লোভী

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

আজম সিদ্দিক রুমি
এক রাজার বাগান ছিল। বাগানে অনেক পাখি ছিল। শালিক পাখি বাগানের গুরুত্বপূণর্ একজন। যে কোনো মিটিং হোক, শালিক পাখির তলব। আসতে হয় নইলে রাজাপাখি বড় কষ্ট পায়। সেই কষ্ট লাঘব করার জন্য হলেও রাজ দরবারে ঢুঁ মারা লাগে । শালিক পাখি ভালো মনের, বড় উদার। কেহ আঘাত পেলে, বিপদে পড়লে। চরম সহানুভ‚তিশীল। উদ্ধার করার জন্য হৃদয় উৎসুক। যে কোনো সময় যে কোনো প্রয়োজনে শালিক পাখি হাজির। এ জন্য শালিক পাখি সবার দৃষ্টি কাড়ে। রাজাপাখি শালিক পাখিকে উত্তম ব্যবহারের জন্য হিরের আংটি উপহার দিয়েছে। বিশ্বস্ত হওয়ায় প্রাইভেট সহ-সেক্রেটারি নিযুক্ত করেছে। এ থেকে সবাই চাই, শালিক পাখির মতো হতে। শালিক পাখির আনন্দ কে ধরে। খুশিতে টইটম্বুর। নেচে নেচে গানে গানে সারাদিন চলে। সময়ের পরিক্রমায় রাজাপাখির খুব কাছের একজন হয়ে যায় শালিক পাখি। শালিক পাখির এখন অনেক দায়-দায়িত্ব। নিয়ম করে অফিস আসতে হয় যেতে হয়। ২ এর মাঝেই কাক মহাদয়ের আগমন। দশ দিন থেকে তিনি রেস্টে ছিলেন। অনেক কাজের চাপ। ছুটি না নিয়ে চলে গেছে অসুখও ছিল বটে। তাই রাজাপাখি কাক মহাদয়কে কিছু বলেননি। সব ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাজাপাখির মনটাও খুব উদার। যেহেতু কাক মহাদয় সেক্রেটারি। সেহেতু তার প্রতি শালিক পাখির বড় রিসপেক্ট। যখন যেভাবে হুকুম করে ঠিক সেভাবে শালিক পাখি নিজ কতর্ব্য পালন করার চেষ্টা করে। অল্প সময়ের মধ্যে কাক মহাদয়ের প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠে। ঠিকঠাক চলছে সব। শালিক পাখির সহ-সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত হওয়া এক বছরের মাথায়। কিন্তু শালিক পাখির ইদানীং কেমন যেন মনে হয়। কাক মহাদয়কে আর পছন্দ হয় না। আজকাল একটু লোভের বসে বিভিন্ন ক্রাইমে জড়িয়ে পড়েছে। যা রাজাপাখি জানলে একবারে চাকরি নট করে দেবেন। সাথে চরম শাস্তিও দেবেন। শালিক পাখি একজন সৎ ও দক্ষ কমর্কতার্। তার মাঝে জবাবদিহিতায় কোনো ভুল খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু কাক মহাদয়ের অনেক সমস্যা থাকে। শালিক পাখি প্রায় সমাধান করে দেয়। সে জন্য বারবার বেঁচে যায়। শালিক পাখি মনে মনে ভাবে। বিষয়টি রাজাপাখির কানে দেব। না না রাজাপাখির কানে গেলে হয়তো প্রিয় বন্ধুর চাকরি চলে যাবে। পরিবার পরিজনকে নিয়ে কেমন করে থাকবে সে। পথে পথে ঘুরবে তখন। ধৈযর্ ধরি আপনাআপনি যদি ঠিক হয়ে যায়। এ ভেবে সব কিছু গোপন রাখল। ৩ একদিন রাজাপাখি কাক মহাদয়কে মোটা অংকের অথর্ রাখতে দিলেন। সেই অথর্গুলো অনায়াসে খরচ করে। আর চালাকি করে শালিক পাখির সিক্রেট ডয়ারে কিছু রেখে দিয়েছে। এটা শালিক পাখি জানতো না। রাজাপাখির জরুরি তলব। কিছু অথর্ প্রয়োজন। দ্রæত কাক মহাদয়কে ডাক। ডাকা হলো কাক মহাদয় হাজির। রাজাপাখি অথর্ চাইতে, বলে উঠে গম্ভীর কণ্ঠে অথর্সব লুট হয়ে গেছে আমার ডয়ার থেকে। কি বলো কাক মহাদয়? জি রাজাপাখি আপনাকে বিষয়টা আরা আগে অবগত করা উচিত ছিল। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। কেন? -জ্বি হুজুর -কাক মহাদয় ঠিক বলেছেন। -কারণ আমি সাক্ষী, আপনার বিশ্বস্ত শালিক পাখি। এমন কাজটি করেছে। তার খুব লোভ রাজাপাখি আপনি জানেন না। আমরা পরিলক্ষিত করি নিত্যদিন। কি বলো এসব? না এমন হতে পারে না তোমাদের ভুল হচ্ছে কোথাও ভালো করে দেখো। না রাজাপাখি আমি স্বচক্ষে দেখেছি লুট করতে। ডেকে আনো শালিক পাখিকে। ডাকা হলো - জ্বি রাজাপাখি আমায় ডেকেছেন। হুম ; আমার বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে এত কিছু। কি বলছেন রাজাপাখি? আমি কি কোনো ভুল করেছি? রাজাপাখি বলল, শুধু ভুল ...? ভুল না। তুমি বড় অন্যায় করেছ বিশ্বাসঘাতক। কাক মহাদয়কে দেয়া অথর্ সব লুট করেছ। ছি! ছি! আস্তাগফিরুল্লাহ্ কি বলেন রাজাপাখি? শোনার সঙ্গে সঙ্গে শালিক পাখির পায়ের তলার মাটি দু’পাশে সরে গেল। আমি, হ্যঁা তুমি, না আমি লুট করিনি আপনি বিশ্বাস করুন। আর বিশ্বাস। তাহলে অথর্গুলো গেলো কোথায়। -ওপাশ থেকে, হুজুর অফিস রুম সাচর্ করা হোক। রাজাপাখি বললেনÑ হুম তাই করা হোক। শালিক পাখি বলল আচ্ছা বেশ, নিভের্য় সাচর্ করুন। সাচর্ করে ক্ষণিকের মধ্যে পেয়ে গেলো পুরো অথর্ই, যা শালিক পাখির সিক্রেট ডয়ার থেকে। বড়ই আহম্মক বেচারা। শালিক পাখির আর কিছুই বলার মতো ভাষা নেই। বুঝতে আর বাকি রইলো না। কাজটি প্রিয় বন্ধু কাক মহাদয়ের। বন্ধুর দিকে হাসিমুখে চেয়ে, হ্যঁা সূচক মাথা নড়ল। সবাই জেনে গেল শালিক পাখি লুটরাজ লোভী।