শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শপথ বাক্যের বাস্তব প্রয়োগ তরুণদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে

নতুনধারা
  ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর শপথ বাক্য পাঠ সংক্রান্ত একটি অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে এমন শপথ বাক্যের যথাযথ গুরুত্ব রয়েছে তরুণ প্রজন্মের মাঝে। শিক্ষাজীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশমাতৃকার ইতিহাসকে লালন করার উদ্দেশ্য হলো দেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর ও মসৃণ করে তোলা। শুধু তাই নয়, দেশের সংস্কৃতি ও আভিজাত্যকে বজায় রাখার জন্যও ইতিহাস জানার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

\হএকটি দেশ, যে দেশের মাতৃভাষার সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে তাজা রক্ত ঝরাতে হয়েছে। দীর্ঘ সময়জুড়ে নির্যাতনের শিকার হতে হতে শেষ পর্যন্ত অতিষ্ঠ বাঙালিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে হানাদারদের বিরুদ্ধে। '৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির জনকের নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬- দফা, '৬৯-এর গণ অভু্যত্থান, '৭০-এর নির্বাচন, '৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ার সময় থেকেই লাল-সবুজ পতাকার ভাবার্থ কিম্বা মহত্ত্ব জানাটা এক প্রকার কর্তব্য। আগামী প্রজন্মকে বাংলার মানুষের ত্যাগের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। দেখার বিষয় হলো, শিক্ষার্থীরা শপথ বাক্যগুলোকে কতটুকু ধারণ করছে। কারণ, শপথ বাক্যকে শিক্ষার্থীরা ধারণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও কম। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে একজন শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করলে খুব স্বাভাবিকভাবে দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ার মানসিকতার জন্ম হবে। শিক্ষার্থীর প্রতিটি দিন যদি দেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস ধারণ করে শুরু হয়, তবে ছোটবেলা থেকেই দেশের প্রতি তার আলাদা মায়া জন্ম নেবে; দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মানসিকতা জন্ম নেবে। পর্যায়ক্রমে তার পরবর্তী প্রজন্মও সেই শিক্ষাই পেতে থাকবে। অতএব, দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এই দায়িত্বগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। শিক্ষার্থীরা যাতে আচরণগত সৌন্দর্য বজায় রেখে ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেমে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার ধারণা ভেতরে পোষণ করতে পারে; সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাই পারেন শিক্ষার্থীদের তেমন করে সাজিয়ে তুলতে। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকরা যেভাবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবেন, তারাও সেভাবেই গড়ে উঠবে; ঠিক যেমন নরম মাটি দিয়ে শিল্পী তার কারুকাজ ফুটিয়ে তুলেন।

\হবর্তমানে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশকে আধুনিকতার বিকৃত আচরণ চর্চা করতে দেখা যায়। দেশের শিশু-কিশোরদের বড় একটি অংশ মোবাইল ফোন কিম্বা ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিনে আটকে রয়েছে। শৈশবের দূরন্তপনা এখন আর মাঠে-ঘাটে দেখা যায় না। করপোরেট দুনিয়ার আভিজাত্যকেই এখন তারা বড় করে দেখছে। ফলে তাদের অনেকের মাঝ থেকেই বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবসের সংজ্ঞায়ন বদলে যাওয়ার মতো দুঃখজনক ঘটনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার সামনে এসেছে। বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কিছুটা ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সব মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানেই ওই জাতীয় সংগীত এবং শপথ বাক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে আমরা যে কোনো ভালো কিছুর চর্চা করতে পারি। অন্যথায় নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থেকে যায়। শুধু সরকারি সেক্টরগুলোতে নয়, দেশের সব সেক্টরগুলোতেই নিয়মিত জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি শপথ বাক্য পাঠের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে সোনার বাংলাদেশ গড়তে তা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

\হবাঙালি এবং বাংলার যে সমৃদ্ধতার ইতিহাস পৃথিবীজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে আছে তা সেই সমৃদ্ধতাকে ধারণ করা এবং বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। আজকের তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশ।

ম মো. খশরু আহসান

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে