শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ঙ্কর ৭ ভাইরাস

সেই আদিকাল থেকে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে যে ক্ষুদ্র দানব, তার নাম 'ভাইরাস'। লাতিন শব্দ 'ভাইরাস'-এর অর্থ 'বিষ'। আবার মানুষ এ 'বিষ'কে মানবকল্যাণেও কাজে লাগাচ্ছে ইদানীং। তবে এটা নিশ্চিত যে, এই ভয়ঙ্কর ক্ষুদ্র দানবদের পুরোপুরি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপে বন্দি করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের আছে ভয়ঙ্কর মারণক্ষমতা। শুধু বিশ শতকেই গুটিবসন্তে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের।
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ১৮ মার্চ ২০২০, ০০:০০

সেই আদিকাল থেকে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে যে ক্ষুদ্র দানব, তার নাম 'ভাইরাস'। লাতিন শব্দ 'ভাইরাস'-এর অর্থ 'বিষ'। আবার মানুষ এই 'বিষ'কে মানবকল্যাণেও কাজে লাগাচ্ছে ইদানীং। তবে এটা নিশ্চিত যে এই ভয়ঙ্কর ক্ষুদ্র দানবদের পুরোপুরি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপে বন্দি করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের আছে ভয়ঙ্কর মারণক্ষমতা। শুধু বিশ শতকেই গুটিবসন্তে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের। প্রথম কে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা জানা না গেলেও এ পৃথিবীর সর্বশেষ আক্রান্ত ব্যক্তিটি ছিলেন আমাদের বাংলাদেশের রহিমা বানু। বর্তমানে এই দানবটিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। আরেকটি বিভীষিকার নাম স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ হারায় পাঁচ থেকে দশ কোটি মানুষ- যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ।

পৃথিবীতে জানা-অজানা বহু ভাইরাস আছে। এর মধ্যে ছয়টি ভাইরাসকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সে ছয়টি ভাইরাসের সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস।

ইবোলা ভাইরাস

এ পর্যন্ত ঘাতক ভাইরাসের শীর্ষে আছে ইবোলা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এর ছয়টি প্রকরণ শনাক্ত করা গেছে। প্রকরণভেদে ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণে মৃতু্যর হার ২৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রম্নত চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে তাকে বাঁচানো সম্ভব। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা যায় ১৯৭৬ সালে। একই সঙ্গে নাইজার, সুদান, ইয়াম্বুকু ও রিপাবলিকান কঙ্গোতে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে ইবোলা মহামারিতে আফ্রিকার পশ্চিমাংশের দেশগুলোতে ১১ হাজার ৩৩৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ২০১৯ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ইবোলা ভাইরাসে ২ হাজার ৯০৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় এবং এদের মধ্যে ১ হাজার ৯৫৩ জন প্রাণ হারায়। আজ পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো কার্যকর প্রতিষেধক তৈরি করা যায়নি। ইবোলা ভাইরাস সংক্রামিত মানুষের রক্ত, লালা বা যে কোনো নিঃসৃত রস থেকে কিংবা শরীরের ক্ষতস্থানের মাধ্যমে অপরের শরীরে সংক্রামিত হয়ে থাকে।

রেবিজ ভাইরাস

রেবিজ ভাইরাস নিউরোট্রপিক অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে রোগটি হয়, তার নাম জলাতঙ্ক। প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর পুরো পৃথিবীতে জলাতঙ্কের আক্রমণে প্রাণ হারায় ৫৯ হাজার মানুষ। সংক্রামিত প্রাণীর লালায় রেবিজ বা জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস বিচরণ করে। সেসব প্রাণী মানুষকে কামড় দিলে মানুষ সংক্রামিত হয়। কার্যকর ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে সময়মতো ভ্যাকসিন না দেওয়ার কারণে জলাতঙ্কের আতঙ্ক থেকে এখনো মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না।

ভাইরাসটি সরাসরি মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে। সময়মতো টিকা না দিতে পারলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতু্য অবধারিত। মস্তিষ্কে রেবিজ ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখনই রেবিজের লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকে। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তীব্র খিঁচুনি ও পক্ষাঘাতে রোগীর মৃতু্য হয়।

এইচ৫ এন১ (ঐ৫ ঘ১) রূপান্তরিত

এবং মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস

এই ভাইরাসটি মিউট্যান্ট। ডাচ ভাইরোলজিস্ট রন ফুচিয়ে গবেষণাগারে বার্ড ফ্লু ভাইরাসকে রূপান্তরিত করেন। এ ভাইরাসটি মারাত্মক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ভীষণ বিপজ্জনক বিধায় ২০১১ সালে আমেরিকান বায়োসফটি এজেন্সি (এনএসএবিবি) এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। গবেষকরা আশ্বস্ত করেছেন, এই দানব ভাইরাসটির স্থান হয়েছে গবেষণাগারের অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রকোষ্ঠে। সেখান থেকে পালানোর কোনো পথ খোলা নেই। এমনিতেই সাধারণ বার্ড ফ্লু ভাইরাসের মারণক্ষমতা ৬০ শতাংশের ওপরে। এরপরও উচ্চ মারণক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাইরাসটি নিজে থেকেই ভোল পাল্টাতে অর্থাৎ রূপান্তরিত হতে পারে। সে জন্য এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিশেষ বেকায়দায় আছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের মৃতু্যর জন্য মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা দায়ী। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এই মৌসুমে তিন কোটির বেশি মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ ভাইরাসে ফ্রান্সে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে প্রাণ হারিয়েছে ৮ হাজার ১০০ জন।

মারবুর্গ

জার্মানির একটি শহরের নামে এই ফিলোভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। যদিও এটি ইবোলা ভাইরাসের চেয়ে কম মারাত্মক। তবে এ দুটি ভাইরাসের অনেক মিল আছে। উচ্চ মারণক্ষমতা অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ এ ভাইরাসে মারা যায়। মারবুর্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পঞ্চম বা সপ্তম দিনে সংক্রামিত ব্যক্তির প্রচন্ড জ্বর এবং সেই সঙ্গে রক্তবমি, মলের সঙ্গে রক্ত, নাক, দাঁতের মাড়ি এবং যোনিপথে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহ অসুস্থতার পরে পুরুষদের মধ্যে অর্কিটিস নামক অন্ডকোষের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। আশার কথা, এ ভাইরাস খুব সহজে সংক্রামিত হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশার কারণে তার মল, প্রস্রাব, লালা বা বমির মাধ্যমে মারবুর্গ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

ডেঙ্গু

ডেঙ্গুর আরেকটি নাম আছে, তা হলো 'ট্রপিক্যাল ফ্লু'। এডিস মশার কামড় দ্বারা সংক্রামিত হয় ডেঙ্গু। অন্যান্য ভাইরাসের চেয়ে কম বিপজ্জনক। ডেঙ্গু ভাইরাস সাম্প্রতিককালে ইউরোপেও হানা দিয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৪১টি দেশে আনুমানিক ৩৯ কোটি ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে প্রায় পাঁচ লাখ ব্যক্তি মারাত্মক রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রাণ হারায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

এইচআইভি বা এইডস ভাইরাস

এই ভাইরাসটি পোষক কোষে আট থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। সক্রিয় হয়ে উঠলে পোষক দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিকল করে দিয়ে তাকে মৃতু্যর মুখে ঠেলে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, এইডস মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ এইচআইভিতে মারা গেছে।

১০ মার্চ, ২০২০, ব্রিটিশ মেডিকেল বৈজ্ঞানিক জার্নাল ঞযব খধহপবঃ খবর দিয়েছে, এইডসে আক্রান্ত একজন ব্রিটিশ ব্যক্তির অস্থিমজ্জকোষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তাকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তিনি হচ্ছেন- দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাকে এইডসের কবল থেকে মুক্ত করা গেছে। এইডসের মোকাবিলায় এটি একটি উলেস্নখযোগ্য সাফল্য।

নভেল করোনা (ঈড়ারফ-১৯)

ইদানীং যে ভাইরাসটি সারা বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে, তা হলো করোনাভাইরাসের একটি প্রকরণ নভেল করোনা (ঈড়ারফ-১৯)। এ পর্যন্ত যে তথ্য আমাদের হাতে আছে, তাতে দেখা যায়, এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১০০ জনে প্রাণ হারিয়েছে ৪ জনের কম ব্যক্তি এবং অর্ধেকের বেশি ইতোমধ্যে সেরে উঠেছে। করোনা নামের ভাইরাসের নতুন রূপটি এখনো পুরোপুরি উন্মোচন হয়নি। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন এর মতিগতি বুঝতে এবং উঠেপড়ে লেগেছেন এর প্রতিষেধক উদ্ভাবনের। এ ব্যাপারে প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের গবেষকরা অচিরেই বিশ্ববাসীকে সুখবর দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<92965 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1