ্ছে মৃত্তিকার ধুলা, গাড়ির গচ্ছিত নিঃশেষিত পদার্থ, টায়ারের ধুলা, গাছপাতার খন্ড এবং অন্যান্য যৌগিক পদার্থের জটিল সংমিশ্রণ। পথের ধুলা শহরবাসীদের অ্যালার্জি/অ্যাজমায় প্রবলভাবে গ্রহণ করে। কারণ রাজপথ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন, লোকজন প্রভৃতির মাধ্যমে এগুলো দ্রম্নতবেগে বায়ুমন্ডলে মিশে যায়। তাদের মতে শতকরা ১২ ভাগ শহরবাসী নিঃশ্বাসের সঙ্গে এমন বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন সৃষ্টি করে। গবেষকদের মতে রাজপথে খুব নিকটতম বসবাসকারীদর পথের ধুলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অ্যালার্জি ও অ্যাজমার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এবং রাস্তার ১০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে কাশি, হুইজ, রার্নিনোজ এবং নির্ণীত অ্যাজমার প্রকোপ অধিক। অ্যাজমা ও অ্যালার্জি নিঃসন্দেহে একটি যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্যসমস্যা, তাই অ্যালার্জি ও অ্যাজমা যাতে না হয় সেদিক লক্ষ্য রাখা উচিত। অ্যালার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। কী কারণে এবং কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি দেখা দেয় তা শনাক্ত করে পরিহার করে অ্যালার্জি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। অ্যালার্জি সৃষ্টি হয় তখন, যখন ইমোনোগোবিন-ই-এর পরিমাণ রক্তে বেড়ে যায়। যার ফলে অ্যালার্জেন অ্যান্টিবডির বিক্রিয়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং এ বিক্রিয়ার ফলে নিঃসৃত হিস্টাসিনের পরিমাণ বেশি হয় যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। মোট কথা ধুলাবালি, ধোঁয়া, গাড়ির বিষাক্ত গ্যাস, কল কারখানার সৃষ্ট পদার্থ, বৃষ্টিতে ভেজা, শীতের কুয়াশা, ফুলের রেণু, বিশেষ কয়েকটি খাবার যেমন- চিংড়ি, ইলিশ, বোয়াল, গজার, গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, পাকা কলা, আনারস, নারিকেল, কসমেটিকস ও অগণিত জানা-অজানা জিনিস আমাদের শরীরে কাশি, শ্বাসকষ্ট অ্যালার্জি ও অ্যাজমার সৃষ্টি করতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ এবং তার প্রতি সংবেদনশীলতাই অ্যাজমা বা হাঁপানি। এর উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় হাঁচি, কাশি, বুকে চাপা ভাব, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে বাধা। হাঁপানির কারণ বংশগত এবং পরিবেশগত কারণে হাঁপানি হলেও এ দুটি উপাদান কিভাবে সৃষ্টি করে তা পরিষ্কারভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে প্রদাহের কারণে শ্বাসনালি লাল হয়, ফুলে যায়, সরু হয় এবং ইরিটেন্ট বা উদ্দীপকের প্রতি অতিসংবেদনশীল হয় যার ফলে হাঁপানির উপসর্গ দেখা যায়। নিম্নবর্ণিত বিভিন্ন উপাদানের কারণে হাঁপানির উপসর্গ সাধারণত দেখা যায়। হাঁপানি উপসর্গের উপাদান (ট্রিগার)- ষ ইনফেকশন, সাধারণত ভাইরাসজনিত উপসর্গ। যেমন- কোল্ড, ফ্লু ইত্যাদি ষ অ্যালার্জেন বিশেষত ধুলাবালি, পরাগরেণু, গৃহপালিত পশুপাখির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ ইত্যাদি ষ ব্যায়াম বা শরীরিক পরিশ্রম, বিশেষত শীতকালে ষ আবেগ। যেমন- উত্তেজনা, ভয়, রাগ ষ ইরেটেন্ট, প্রধানত বায়ুদূষণ ষ ধূমপান (হাঁপানি রোগী নিজে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ধূমপান পরিহার করতে হবে) ষ আবহাওয়ার পরিবর্তন ষ খাবার। যেমন- কৃত্রিম রং এবং কিছু কিছু খাবার ষ ওষুধ। যেমন- এসপিরিন ও অন্যান্য ঘঝঅওউঝ এবং বেটা বকার। হাঁপানির উপসর্গ- ষ ঘড়ঘড় করে শব্দসহ শ্বাস-প্রশ্বাস ষ শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হওয়া ষ বুকে ব্যথা এবং ষ কাশি ইত্যাদি। চিকিৎসা হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। সঠিক চিকিৎসা এবং ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেসব উত্তেজকের (ট্রিগার) কারণে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে যায় রোগীকে সেগুলো শনাক্ত এবং পরিহার করতে হবে। এ ছাড়াও সব হাঁপানি রোগীকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে- ষ ধূমপান এবং তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে ষ ঠান্ডা বাতাস হাঁপানির তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। এ সময় ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে ষ ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়। ব্যায়াম শরীরকে ভালো রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য জটিল রোগবালাই থেকে শরীরকে রক্ষা করে। সঠিক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যায়ামের সময় বা পরে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা পরিহার করা সম্ভব ষ বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং বাড়িতে অবাধ বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে