শীতে ত্বকের সমস্যা ও যত্নআত্তি

সাধারণত শীত ঋতুতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মানুষের ত্বক অনেকটা শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও রোগ সংক্রমণ ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে এ মৌসুমে মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, লাইফস্টাইল বা জীবনযাপনে পরিবর্তন ছাড়াও ত্বকে বাড়তি যত্নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই চলতি শীত মৌসুমে ত্বক কোমল ও স্বাভাবিক রাখতে কোন ধরনের যত্ন নেওয়া উচিত সে সম্পর্কে বলছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের ত্বক বিজ্ঞান ও যৌনরোগ বিদ্যা বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. রুবাইয়া আলী।

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা উচিত শীত ও গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই ত্বকের কমবেশি পরিবর্তন হয়ে থাকে। ফলে দুই ঋতুতেই ত্বকভেদে ময়েশ্চারাইজার জাতীয় উপকরণ ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে গরমকালে ব্যবহৃত ময়েশ্চারাইজার কিছুটা লাইট হলে সমস্যা নেই। তবে শীতে স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে থিক ময়েশ্চারাইজার যেমন- ইমোলিয়ান্ট ফর্মুলা বা ইমালশন ফর্মুলা, অয়েল ও ক্রিম জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা উচিত। প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা যেহেতু বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নারী, পুরুষ ও শিশুদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই ত্বক চর্চায় বাজারে পাওয়া যায় এমন সব পণ্যসামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে যে, শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর চেয়ে ত্বকের সঠিক রং ধরে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কারো অনুকরণ বা অনুসরণ করে একই ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরিবর্তে ত্বকভেদে উপযোগী পণ্য ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি দিনের বেলায় রোদ ও সূর্যের আলোতে বেড় হলে সঠিক সানস্ক্রিন এবং স্নানগস্নাস সঙ্গে রাখতে হবে। কারণ ত্বকের রংয়ের পরিবর্তন মূলত অতিরিক্ত গরম, সূর্যের আলো ও সূর্যরশ্মি থেকে হয়। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের উপযোগী সময় সাধারণত অজু-গোসল বা হাত মুখ ধোঁয়ার পর যখন ত্বক ড্যাম্প (ভেজা) থাকে তখন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে বেশি ভালো হয়। তবে অনেকের ত্বক বেশি তৈলাক্ত হওয়ায় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর দ্রম্নত শুকিয়ে যায়। এমন সমস্যায় ময়েশ্চারাইজার দিয়ে তার উপরে হালকা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে উপকার পাওয়া যায়। গরম পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে করণীয় শীতে আরামের জন্য অনেকেই বেশি বেশি গরম পানি ব্যবহার করে থাকেন। যেটি ত্বকের পিএইচ মাত্রা বা ত্বকের স্তরের ধারণক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার নষ্ট করে দেয়। তাই শুধু প্রয়োজনে নাতিশীতোষ্ণ পানি ব্যবহার করা ভালো। ত্বকের বহিরাংশের যত্নে যা করণীয় হাত, পা ও মুখের যে অংশটুকু বেশি বাইরে থাকে, শীতে সেসব অংশের বাড়তি যত্ন দরকার। এ ক্ষেত্রে দেহের বহিরংশে খাটি নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল জাতীয় তেল মালিশ করে গোসল এবং ঠোঁটে সবসময় ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি দেয়া উত্তম। এ ছাড়া শীতে মাথার চুলে খুশকির প্রবণতা বেড়ে যায়। দিনের পর দিন গোসল না করায় মাথায় ছোট ছোট গোটা হয়। এ ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে শ্যাম্পু বা কিটোকনজলসমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। বয়স্ক ও শিশুদের যত্ন শীতে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য বাড়তি যত্নের প্রযোজন হয়। ত্রিশ বছর পার হওয়ার পর থেকে ত্বকের পরিবর্তন হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে দেহের অয়েল প্রডিউসিং গস্নান্ড আগের মতো কাজ না করায় ত্বকে ময়েশ্চার মাত্রা কমে যায়। ফলে বাইরে থেকে উপযোগী দ্রব্য বা প্রসাধনী লাগানো যেমন- খারমুক্ত সফট সাবান ও ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করা ভালো। অন্যদিকে শিশুদের সব সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে না রেখে দেহের উপযোগী ময়েশ্চরাইজার ও শিশুর কক্ষের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। ময়েশ্চরাইজার ক্রিম না পেলে সরিষার তেলের পরিবর্তে নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। শীতজনিত ত্বকের রোগব্যাধি নিয়মিত গোসল না করলে এই সময় শিশুদের ত্বকে এটোপিক ডার্মটাইটিজ নামে এক ধরনের রোগ বেশি দেখা যায়। কারণ জন্মগতভাবে রোগীর ত্বকের বহিরংশ বা ত্বকের স্তর পাতলা থাকে। ফলে শিশুর জন্মের পর ত্বকের পানি শূন্যতা বেশি হয়। আর শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় শিশুদের ত্বক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। এ কারণে শরীরের ভাজে অ্যালার্জি, ত্বক শুষ্ক হওয়া, হাত- পায়ের চামড়া ওঠা, মাথার চুলে খুশকি হয়ে থাকে। বয়স্ক ও শিশু উভয়েরই অন্যান্য স্কিন ডিজিজ যেমন- স্ক্যাবিজ, জেরোটিক একজিমা, সোরিয়াসিস, ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেড়ে যায়। এ ছাড়া হাইপো-থাইরয়েড বা হাইপার থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে শীতে ত্বকের আমুল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। তাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে একজিমার মতো সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রতি এন্টি-ফাঙ্গাল ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সের হার বেড়ে গেছে। সব এন্টি-ফাঙ্গাল মেডিসিন কাজ করছে না। ফলে এটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। তাই সমস্যা দেখা মাত্র নিজে নিজে চিকিৎসা না করে স্বাস্থ্যসম্মত সেবায় ত্বক বিশেষজ্ঞের শরাপন্ন হওয়া উচিত। রোগের উপসর্গ অনুপাতে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিম জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে লতাপাতা ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়া অনুসরণ, কবিরাজী ঝাড়ফুঁক পরিহার করতে হবে। লেখক : কনসালটেন্ট, অ্যাপোলো হাসপাতাল ত্বক বিজ্ঞান ও যৌনরোগ বিদ্যা বিভাগ।