বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
র ম্য গ ল্প

দিলিস্নকা লাড্ডু

মো. মাঈন উদ্দিন
  ০২ মার্চ ২০২১, ০০:০০

দিলিস্নকা লাড্ডু, খাইলেও পস্তাইতে হয়, না খাইলেও পস্তাইতে হয়। আমাদের গলির লাল মিয়ার অবস্থাটা হয়েছে ঠিক এ রকমই। সদ্য বিয়ে করেছে লাল মিয়া। মাথায় রাখলে উকুনে কামড়ায়, মাটিতে রাখলে পিঁপড়ায় কামড়ায়, তাই সুন্দরী বউকে কোথায় রাখবে ভেবে কূল পায় না লাল মিয়া। কিন্তু সমস্যা একটাই- বউটার বায়না একটু বেশি, এই যা! গতকাল নিশিরাত্রে তার বউ গলায় ধরে আদুরি কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, 'এই, চলো না, বাণিজ্যমেলা থেকে ঘুরে আসি।' কথাটা শুনে খানিকক্ষণ ঝিম মেরে শুয়ে ছিল লাল মিয়া। হঠাৎ যেন তার শরীরের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেল, হৃৎস্পন্দন থেমে গেল। এই সপ্তাহের শুরুতেই সে বউকে নিয়ে এক লঘু ভ্রমণে গিয়েছিল। সেখানে বউয়ের পাহাড় সমান বায়না পূরণ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে পুরো পকেট ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সে দেউলিয়া। খালি পকেট নিয়ে চলাফেরা করছে। এখন বাণিজ্যমেলায় যাওয়া মানে ঋণ করে নিশ্চিত ঋণখেলাপি হওয়া। লাল মিয়া নিশ্চল ভেটকি মাছের মতো হা করে শুয়ে আছে দেখে বউ তার নাক-মুখে হাত ঘুরাল। পরখ করে দেখল বায়ু চলাচল স্বাভাবিক আছে কিনা। বউ এবার বলল, 'কি গো, কোমা না কমা কি জানি কয়, তুমি ওখানে চলে গেলে না কি?' 'নতুন বউয়ের বায়না, ফেলে দেয়া যায় না'- মর্মে লাল মিয়া রাজি হলো, কিন্তু টাকা কি করে ম্যানেজ হবে, এই চিন্তায় তার অর্ধ-জাগ্রত নিশি কাটল। পরের দিন ধারকর্জ করে লাল মিয়া চলেছে বাণিজ্যমেলায়। বউ যদিও বলেছে, 'দেখো, আমি একটা আইটেমের বেশি কিনব না।' তথাপিও লাল মিয়া ধরে নিয়েছে- এই কথাটি কথার কথা। মেলায় গিয়ে বউ যখন একটার পর একটা আইটেম কিনছে আর বলছে, 'এইটাই শেষ আইটেম।' তখন লাল মিয়ার চোখে ইংরেজ কবি ডাবিস্নউ এস মম'র 'লাঞ্চন' গল্পটির কাহিনি ভেসে উঠছিল। সে শুকনো হেসে বলল, 'দ্যাট'স ওকে।' বউ লাল মিয়ার চোখে চোখ রেখে গোলাপী ঠোঁট দুটি যথাসম্ভব প্রসারিত করে হাসল। বলল, 'আচ্ছা, তোমার হাসিটা এমন কান্নার মতো লাগছে কেন? তোমার আবার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে না তো?' লাল মিয়া জিহবা দিয়ে এক দলা থুথু ঠোঁটে মেখে বলল, 'না মানে শীতে ঠোঁট ফেটে গিয়েছে তো, তাই হাসিকেও কান্নার মতো লাগছে। দ্যাট'স ওকে।' বাণিজ্যমেলা থেকে ফিরে লাল মিয়া সোজা টয়লেটে ঢুকল। জমে থাকা মনের কষ্টগুলো চোখের জল হয়ে গড়িয়ে চলল গাল বেয়ে। লাল মিয়া সেই জল রুমাল দিয়ে মুছে ফিসফিস করে বলল, 'কোন কৃতকর্মের ফলে যে এমন একটা বউ আমার কপালে জুটল! বউ তো নয় যেন আদিমকালের ডাইনোসর একখান। বউ পাশের বাসায় গেল আর ফিরে এলো। বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল লাল মিয়া। 'একি বউয়ের মুখ যেন পাকা কাঁঠাল। সে ভয়ে ভয়ে বলল, 'কি ব্যাপার, তোমার ইচ্ছে মতো সবই তো কিনে দিলাম আবার মুখ ফোলা কেন? বউ গদগদ করে বলতে লাগল, 'বাণিজ্যমেলা থেকে পাশের বাসার ভাবি কি সুন্দর একখান ডল কিনে এনেছে। তার ডলের কাছে আমার সব গহনার সৌন্দর্য ম্স্নান হয়ে গেছে। তুমি আমাকে এরকম একখান ডল কিনে দিতে পারলে না! তোমার কাছে এতসব জিনিস কে চাইছিল শুনি?' লাল মিয়া মনের দুঃখে আবার ছোট রুমে (টয়লেটে) ঢুকে বড় শ্বাস ছেড়ে বলল,

'বড়ই রহস্যময় আজব এ নারীর মন,

যেন কচুপাতার পানি, সুখের ক্ষণ।'

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে