বয়স্করা মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় যা করবেন

প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ডা. শারমীন জামান
বয়সসীমা পঞ্চাশ পার হলেই দাঁত ও মুখের সংক্রামকের মতো জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে। বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দাঁতকে দুর্বল করে ফেলায় দাঁত নড়ে যায়। এতে মুখাবয়বের পরির্তনের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত খাবার চিবানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে আপনি অপুষ্টিজনিত নানান সমস্যায় ভুগতে পারেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুখে দাঁত নেই এমন ব্যক্তি অহরহ দেখা গেলেও উন্নত বিশ্বে তেমন একটা চোখে পড়ে না। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মুখের যত্নের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়েন। এতে মাড়ির প্রদাহ, দাঁত ক্ষয়ের মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। হতে পারে দাঁতে ক্যাভিটিও যেটা অল্প বয়স্কদের মধ্যে কমই দেখা যায়। বয়স বাড়লে মাড়ির প্রদাহ বা পেরিওডোন্টাইটিসের প্রবণতা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্কদের মধ্যে ৪ শতাংশ মানুষ মাঝারি বা মারাত্মক পেরিওডোন্টাইটিস রোগে ভুগছে- যা অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৩৮ শতাংশেরও কম। অনেক ক্ষেত্রে মুখ ও দাঁতের চিকিৎসাকালীন সময়ে ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করতে পারে। এসব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সারা শরীরে রক্তের মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে। কারও হৃৎপিন্ডে রিং বসানো থাকলে বা বাল্ব প্রতিস্থাপিত হলে, অথবা কৃত্রিম জয়েন্ট থাকলে সেসব স্থান সংক্রমিত হতে পারে। এ ধরনের সংক্রমণ রোধে মুখের যত্নের ব্যাপারে সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি। যাদের হৃৎপিন্ডে রিং বসানো বা বাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, অথবা কৃত্রিম জয়েন্টে আছে তাদের প্রয়োজন আলাদা যত্নের। কারণ দাঁতের চিকিৎসায় তাদের এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। এ জন্য বছরে অন্তত দুইবার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। আর দাঁতের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় আপনার মুখে কোনো সমস্যা বা ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকে জানাতে হবে। মুখ শুষ্ক হলে বা লালা কমে গেলে দাঁত ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এ ধরনের অবস্থা তৈরি হলে চিকৎসককে জানান, আলোচনা করুন আপনার প্রতিদিনে ওষুধের তালিকায় এমন কোনো ওষুধ আছে কি না- যা মুখের লালা স্বল্পতার জন্য দায়ী। যদি এমন কোনা ওষুধ আপনি সেবন করে থাকেন সম্ভব হলে তা সেবন থেকে বিরত থাকুন। মুখের সুস্বাস্থ্যের জন্য কি করা উচিত আর কি কি পরিহার করতে হবে সংক্ষেপে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো: কী করবেন না ষ ধূমপান করবেন না। ষ পান-তামাকে অভ্যস্ত হলে দ্রম্নত পরিহার করুন। ষ মুখের লালা স্বল্পতার জন্য দায়ী ওষুধ সম্ভব হলে ত্যাগ করুন। ষ উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না। কী করবেন ষ লেবু বা টক জাতীয় খাবার মুখের লালা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মিষ্টি নেই এমন চুইংগাম চিবানো যেতে পারে। ষ আপনার যদি দীর্ঘদিন ধরে মুখ শুকনো থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। ষ প্রতিদিন ক্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ষ প্রতিদিন একবার ডেন্টাল ফ্লশ ব্যবহার করতে হবে। যদি তা না পারেন তবে ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। ষ মাড়িতে কোনো রোগ থাকলে ক্লোরোহেক্সিডিনযুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে স্কেলিং করা উচিত এবং বছরে অন্তত দুইবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ষ আপনার যদি হৃৎপিন্ডে বাল্ব, রিং বা কৃত্রিম জয়েন্ট প্রতিস্থাপিত হয়ে থাকে তবে গুরুত্বের সঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মুখের যত্নের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ষ আপনার দাঁত বা মুখের কোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে কি ধরনের চিকিৎসা করা হচ্ছে সে সম্পর্কে জেনে নিন। ষ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চিকিৎসা শুরুর আগেই দেখে নিন তা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। ষ মনে রাখবেন, সুস্থ্য মুখ আপনার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই প্রতিদিন অন্তত দুইবার ব্রাশ একবার ফ্লশ করার কোনো বিকল্প নেই। ডা. শারমীন জামান ডেন্টাল সার্জন বিডিএস (ডিউ) পিজিটি (ওরাল অ্যান্ড মেক্সিলোফ্যাসিয়াল সার্জারি) ফরাজী ডেন্টাল হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।