রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শীত

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

হাসিবুল আহমেদ
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিলে অতিথি পাখির আনাগোনা কিংবা সর্ষে ফুলের হলদে ক্যানভাস দুলে ওঠা হিমেল হাওয়া অথবা নতুন খেজুরের রসে বানানো পায়েস আর পিঠা-পুলির ম-ম গন্ধ মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতিতে শীতের আগমন। আবহমান কাল থেকেই বাংলায় শীত আসে এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য নানা ভোগান্তি নিয়ে। কবিতায় ফুটে উঠে জীবনের আবেগ। তাই কবিরা কবিতার মধ্য দিয়ে করেছেন আপন মনের ভাব বিনিময়। বাংলা কবিতায় শীতের বহুমাত্রিক রূপ অঙ্কিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের হাতে। শীতের মিষ্টি অনুভূতি যেমন পাওয়া যায় তার কবিতায়, তেমনি পাওয়া যায় দার্শনিক উপলব্ধি। শীতের স্পর্শে কবিচৈতন্য লেগেছে প্রেমের শিহরণ- শীতের আবহ কবিকে করেছে উন্মনা ও আকুল- ডেকেছো আজি, এসেছি সাজি, হে মোর লীলাগুরু- শীতের রাতে তোমার সঙ্গে কী খেলা হবে শুরু! ভাবিয়াছিনু গতিবিহীন \হগোধূলিছায়ে হলো বিলীন পরাণ মম, হিমে মলিন আড়ালে তারে হেরি? উত্তরবায় কারে জাগায়, কে বুঝে তার বাণী- অন্ধকারে কুঞ্জদ্বারে বেড়ায় কর খানি। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/'উদ্বোধন') শীতের ভয়ংকর রূপের ছবিও পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, যেমন দেখি 'বোধন'-এ- নির্মম শীত তারি আয়োজনে এনেছিল বনপারে, মার্জিয়া দিল শ্রান্তি ক্লান্তি- মার্জনা নাহি করে। জ্ঞান চেতনার আবর্জনায় পান্থের পথে বিঘ্ন ঘনায়, নবযৌবন দূতরূপী শীত দূর করি দিল তারে। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/'বোধন') কবি দুদিনের জন্য বিদেশে গিয়ে এ দেশের শীতকে উপলব্ধি করেছেন খুব ভালো করেই। বিদেশে থাকলেও শীতকে ভীষণভাবে অনুভব করেছেন। ইচ্ছা পোষণ করেছেন যাতে আরেকটি বারের জন্য হলেও তিনি শীতের আবহ পান। তাই 'দুই দিন' কবিতায় লিখেছেন: 'আরম্ভিছে শীতকাল, পড়িছে নীহার-জাল, শীর্ণ বৃক্ষশাখা যত ফুলপত্রহীন; মৃতপ্রায় পৃথিবীর মুখের উপরে বিষাদে প্রকৃতিমাতা শুভ্র বাষ্পজালে গাঁথা কুজ্ঝটি-বসনখানি দেছেন টানিয়া; পশ্চিমে গিয়েছে রবি, স্তব্ধ সন্ধ্যাবেলা, বিদেশে আসিনু শ্রান্ত পথিক একেলা।'