বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় বেলায় অশালীনতা মোটেই কাম্য নয়

নতুনধারা
  ২৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

বি দায় বেলা সবার ক্ষেত্রে এবং সব সময়ের জন্যই বেদনাদায়ক হয়। দীর্ঘ একটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্থান- কাল-পাত্রভেদে বাস্তবতার চরম সত্যের পালস্নায় দূরত্ব বেড়ে যায় ঠিকই- তবে মন পড়ে থাকে প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মায়া কখনো শেষ হয়ে যায় না বরং প্রতিমুহূর্তে বাড়ে। সেই মায়ার টানেই বারবার ফিরে আসা হয়। জীবনের প্রয়োজনে নিরন্তর ছুটে চলা একটুকু বিশ্রামের ফাঁকে পুরোনো দিনের স্মৃতি নাড়া দেয়। সেই স্মৃতি অবশ্যই সত্য সুন্দর হয়। সুন্দর স্মৃতির হাত ধরে ফিরে যাওয়া যায় পুরোনো দিনে। তবে হতাশার কথা হলো- আমরা সম্ভবত সেই সুন্দর স্মৃতি এবং দিন দুটোই হারাতে বসেছি। বিদায় অনুষ্ঠানের পরিবর্তে জায়গা করে নিচ্ছে তথাকথিত র?্যাগ ডে। যা চরম পর্যায়ের উচ্ছৃঙ্খলতা বললেও ভুল হবে না। গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন করা হচ্ছে তথাকথিত র?্যাগ ডে। যার বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ পর্যালোচনা করলে বলা যায়, ছেলেমেয়েদের বড় একটি অংশ আচরণগত সংকটে ভুগছে এবং চরম পর্যায়ের বেপরোয়া মানসিকতাকে নিয়ে বেড়ে উঠছে। ওই আয়োজন যে বছর চারেক পর সুন্দর স্মৃতি হিসেবে আর ধরা দেবে না, সে ব্যাপারে দেশের সুশীল চিন্তাচেতনার মানুষ অন্তত একমতই হবেন। এমনকি এমন আয়োজন যে সমাজের বিবেককে ইতোমধ্যে আঘাত করেছে; সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত। বাঙালির সভ্যতা সংস্কৃতির ইতিহাস যথেষ্ট সমৃদ্ধ এবং পুরোনো। ক্রমাগত দেশের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা আমাদের সভ্যতা এবং সংস্কৃতিকে প্রতিনিয়তই আঘাত করে যাচ্ছে। ভেবে দেখুন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম আমাদের সভ্যতা এবং সুন্দর সংস্কৃতি ছেড়ে নিজেদের মনগড়া অশালীন কিছু সংস্কৃতির চর্চা করছে; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে! আমার ধারণা, আমাদের আগামী প্রজন্ম একটি ভয়ানক সংস্কৃতির সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সেই দায়ভার অবশ্য আমাদেরই। আমরা যেন দেখেও দেখছি না, শুনেও শুনছি না। যা হচ্ছে হোক, আমার তাতে কি? এমন একটা অবস্থা। অথচ আমরা ভুলে যাচ্ছি আগামীর প্রজন্মকে একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব। আমাদের দেশে এসএসসি কিংবা এইচএসসি শিক্ষাক্ষেত্রের একেকটি ধাপ পার হলে সেই দীর্ঘ সময় নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে বিদায় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। আমাদের অভিভাবক এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলীর উপস্থিতিতে এমন আয়োজন হয়, এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু যা হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক হলেও কোনো এক অজানা কারণে সবাই তা স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করছে। এই গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতে আমাদের 'বাঙালিয়ানা' অস্তিত্ব সংকটের কারণ হবে, এ কথা মিথ্যে নয়। স্কুল এবং কলেজ জীবনের নানান স্মৃতির কথা বিদায় অনুষ্ঠানে ওঠে আসে। আমাদের অভিভাবকতুল্য শিক্ষকরা আমাদের নানান জীবনমুখী উপদেশ দিয়ে থাকেন। জীবন চলার পথে যা আমাদের সত্যিই সহযোগিতা করে। অতঃপর নীরব পরিবেশের মাঝে দোয়া মাহফিলের আয়োজন হয় আমাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হওয়ার আশায়। দিনের দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়। এক ধরনের চাপা কান্নার আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হওয়ার মাধম্যে বিদায় বেলার শেষ হয়। এমনটাই হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এসবের বালাই নেই। বরং তার পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে ছেলেমেয়েদের বাধাহীন রং মাখামাখি আর সাদা রঙের টি-শার্টে অশ্লীল ভাষার অসংখ্য বাক্য। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চোখ ফাঁকি দিয়ে হোটেল- রেস্টুরেন্ট ভাড়া করেও চলছে তথাকথিত র?্যাগ ডে। র?্যাগ ডে কিংবা বিদায় বেলা কখনোই অশালীন হতে পারে না। অথচ আধুনিকতার দোহাই দিয়ে এবং তথাকথিত সংস্কৃতি চর্চার অজুহাতে ঘটছে এসব লজ্জাজনক ঘটনা। এসব ঘটনাকে ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিচার করাটা আমাদের ভবিষৎকে আরো বেশি সংকটের মুখোমুখি করতে পারে। যে কোনো ছোটছোট ঘটনাই বৃহৎ অংশে রূপ নিতে পারে। তবে র?্যাগ ডের নামে দেশের নানান প্রান্তে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাকে মোটেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বলা যায়, ওই ঘটনাগুলো এক ধরনের আচরণগত অসুস্থতা। নিজেকে ভিন্নরূপে ফুটিয়ে তোলার এই ধরনের মানসিকতা এবং নোংরা প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করতে হবে। এখানে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সমান দায়িত্ব রয়েছে অভিভাবক সমাজেরও। ছেলেমেয়েরা কোথায় কীভাবে সময় কাটাচ্ছে, তা সম্পর্কে ধারণা রাখাটা বাবা-মায়ের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। একটি দেশের কিংবা রাষ্ট্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্টের ধারক এবং বাহক ওই অঞ্চলের সংস্কৃতি। দেশের সাংস্কৃতিক সংকট নিয়ে তাই অবহেলা করাটা কোনোভাবেই উচিত নয়।

মো. খসরু, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে