প্রাণবন্ত ও সুস্থ থাকতে হালকা ব্যায়াম

সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ব্যায়ামের জন্য সকালবেলা। কারণ ওই সময় শরীর ও মন যেমন সতেজ থাকে সে সঙ্গে থাকে প্রকৃতিও। তবে আজকাল অনেকেরই সময়টা থাকে রুটিনের ছকে বন্দি। তাই সকালে সময় না পেলে বিকেলে বা সন্ধ্যার সময়টাও বেছে নিলে ক্ষতি নেই। তবে ভালো ফলাফল পেতে সকাল বা বিকেল যখনই হোক চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন একই সময়ে ব্যায়াম করতে।

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ব্যায়ামের স্থান খোলা বা উন্মুক্ত স্থানে ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো। প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে সবুজের মধ্যে ব্যায়ামের মাধ্যমে অনেক রোগের উপসর্গ কমে যায়। কিন্তু সেটা আমাদের দেশে অনেকের জন্যই সম্ভব না। পরিবেশ, পরিস্থিতি, নিরাপত্তা সবদিক বিবেচনা করেই ব্যায়ামের স্থান ঠিক করতে হবে। যে কোনো খোলা মাঠ বা পার্কে হাঁটা এবং ব্যায়ামের কাজটি করতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের দেশে এখন অনেক ভালো ভালো জিম আছে, তাই ভালো ফল পেতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্রেইনারের তত্ত্বাবধায়নে ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো। আবার কারও যদি কোনো শারীরিক অসুস্থতা না থাকে বা জিম বা বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করার সুযোগ না থাকে তাহলে বাসায় বা বাড়ির ছাদে করতে পারেন। কতক্ষণ করবেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রম্নত হাঁটার বা ৭৫ মিনিট দৌড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাই প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে ৫-৬ দিন কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। বয়সভেদে এবং শারীরিক সুস্থতার ওপর ব্যায়ামের পরিমাণ নির্ভর করে। কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ব্যায়ামটা খেলাধুলা ও বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মাধ্যমে করে নিলেই ভালো যেমন- সাঁতার, সাইক্লিং, ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, কারাত ইত্যাদি। ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও ধরন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রকমের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও দেখা যায়। যা কমাতে হলে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করতে হবে। এর ফলে আমরা অনেকটাই সুস্থ জীবনযাপন করতে পারব। একটি ব্যালেন্স ফিটনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে সব বয়সেই ভালো থাকা যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণে যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজনাধিক্য, হাড়ের রোগ, ব্যাকপেইন, কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে, মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে, অস্টিওপোরসিসের ঝুঁকি কমাতে শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী হাঁটা, কিছু ফ্রিহ্যান্ড, কার্ডিও টাইপ ব্যায়াম, অ্যারোবিক্স ও ইয়োগা করতে পারেন, এগুলো খুবই উপকারী। অত্যাধিক ওজন ও বড় কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা না থাকলে অ্যারোবিক্স, তাবাতা, জুম্বা টাইপ শারীরিক ব্যায়ামগুলো খুবই কার্যকর। এ ছাড়া শরীরের অর্গানগুলোকে ভালো রাখতে, নমনীয়তা বাড়াতে, আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপেরোসিস, স্পাইন, ফ্রোজেন সোল্ডার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং পিরিয়ডজনিত সমস্যা কমাতে ইয়োগা, পাওয়ার ইয়োগা এবং পিলাটেসের ভূমিকা অনন্য। এ ছাড়া এ সময়ের অনেক বড় এবং অবহেলিত একটি সমস্যা হচ্ছে মানসিক রোগ, বিষণ্নতা এবং অনিদ্রা দূর করতে মেডিটেশন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তবে বড় ও ঝুঁকিপূর্ণ কোনো শারীরিক অসুস্থতা থাকলে যে কোনো ধরনের ব্যায়াম করার আগে ডাক্তার ও অভিজ্ঞ ট্রেইনারের পরামর্শ নেয়া উচিত। ব্যায়ামের সময়ের খাবার এবার আসি খাবার প্রসঙ্গে, শারীরিক ব্যায়ামের কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে ভারি খাবার খেয়ে নিতে হবে এবং খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেমন ব্যায়াম করা যাবে না, ঠিক তেমনি ব্যায়াম শেষ করেই ভারি খাবার খাওয়া যাবে না। যদি কারও সেটা সম্ভব না হয় তাহলে অন্ততপক্ষে একঘণ্টা আগে হালকা কিছু খেয়ে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই খালি পেটে ব্যায়াম করা যাবে না। এ সময় একসঙ্গে বেশি পানি বা তরল না খাওয়াই ভালো। ব্যায়াম চলাকালে বিভিন্ন ডেটক্স ওয়াটার খেতে পারেন দেহ থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে দিতে। কাঠবাদাম, ওয়ালনাট (আখরোট), খেজুর, ডাবের পানি, বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন শেক খেতে পারেন তাৎক্ষণিক শক্তি পেতে। ওজন কমাতে অনেকেই ব্যায়াম শুরু করে ভাত বা কার্বোহাইড্রেট টাইপ খাবারগুলো বন্ধ করে দেয়। এটা কোনোভাবেই উচিত না। এতে শরীরের স্টেমিনা লেভেল এবং মেটাবলিজম কমে যায় এবং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই পরিমিত সুষম খাবার অবশ্যই খেতে হবে। ডুবো তেলে ভাঁজা খাবার, চিনি, মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রির মতো মিষ্টি খাবার, অতিরিক্ত তেল চর্বির, প্রিজারভেটিভ ও টিনজাত এবং কোক পেপসির মতো চিনিযুক্ত কোমল পানীয় ও জুসগুলো অবশ্যই বাদ দিতে হবে। সবশেষে বলব, ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং সুস্থ থাকার জন্য সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করা খুব জরুরি। যারা কখনো ব্যায়াম করেননি তাদের জন্য গাইডলাইন হলো প্রথমে অল্প দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। তবে প্রথম শুরুর ক্ষেত্রে কোনো ভালো মানের জিমে গিয়ে প্রফেশনাল ট্রেইনারের তত্ত্বাবধানে করাই উচিত। য় সুস্বাস্থ্য ডেস্ক