ইউভিআইটিসজনিত চোখের প্রদাহের কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ডা. মোমিনুল ইসলাম
ধুলাবালিময় পরিবেশে একজন মানুষের যেসব অঙ্গ বেশি ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন হয়। তার মধ্যে চোখ অন্যতম। কারণ চোখের পুষ্টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রত্যেকের অক্ষি গোলকের ভেতর রক্তনালি পূর্ণ একটি ছোট আকারের লেয়ার বা স্তর থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ইউভিয়া বা ভাস্কুলার কোট (স্তর) বলে। এই রক্তনালি পূর্ণ স্তরে বা ভাস্কুলার কোটের জ্বালা-পোড়া, ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) হলো ইউভিয়াইটিস বা চোখের প্রদাহ। এ ক্ষেত্রে দ্রম্নত রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত ব্যক্তির দৃষ্টি শক্তি হারানোর ঝুঁকি থাকে। নিম্নে চোখে ইউভিআইটিসজনিত প্রদাহের উপসর্গ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো: ইউভিআইটিস (চোখের প্রদাহ) হয়েছে কি করে বুঝবেন? মাঝে মাঝে চোখ ব্যথা ও লাল হবে। ফটোফোবিয়া অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি আলোর দিকে তাকালে তীব্র ব্যথা অনুভব করবেন। এমন সমস্যা যদি মাসে এক থেকে দুইবার অথবা বছরে ২ থেকে ৩ বার হয়, সে ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা না নিলে পরবর্তী সময়ে রোগী সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। ইউভিআইটিসের কারণ ইউভিআইটিসজনিত চোখের প্রদাহের কারণগুলো হলো- আঘাতজনিত, জীবাণুর সংক্রমণ (ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও ভাইরাস)। এ ছাড়া কানেকটিভ টিসু্য যোজক কলার রোগ, জুভেনাইল বা শিশুদের বাতজ্বর ইত্যাদি ইউভিআইটিস সমস্যার মূল কারণ। কোন বয়সীদের মধ্যে বেশি সমস্যা হয়ে থাকে? সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাদের বাতের সমস্যা আছে তাদের ইউভিআইটিসজনিত চোখের প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া বাতজ্বর, সোরিয়াসিস জাতীয় চর্ম রোগ, সিফিলিস ও এইচআইভি এইডসের মতো যৌন রোগ, যক্ষ্ণা, অটোইমিউন রোগ (ভিকেএইচ বা সিস্টেমিক লুপাস ইরাথ্রোমেটোসাস ছাড়াও ভাইরাল জ্বর আছে এমন রোগীদের যে কোনো বয়সে এই সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসা না নিলে কোন ধরনের সমস্যা হতে পারে সামষ্টিকভাবে ইউভিআইটিসের সমস্যাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে প্রথম হলো চোখের ভাস্কুলার কোট সম্মুখ ভাগের প্রদাহ। এ ক্ষেত্রে চোখের কনজাংটিভ, কর্নিয়া আইরিশ ও লেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় ভাগের মধ্যে চোখের ভিট্রিয়াস জেলি জাতীয় পদার্থ ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝাপসা দৃষ্টি হতে পারে। তৃতীয় স্তরে এসে চোখ ব্যথা না হলেও দৃষ্টি কমে যাওয়া রেটিনা ও করোয়েড ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। চোখের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউভিআইটিসে ভোগা রোগী সময়মতো চিকিৎসা না নিলে অল্প বয়সে চোখে ছানি পড়া, গস্নুকোমা কমে যাওয়া বা চোখে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া স্বচ্ছ কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া। চোখের রেটিনায় ক্ষত হওয়া ও রেটিনা ছিঁড়ে গিয়ে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। সবশেষে রোগীর চক্ষু গোলক নরম বা চোখর উপরের পাতলা পর্দা শুকিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা ও করণীয় এই ধরনের সমস্যা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। তবে ইউভিআইটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চোখ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়মিত ওষুধ সেবনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। \হডা. মোমিনুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট রেটিনা, ফ্যাকো সার্জন ও ইউভিয়া বিশেষজ্ঞ ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল