করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক কতটা কার্যকর

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বেই মাস্কের চাহিদা বেড়ে গেছে। চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত ১০২০-এর বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারেরও বেশি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই মাস্ক কেনার জন্য লম্বা লাইন পড়েছে অনেক জায়গায়। এদিকে এ ভাইরাস প্রতিরোধে বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ওষুধ বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেননি। তবে তারা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার উপায় হিসেবে মাস্কে মুখ-নাক ঢেকে বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এখন প্রশ্ন হলো, এই মাস্ক ব্যবহার কী করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক আবহাওয়া ও সঠিক উপায়ে যদি মাস্ক ব্যবহার করা হয়, তবে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর ক্ষেত্রে অনেকটাই কার্যকর হতে পারে। তবে চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশে মাস্ক ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জর্জিয়ার আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সহকারী প্রভাষক মেরিবেথ সেক্সটন জানান, সর্বাধিক পরিহিত, সস্তা এবং ডিসপোজেবল মাস্ক- যা সার্জিক্যাল মাস্ক হিসেবে পরিচিত, এটি করোনাভাইরাসকে আটকাতে পারলেও নির্মূল করতে পারে না। তিনি বলেন, সার্জিক্যাল মাস্ক- যা হলুদ বা নীল রঙের হয়ে থাকে এবং শক্তভাবে কানের সঙ্গে আটকানো যায় এটা পরলে যথেষ্ট নিরাপদে থাকা যাবে। তবে এর মাধ্যমে মুখ, চিবুক ও নাক ঢাকা সম্ভব হয়। আর এসব মাস্কের ওপরে একটি লোহার স্ট্রিপ থাকে- যা সহজে মুখ-নাক ঢেকে রাখে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, মাস্ক পরার পাশাপাশি সেটি খোলার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক খোলার সময় খেয়াল রাখা উচিত যেন এতে কোনো ময়লা না লাগে এবং একবারে খোলা যায়। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে সেন্ট জর্জেসের ড. ডেভিড ক্যারিংটন বলেন, 'সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়।' তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ ভাইরাসই' বায়ুবাহিত এবং এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ফিল্টার করতে পারে না ঠিকঠাক। এ ছাড়া যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত।' তবে হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে এই মাস্ক। আর হাত থেকে মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কিছু সুরক্ষা এটা দেয়। ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিকু্যলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বলেন, হাসপাতালের মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রিত সমীক্ষায় দেখা গেছে রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক ইনফ্লুয়েঞ্জা ঠেকাতে পারে। রেসপিরেটর হচ্ছে এমন এক ধরনের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র যার মধ্যে থাকে একটি বিশেষায়িত ফিল্টার। মূলত বায়ুবাহিত ক্ষতিকর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদার্থের হাত থেকে শ্বাসনালিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য রেসপিরেটর তৈরি করা হয়। অধ্যাপক বল বলেন, 'সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সমীক্ষা চালালে যে তথ্য পাওয়া যাবে, সেটা একই রকম হবে না, কারণ দীর্ঘসময় ধরে টানা একটি মাস্ক পরে থাকা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়।' কুইন্স ইউনিভার্সিটি অব বেলফাস্টের ওয়েলকাম-উল্ফসন ইনস্টিটিউট ফর এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের ড. কনর বামফোর্ড বলেন, 'সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেই ছোঁয়াচে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কার্যকরভাবে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, 'যখন হাঁচি দিচ্ছেন তখন মুখটি ঢাকুন, তারপর হাতটি ধুয়ে নিন এবং ধোয়ার আগ পর্যন্ত মুখের ভেতরে হাত ঢোকাবেন না। শুধু এটুকুতেই নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবে'। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের ড. জেক ডানিং বল বলেন, 'যদিও একটি ধারণা আছে যে মাস্ক ব্যবহার করা উপকারী, কিন্তু বাস্তবে হাসপাতালের পরিবেশের বাইরে এই মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপকভিত্তিক উপকার পাওয়ার খুব কম নজিরই আছে।' তিনি আরও বলেন, 'মাস্ক যদি পরতেই হয় এবং এটা থেকে উপকার পেতে হয়, তবে সেটা পরতে হবে সঠিকভাবে। বদলাতে হবে নিয়মিত এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এ ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নির্দেশিকা মানতে হবে।' ড. ডানিং বলেন, 'সত্যিই যদি উদ্বিগ্ন হয় মানুষ, তবে তারা ব্যক্তিগত ও হাতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিলেই ভালো করবে।' য়