বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষ্ণচূড়ায় মাতোয়ারা

নতুনধারা
  ১৭ মে ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ মে ২০২২, ০৯:২১

গ্রীষ্মের প্রখর রোদের উত্তাপের মাঝে সবুজের বুক চিরে উঁকি দিচ্ছে রক্তিম লাল আভা। চারদিকে ফুটেছে চোখ জুড়ানো রং মশাল। সবুজ পাতার ফাঁকে উজ্জ্বল লাল রঙের কৃষ্ণচূড়ার অপূর্ব বাহারি দৃশ্য প্রত্যেকের নয়ন জুড়ায়। এ যেন ফুল-পাতা দিয়ে গড়া প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য। তপ্ত গ্রীষ্মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডাল মেলেছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। উত্তাপের মাঝেও কৃষ্ণচূড়ায় শোভিত বিস্তর প্রাঙ্গণ ক্যাম্পাসকে অপরূপ সৌন্দর্য প্রদান করেছে। যেন ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির অপরূপ রূপে রাঙিয়ে দিতেই এই আয়োজন। বৃক্ষরাজির মধ্যে অনন্য আকর্ষণ এই কৃষ্ণচূড়া গাছ। এ যেন কৃষ্ণচূড়ার ক্যাম্পাস। প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতেই পুরো ক্যাম্পাসে মুগ্ধতা ছড়ায় কৃষ্ণচূড়া ফুল। সূর্যের সবটুকু আলো গ্রহণ করে নিজেকে মেলে ধরতে সহমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আবহমান কাল ধরেই বাংলার মানুষের কাছে এই ফুলটি ভালোবাসার অনন্য প্রতীক। তপ্ত রৌদ্রে গ্রাম বাংলার সংগ্রামী মানুষের কাছে আবেগ আর প্রশান্তির বহিঃপ্রকাশ এই ফুল। এই কৃষ্ণচূড়াকে নিয়েই কত কবির কবিতা, কত শত গান, কত গল্প। কৃষ্ণচূড়া দেশের সব প্রেক্ষাপটে যেন বিদ্যার প্রান্তর, কৃষ্ণচূড়ার লাল যেন সৃষ্টি করে সংগ্রামী প্রতীকী। সেই সঙ্গে ভালোবাসার পরশে ভরিয়ে দিয়ে যায় সবার মন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটক, সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামনে, ভাষা শহীদ রফিকের পাশে, ক্যাফেটেরিয়ার সামনে, মুক্তমঞ্চের আশপাশে, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি জুড়ে ও একাডেমিক ভবনের পেছনেসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় কৃষ্ণচূড়া গাছের রাঙা ফুল প্রকৃতির সব রঙকে ম্স্নান করে দিয়েছে। সকালে গাছের নিচে কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া রক্ত লাল পাপড়ি যেন পুষ্প শয্যা। এসব কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে শিক্ষার্থীরা আড্ডা আর খুনশুটিতে মেতে ওঠেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, পথচারী বা ক্যাম্পাসের সম্মুখের মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে যে কোনো যাত্রীরই হৃদয় কাড়ে নয়ন জুড়ানো এসব কৃষ্ণচূড়া ফুল। পুরো ক্যাম্পাস যেন কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে শোভা পেয়েছে। কৃষ্ণচূড়ার ইংরেজি নাম ফ্লেম ট্রি। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো 'ডেলোনিক্স রেজিয়া'। এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ- যা গুলমোহর নামেও পরিচিত। আমাদের দেশে লাল ও হলুদ রঙের ফুল দেখা গেলেও সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা যায় কালেভদ্রে। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় ১২-১৪ মিটার হলেও শাখা-পলস্নবে এটি বেশি অঞ্চলব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায় উষ্ণ আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক বলেন, ক্যাম্পাসের লাল কৃষ্ণচূড়া আমাদের ক্যাম্পাসের পরিবেশটাকে লাল রঙে রাঙিয়েছে। মনে হচ্ছে. যেন লাল টুকটুকে বউ, এই লালের মাঝে ইচ্ছে করে হারিয়ে যেতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন অপি বলেন, 'ঈদের ছুটি কাটিয়ে এসে কৃষ্ণচূড়ায় পরিপূর্ণ লাল টুকটুকে ক্যাম্পাস দেখে মনে হচ্ছে যেন ঈদের শেষে আবার কোথাও ঘুরতে এসেছি। এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে নিজের সবুজে ঘেরা গ্রাম ছেড়ে আসার জন্য যে মন খারাপ লাগতেছিল তাও যেন ভুলে গেছি।' সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈমা ইসলাম বলেন, 'পছন্দের ফুলগুলোর তালিকায় প্রথমেই স্থান পায় কৃষ্ণচূড়া। এর রক্তবর্ণ রূপ, সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে বারবার। ফুলটা হাতে নিলে মনে হয় এক টুকরা সূর্যকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, যতবার দেখি ততবারই মুগ্ধ হয়ে যাই।' রুক্ষ গ্রীষ্মের রোদের খরতাপে মন মাতানো রঙিন এ সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধানো মায়াময় টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে যেমনি সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি, তেমনি সবার মনেই জাগিয়েছে রক্তিম স্রোত। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার একটাই প্রত্যাশা, কৃষ্ণচূড়ার এই অপরূপ দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যটি অমর হয়ে বেঁচে থাকুক যুগের পর যুগ। আপন মায়ার চাদর আকাশে ছড়িয়ে মেলে ধরুক স্বপ্নময় নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়ার নান্দনিক সৌন্দর্য। মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে