অতিরিক্ত ভিটামিনের কুফল

ভিটামিন সাপিস্নমেন্ট শরীরের জন্য ভালো, তবে সেটা গ্রহণ করতে হবে নিয়ম অনুযায়ী। কারণ অতিরিক্ত ভিটামিনও শরীরের জন্য বিষ হয়ে উঠতে পারে...

প্রকাশ | ১১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
খাবার থেকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গ্রহণ করা ভালো উপায় হলেও অনেকেই বিকল্প উপায়ে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেয়ে এসবের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিনের বড়ি খেলে নানান সমস্যা হতে পারে। হ শরীরে সম্পূরক খাবারের প্রভাব হ ক্যালসিয়াম সাপিস্নমেন্টের বিধি-নিষেধ হ ভিটামিন-ই'র উপকারিতা হ পেশি গঠনে ভিটামিন 'ই' হ ভিটামিন ডি'র প্রাকৃতিক উৎস প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে শরীরের দৈনিক ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ করা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সার্বজনিন পরামর্শ। তবে অনেকেই মনে করেন, শুধু খাবার থেকে পুষ্টি ও খনিজের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না, ফলে ভিটামিন সাপিস্নমেন্টের আশ্রয় নেন। ভিটামিন সাপিস্নমেন্ট শরীরের জন্য ভালো, তবে সেটা গ্রহণ করতে হবে নিয়ম মাফিক। কারণ অতিরিক্ত ভিটামিনও শরীরের জন্য বিষ হয়ে উঠতে পারে। এখানে অতিরিক্ত ভিটামিনের কুফলগুলো দেওয়া হলো। অতিমাত্রায় ভিটামিন এ: পানিতে সহজেই মিশে যায় বলে শরীর বাড়তি ভিটামিন 'এ' সংরক্ষণ করে রাখতে পারে, বিশেষত যকৃতে। এতে এলার্জি হতে পারে, ফুলে যেতে পারে মুখ, ঠোঁট, জিহবা কিংবা গলা। পাশাপাশি 'ইন্ট্রাকরানিয়াল প্রেসার' মানে মাথায় খুলির ভেতরের অংশে চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, মাথা ঘোরা, বমিভাব, হাড়ের জোড়ায় ব্যথা, এমনকি অচেতন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। অতিমাত্রায় ভিটামিন সি: এটিও পানিতে সহজে দ্রবণীয়। অতিরিক্ত ভিটামিন সি'র কারণে ডায়রিয়া, বমিভাব ও বমি, মাথাব্যথা, বৃক্কে পাথর, অনিদ্রা, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিমাত্রায় ভিটামিন ডি: চর্বির সঙ্গে দ্রবণীয় ভিটামিন ডি। অতিরিক্ত মাত্রা খাওয়ার রুচি কমিয়ে দিতে পারে। পানিশূন্যতা, বমিভাব, মাংসপেশি দুর্বল হওয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদিও হতে পারে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক রয়েছে। অতিমাত্রায় ভিটামিন ই: এই ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ক্লান্তি বাড়ে, মাথাব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি হয়। দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হওয়া এবং প্রচন্ড পেট ব্যথাও হতে পারে। এ ছাড়াও আছে মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। অতিমাত্রায় ভিটামিন কে: শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন কে' থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো যকৃতের আকার বৃদ্ধি পাওয়া, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীর ফুলে যাওয়া, নড়াচড়ায় সমস্যা, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। অতিমাত্রায় ভিটামিন বি ওয়ান: পেট খারাপ হওয়ার জন্য দায়ী। এলার্জিও দেখা দিতে পারে, তবে এমনটা খুব কম হয়। এ ছাড়াও ঠোঁটে নীলচে রং দেখা দিতে পারে এবং হাঁসফাঁস লাগতে পারে। অতিমাত্রায় ভিটামিন বি টু: এই ভিটামিনের অপর নাম 'রিবোফ্লাভিন' যার কারণে প্রসাবের রং হলদে হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ডায়রিয়া ও ঘন ঘন প্রসাব হতে পারে। কিছু এলার্জির সমস্যা যেমন- চেহারা, ঠোঁট ও জিহ্বা ফুলে যেতে পারে। অতিমাত্রায় ভিটামিন বি থ্রি: ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় 'নিয়াসিন'। শরীরে এর অতিরিক্ত মাত্রা চুলকানি, তলপেটে ব্যথা, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, গেঁটেবাত, ডায়রিয়া, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি সমস্যার কারণ হতে পারে। অতিমাত্রায় ভিটামিন বি সিক্স: ভিটামিন বি সিক্স বা 'পাইরিডক্সিন' অতিরিক্ত গ্রহণেরও রয়েছে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেমন পায়ের তলায় অসাড়তা কিংবা হাত কাঁপা। স্পর্শ, তাপ ও কম্পন অনুভব করার ক্ষমতাও কমে যেতে দেখা যায়। শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, নিজেকে টালমাতাল লাগতে পারে। অতিমাত্রায় ভিটামিন বি টুয়েলভ: বাহু, হাত ও মুখে অসাড়তা দেখা দিতে পারে এই ভিটামিনের অতিরিক্ত মাত্রায়, 'অপটিক নার্ভ' বা মস্তিষ্ক থেকে চোখে সংযোগকারী স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত ভিটামিন বি টুয়েলভ প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিমাত্রায় ফোলেট: ভিটামিন বি নাইন বা ফোলেট শরীরে বেশি থাকলে পাকস্থলীতে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়াও আছে ত্বকের সমস্যা ও ঘুমের সমস্যার আশঙ্কা। অতিমাত্রায় বায়োটিন: ভিটামিন বি সেভেন'য়ের অপর নাম বায়োটিন। এই ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, এ ছাড়াও হতে পারে অস্বাভাবিক ঘাম। হালকা বমিভাব, পেটব্যথা ও ডায়রিয়াও হতে পারে। প্রতিটি মানুষেরই দৈনিক ভিটামিন চাহিদায় তফাত রয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, প্রত্যেকের ভিটামিন চাহিদা হবে একে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই যে কোনো ভিটামিন সাপিস্নমেন্ট গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। য় সুস্বাস্থ্য ডেস্ক