আফীফার খুব কান্না পাচ্ছে। সে খুব চেষ্টা করছে চোখের পানি আটকানোর। এ জগতে কঠিন কাজের একটা হলো চোখের পানি আটকে রাখা। এই মুহূর্তে বাড়িতে থাকলে এই কঠিন কাজটি করতে হতো না। বাথরুমের দরজা লাগিয়ে ট্যাপের পানি ছেড়ে কাঁদতে পারত। পানি পড়ার শব্দে কান্নার শব্দ মিশে যেত; কেউ টের পেত না। কান্নার জন্য বাথরুম হচ্ছে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জায়গা। এজন্য আফীফা এ ঘরের আরেকটা নাম দিয়েছে কান্নাঘর। রাস্তায় কান্নাকাটি করা যায় না। কোনো সুন্দরী মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে- লোকজন দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবে। এমনিতে ফুলের দোকানগুলো থেকে ড্যাব ড্যাব চোখে কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে। সে আর তানভীর দাঁড়িয়ে আছে শাহবাগ মোড়ের ফুলের দোকানগুলোর সামনে।
তানভীর বলল, 'দেখ এখানে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করবে না। আমি রিকশা ডেকে দিচ্ছি, সোজা বাসায় চলে যাও।'
আফীফার গলা বুজে এসেছে। সে খুব কষ্টে বলল, 'রিকশা ডাকতে হবে না, আমি একাই যেতে পারব।'
বলেই সে লক্ষ্য করল তার গলা দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না। তানভীর একটা খালি রিকশা হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়েছে। আফীফা রিকশায় উঠবে- এমন সময় ফুলের দোকানগুলো থেকে আট-নয় বছরের একটি মেয়ে ফুলহাতে দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়াল।
আফা ফুল নেবেন? বসন্তের ফুল।
আফীফা কিছু বলার আগেই তানভীর ফুল বিক্রেতা মেয়েটিকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিল।
বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দিত মুখে মা এসে দাঁড়ালেন সামনে। বললেন, খুব ভালো একটা খবর আছে। তোর বড় ফুপু ফোন করেছেন একটু আগে। তানভীর বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। আজ সকালে তোর ফুপু নিজে গিয়ে মিরপুরের মেয়েটাকে দেখে এসেছে। এই মেয়ের সঙ্গে তানভীরের চার মাস সম্পর্ক চলছে। দুজনেরই যখন পছন্দ এখন বিয়ে তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়া ভালো। তোর চোখ-মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন রে আফীফা? রোদ থেকে ফিরেছিস বাথরুমে ঢুকে পড়। হাতমুখ ধুয়ে আয়, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
মা না বললেও আফীফা এখনই বাথরুমে ঢুকতো। এই মুহূর্তে বাথরুমে যাওয়া তার খুব দরকার। দরজা লাগিয়েই সব কয়টি পানির টেপ সে ছেড়ে দিল। খুব কেঁদে উঠল। তিন বছর সম্পর্কের পর তানভীর আজ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে- মামাত বোন বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না। ট্যাপ থেকে পানি পড়ার শব্দকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে কান্নার শব্দ। আফীফার সমস্ত দুঃখের শব্দ বন্ধ করার ক্ষমতা কি এই সামান্য ট্যাপের আছে?
এই কান্না ঘরটাকে আফীফার এখন অনেক আপন মনে হতে লাগল।
সদস্য জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম
নবাবগঞ্জ, ঢাকা।
Copyright JaiJaiDin ©2021
Design and developed by Orangebd