প্রত্যাখ্যান

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

শফিকুল ইসলাম শফিক
সজীব ছে?াট্টবেলা থে?কেই খুব ভা?লো কবিতা লে?খে। গা?ছের লতা কোমল হ?লেও লতা না?মের মে?য়ে?টির মন আস?লেই বুঝি ক?ঠিন পাথর। তার কা?ছে সজীবের কবিতা মা?নেই বিরক্ত?, কবিতা মা?নেই তিক্ততা। সজীব তাকে অনেক অনেক ক?বিতা শু?নি?য়ে?ছে। লতা অসহ্য ম?নে সবই হজম করে?ছে। সজীব এই কথাগুলো হুট করে একদিনে জানতে পা?রে?নি। অ?নেক?দিন পর লতার বান্ধবী দোল?নের মুখ থে?কে এসব শু?নে?ছে। সে বলেছে, ‘সজীব ভাই, লতা আপনার কবিতা পছন্দ ক?রে না। তার মা?নে আপনা?কেও সে পছন্দ ক?রে না। তা জানা সত্তে¡ও আপ?নি কেন তা?কে এত বিরক্ত করেন? এসব বোকা?মি ছাড়া আর কিছু নয়।’ ক?য়েক বছর আ?গের কথা। সজীব ও লতা দুজন খ?ালাত ভাই?বোন। সজীব বেশ ক?য়েক বছর ধ?রে খালার বাড়িতে যায়?নি। লতা দেখ?তে আ?গে এত সুশ্রী ছিল না। সে এক?টি ক?লে?জে প?ড়ে। ইয়ারচেঞ্জ পরীক্ষা দি?য়ে ক?য়েক?দি?নের জন্য তার মায়ের সঙ্গে সজীব?দের বা?ড়ি বেড়া?তে এ?লো। সজীব লতা?কে একটু দে?খে পাগলপারা। কী মনোমুগ্ধকর রূপ! দুধে আলতা মায়াবী গা?য়ের বরণ। চো?খের নজর স?রে না। কী ব্যাপার! লতা তো বেশ বড় হ?য়ে?ছে। আজ তা?কে এত সুন্দর লাগ?ছে কেন? এত?দিন কেন তা?কে দে?খি?নি? ম?নে হয় নিজের কা?ছে খুব বড় অপরাধ ক?রে?ছি। প্রশ্নগু?লো সজীবের ম?নের ম?ধ্যে বারবার ঘোরপ্যঁাচ খেল?ছে। লতা আগে কো?নো?দিন সজী?বের স?ঙ্গে একা কোত্থাও ঘুরতে বের হয়?নি। লাজুক লাজুক ভাব ছিল। সম?য়ের পরিক্রমায় সবই যেন খোয়া গে?ছে। আজ সজী?ব?কে নি?য়ে ঘুর?তে বের হ?য়ে?ছে। মস্ত বড় এক?টি বাগা?নে গেল। বাগানটির মাঝখানে পুকুর। এটি এলাকার সবচেয়ে ছায়াময়-মায়াময় একটি স্থান। এখানে বসে অনেকের অবসর সময়গুলো কাটে। ওরা নিজে?দের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে অ?নেক কথা বলল। সজীব বলল, ‘আচ্ছা লতা, তুমি কি কাউকে পছন্দ ক?র? সত্যি স?ত্যি উত্তর শুনতে চাই।’ লতা লা জাওয়াব। ধী?রে ধী?রে সজীবের ম?ন লতাকে নি?য়ে ?বি?ভোর স্বপ্ন অঁাক?ছে। কিন্তু কীভা?বে লতা?কে কথাগু?লো বলবে, তা ভে?বে কোনো কূল-কিনারা পা?চ্ছে না। এরপর তারা বা?ড়ি ফি?রে গেল। সে?দিন সজী?বের ?নিঘুর্ম সারারা?ত কে?টে যায়। প্রেম নিবেদনের এক?টি ক?বিতা লিখল। অব?শে?ষে পর?দিন লতার হাতে ক?বিতাটি দিল। লতা বলল, ‘আম?ার বাবা বড্ড কঠিন মানুষ। তার ম?তের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারি না। সজীব লতার মুখে আরও ভে?বে চি?ন্তে উত্তর চায়। লতা এক?দিন-দুদিন ক?রে ক?য়েক?দিন অতিবাহিত করল। তবু সে কো?নো উত্তর দেয় ন?া। দেখতে দেখতে লতার থাকার সময় ঘনিয়ে এলো। একদিন সকাল বেলা বাড়ি চলে গেল। অবশেষে কয়েকদিন পর সজীব লতাদের বাড়ি গেল। লতার কাছে আবারও উত্তর চায়। তবু সে কো?নো উত্তর দেয় ন?া। একদিন কলেজে যাওয়ার সময় সজীবকে বলল, ‘আমার একটি বইয়ের মধ্যে চিঠি লিখে রেখেছি। উত্তর পেয়ে যাবে।’ লতা কলেজে গেল। সজীব হাতে চিঠিটি নিল। তাতে লেখা ছিলÑ তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। তুমি আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। জীবনে কখনো এমন সুখ আসবে বলে মনে হয় না ... ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এ সব কথাগুলো প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি প্রমাণ করে না। সজীব মাঝেমধ্যে লতাদের বাড়ি যায়। একদিন লতা বলল, ‘আমার বাবা যার সঙ্গে বিয়ে দেবে, তাকে বিয়ে করব। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো দ্বিমত নেই। জীবনে কখনো প্রেম-ভালোবাসা করতে চাই না। না পাওয়ার কষ্ট পুরোপুরি না হলেও অধের্কটা বুঝি। অযথা কাউকে ভালোবেসে হারাতে চাই না। সজীব বলল, ‘সবার আগে তোমার বাবাকেই রাজি করব। সজীব তখন ভাসিির্টতে পড়–য়া ছাত্র। পড়াশোনা শেষ হতে আর দুবছর বাকি। জীবনে শুধু লতাকে পাওয়ার জন্য অনেক মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। অতঃপর সজীব খালাকে একদিন লতাকে ভালো লাগার বিষয়টি প্রকাশ করল। লতার মা লতার বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে বলল। সজীবের মা-বাবা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ছেলেকে বিয়ে দিতে চান না। তবু ছেলের জেদে বুকভরা আশা নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। লতার বাবা শিগগিরই রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, ‘মেয়ে তো বড় হয়েছে। মেয়েটা এই বিয়েতে রাজি কিনা তার মুখে একবার শুনি।’ লতা অজুহাত ধরল। চাকরি ছাড়া এই মুহূতের্ সে বিয়েতে রাজি নয়। সজীবের মা-বাবা বলল, ‘এখন না হয় বিয়েটা পড়িয়ে রাখি। চাকরি পেলে ধুমধাম করে ঘরে তুলব।’ তবু লতা প্রত্যাখ্যান করল। দীঘর্শ^াস ফেলে সজীবের মা-বাবা ফিরে এলেন। আজও সজীবের বুকের গহীনে প্রত্যাখ্যানের সকরুণ সুর বাজে অহনির্শ। কনইল, ভীমপুর, নওগঁা