র ম্য গ ল্প

অতি সাহসী গেদু চাচা!

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মো. মাঈন উদ্দিন
রাকিব চায়ের কাপে ফুঁ দিয়ে প্রথম চুমুক দিল। চা খাওয়ার 'ফ্রৎ' শব্দ শুনে পাশে বসা গেদু চাচা আড়চোখে তাকালেন। চোখ দুটি গোল গোল করে বললেন, 'তোমাদের সাহস দেখে লজ্জায় মরি। চায়ের কাপে চুমুক দিতেও এত ভয় পাও তোমরা? অথচ তোমাদের মতো জোয়ান বেলা এক চুমুকে এক কাপ চা সাবাড় করে দিতে পারতাম। কীসের গরম, কীসের কী!' রাকিব টেবিলের ওপর চায়ের কাপ রেখে বলল, 'গেদু চাচা, আপনি তো দেখছি ভীষণ সাহসী, কিন্তু শুনলাম, গতকাল নাকি টায়ার ফাটার শব্দে হার্ট ফেল করেছিলেন!' গেদু চাচা ডানে-বামে তাকালেন। বললেন, 'সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আর বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণ দর্শানো যায় না।' তিনি দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বললেন, 'এখনো বেটা আমাকে দেখলে বাঘ দৌড়ে পালায়।' রাকিব চায়ের কাপে আরেকটি চুমুক দিয়ে বলল, 'কিন্তু চাচা, লোকে বলে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধে যাওয়ার ভয়ে আপনি নাকি আত্মগোপনে ছিলেন?' গেদু চাচা আমতা আমতা করে বললেন, 'ওটাও একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আসলে, অন্যায় দেখলে আমার রক্ত টগবগ করে ওঠে। নির্যাতিত ও অসহায় মানুষদের বাঁচাতে ৭১ সালে তিন তিনবার ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। ভাবছিলাম মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ব। ডজন ডজন পাকি খতম করব। বেটা, মৃতু্যকে আমি ভয় পায় না; কিন্তু বিভিন্ন বাধাবিপত্তির কারণে যাওয়া হয়নি। শুভ কাজে বাধা পড়লে কি করে যাই বলো?' রাকিব বলল, 'কী রকম বাধা পড়ল, একটু খোলে বলবেন চাচা?' গেদু চাচা কপাল কুঁচকালেন। বললেন, 'তবে, শোনো, প্রথম যেদিন রওনা দিলাম। ঘর থেকে বের হতে যাব- হঠাৎ করে ঘরের চৌকাঠে উষ্ঠা খেলাম। শুভ কাজে উষ্ঠা খাওয়া মানে কি জানো? শুভ কাজে ওষ্ঠা খাওয়া মানে যাত্রা অশুভ। এ কারণে প্রথমবার যাত্রা ভঙ্গ হলো। দ্বিতীয়বার যখন রওনা দিলাম। উঠানের দেউড়ি পার হয়ে গেছি এমন সময় তোমার চাচি পেছন থেকে ডাক দিল- এই শোনো। আমি রেগে বললাম- কী হয়েছে, ডাকছো কেন? সে বলল- তুমি তো বেল্ট পরোনি। দেখলাম সত্যিই বেল্ট ছাড়া প্যান্ট পরেছি। তুমি জানো কি-না, জানি না। শুভ যাত্রায় বউ পেছন থেকে ডাকলে যাত্রা অমঙ্গল হয়। বিপদ আসে।' রাকিব গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। এবার সে বলল, 'আর তৃতীয়বার?' গেদু চাচা বললেন, 'তৃতীয়বার যখন রওনা দিলাম তখন খুব সাবধানে সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম, যাতে কোনো বাধা পড়তে না পারে। বাড়ি হতে বের হলাম। প্রায় একশো গজ চলে আসার পর আবার বা....ধা।' রাকিব গেদু চাচার মুখের কথা টেনে নিয়ে কৌতূহলী হয়ে বলল, 'এবার কী রকম বাধা এলো?' গেদু চাচা বললেন, 'এবার হঠাৎ করেই পেটটা মুচড় দিয়ে উঠল। সঙ্গে প্রচন্ড ব্যথা। বাধ্য হয়েই ফিরে এসে টয়লেটে ঢুকতে হলো। শুরু হলো পাতলা পায়খানা। সেবার সাত দিন, সাত রাত হাসপাতালে কাটাতে হলো।'