শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অণুগল্প হায়েনা

মো. মাঈন উদ্দিন
  ০৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

তিন রাস্তার মোড়ে একটি টং দোকানের মালিক মতিন চাচা। এক ছেলে জন্মের পরপরই মারা গেছে। এরপর তিনটি মেয়ে ঘরে এসেছে মতিন চাচার। মেয়ে তিনটিকে অতি কষ্টে লালন-পালন করে বিয়ে দিয়েছেন। মতিন চাচার একটি পা কাটা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখ যুদ্ধে মতিন চাচা কোনো রকমে প্রাণে বাঁচলেও তার পায়ে গুলি লাগে। পায়ে নালী ধরায় ডাক্তারের পরামর্শে তার পা হাঁটু হতে কেটে ফেলতে হয়। সরকারের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং টং দোকানের সামান্য আয়ে কোনো রকমে তার সংসার চলে। মতিন চাচা আজ সাত-সকালেই হাতলে ভর করে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত। পাকা চুল-দাড়িওয়ালা লম্বা-চওড়া গড়নের মানুষ মতিন চাচা। যিনি সর্বদা হাসি-খুশি থাকতে ভালবাসেন। কিন্তু এই হাসি-খুশি মানুষটার মুখে আজ হাসি নেই। খুব বিচলিত লাগছে তাকে। এমন বিচলিত মতিন চাচাকে আর কখনো দেখা যায়নি। কাঁধে একটা গামছা আর পরনে লুঙ্গি, যেন কোনো কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত তিনি। আমি তাকে সালাম দিলাম। তিনি মলিন মুখে সালামের জবাব দিলেন। আমি জানতে চাইলাম-চাচা ভালো আছেন? তিনি কোমল স্বরে বললেন, তেমন ভালো নেই বাবা। তা তোমার বাবা বাড়ি আছেন? আমি উত্তর দিলাম- বাবা গতকাল বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে গেছেন। আজ বিকালে সম্ভবত ফিরবেন। বসার জন্য চেয়ার দিয়ে আবারও জানতে চাইলাম- চাচা আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কোনো সমস্যা? তার মলিন মুখটা আরো মলিন হয়ে গেল। তিনি বললেন, না বাবা, বসব না। একটা বিপদে পড়ে তোমার বাবার কাছে এসেছিলাম। আমি আগ্রহ ভরে প্রশ্ন করলাম- কি বিপদ? তিনি ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বললেন, গত রাত্রে আমার দোকানের তালা ভেঙে কে বা কারা সব মাল চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি আশ্চর্য হলাম- কি বলেন চাচা! তিনি গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে আক্ষেপ করে বললেন- হে বাবা, তোমার বাবার সঙ্গে একই ইউনিটে যুদ্ধ করেছিলাম। ভেবেছিলাম এ দেশের মানুষ সবাই ভাই ভাই হয়ে বসবাস করব। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাব। আসলে নয় মাস যুদ্ধ করে পাকিস্তানি হানাদারদের এ দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পেরেছি কিন্তু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো অনেক আগাছা হায়েনার মত ওতপেতে রয়েছে- যা আজও নির্মূল করতে পারিনি। আমি নির্বাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।

সদস্য, জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম, ময়মনসিংহ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে