বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাওয়া না পাওয়ার ৪৩ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

নতুনধারা
  ২৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এটি। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৪টি বিভাগে ৮ জন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে পা রাখল ১৭৫ একরের এ বিদ্যাপীঠ।

বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে চালু রয়েছে ৩৪টি বিভাগ। রয়েছে ৩৯০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ১৫ হাজার ৩৮৪ ছাত্রছাত্রী এবং ৭৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ইসলাম শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় রেখে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখানে বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় অর্ধশত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ৫১৪ জন পিএইচডি এবং ৬৯৬ জন এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছে। বর্তমানে ২৯০ জন পিএইচডি এবং ২১৯ জন এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। সম্প্রতি অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন শিক্ষক স্থান পেয়েছেন।

শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অর্জনেও রয়েছে সফলতা। ক্রিকেট, টেনিস, অ্যাথলেটিক, বেডমিন্টন, চাকতি নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা অর্জন। দেশের ক্যাম্পাসভিত্তিক সবচেয়ে বড় শহীদ মিনার ইবি ক্যাম্পাসেই অবস্থিত। ক্যাম্পাসভিত্তিক সর্ববৃহৎ মসজিদও রয়েছে এখানে (নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ)। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রয়েছে স্মৃতিসৌধ এবং মুক্ত বাংলা ভাস্কর্য। রয়েছে ১২০০ আসন বিশিষ্ট সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান মিলনায়তন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিভাস্কর্য 'মৃতু্যঞ্জয়ী মুজিব', দৃষ্টিনন্দন মফিজ লেক, চিকিৎসা কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। মুক্তিযুদ্ধের ওপর বিস্তর জ্ঞান অর্জনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য রয়েছে আটটি হল। এর মধ্যে ৫টি ছাত্র হল এবং ৩টি ছাত্রী হল। ছাত্রদের জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, সাদ্দাম হোসেন হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, লালন শাহ হল, শেখ রাসেল হল এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শেখ হাসিনা হল, খালেদা জিয়া হল। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে বিশ্বদ্যালয়ের পরিবহণ পুলে ৪৩টি পরিবহণ রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি এসি কোস্টার গাড়িসহ বাস-মিনিবাস ২২টি, অ্যাম্বুলেন্স ২টি, পিক-আপ ২টি। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় এই আবাসন ও পরিবহণ সুবিধা অপ্রতুল।

৪২ বছরের প্রাপ্তির মাঝে রয়ে গেছে কিছু অপ্রাপ্তিও। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা পায়নি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল। ফলে ই-লার্নিং, গবেষণা ক্ষেত্র ও শিক্ষাবৃত্তিসহ অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ইবি আবাসিক উলেস্নখ থাকলেও ৪২ বছরে তা পূর্ণতা পায়নি। প্রতি বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও আবাসিক হলের অপর্যাপ্ত রয়েই যাচ্ছে। আবাসন সুবিধার আওতায় মাত্র ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদিকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন বিভাগ খোলা হলেও শ্রেণিকক্ষের বন্দোবস্ত হয়নি পূর্ণরূপে। শিক্ষক, ল্যাব ও সেমিনার লাইব্রেরি সংকট নিয়েই চলছে নতুন বিভাগগুলো। অনেক বিভাগে রয়েছে দীর্ঘ সেশনজট। এছাড়াও পর্যাপ্ত ল্যাব না থাকায় গবেষণাবিমুখ হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞান অনুষদীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়েও বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পার করলেও এসব সংকট সমাধান করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, ৪২ বছরেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি ইবি। যার প্রধান কারণ লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি।

বর্তমানে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের অধীনে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ৪টি সমাবর্তন পেয়েছে ইবি। যাত্রালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৩ জন ভিসি ইবির হাল ধরেছেন। বর্তমানে ১৩তম ভিসির দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর ডক্টর শেখ আবদুস সালাম। তিনি বলেন, 'করোনা শেষে ক্যাম্পাসের একাডেমিক এবং প্রশাসনিকসহ সব কাজে প্রবাহমানতা তৈরি করার চেষ্টা করছি। সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশাসন পরিচালনায় স্বচ্ছতা এই তিনটি বিষয় সামনে রেখে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সবার সহযোগিতায় আমরা সামনে এগিয়ে যাব।'

এম বি রিয়াদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে