মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইন সর্বদা নৈতিকতার এক স্বচ্ছ প্রতিবিম্ব

নতুনধারা
  ০৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

আইন মানুষের কল্যাণে সৃষ্ট এমন এক শাস্ত্র- যেথায় মানুষ এবং সমাজ উভয়ই উপকৃত হয়ে ওঠার এক তরুণ সুযোগ লাভ করে থাকে। আর সেই শাস্ত্রকে সর্বদা অলঙ্কৃত করেছে নৈতিকতা। তবে আইন ও নৈতিক বিধির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আইনকে জানতে হলে এর উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে বিবর্তনের ধারার সঙ্গে অগ্রসর হতে হয় নিদারুণ নৈপুণ্যতার সঙ্গে। একটি উদাহরণ চিত্রায়ন করছি যেমন: একটা সময় শুরু হলো ভূখন্ডে ভূখন্ডে রাষ্ট্রশক্তি এবং মানুষ তাদের নালিশ জানাল রাষ্ট্রের কাছে। রাষ্ট্রীয় আইন সৃষ্টি করে সমাজে শান্তির ব্যবস্থা করল। এভাবে শুরু হলো আইনের; যেখানে নৈতিক চর্চা হয়েছে উন্মুক্ত এবং বৃহৎ পরিসরে। প্রাচীনকালে নৈতিক সূত্রের অতি প্রতিফলনই ছিল আইন অতঃপর রাজা ছিলেন শাস্ত্রীয় দন্ড বা আইনের পরিচালক এবং ধর্মের প্রতিভূ। বর্তমানে অবশ্য আইনতত্ত্ব স্বতন্ত্রশাস্ত্রের মর্যাদা লাভ করেছে এবং আইন ও নৈতিক সূত্রের মধ্যে পার্থক্যও সুনির্দিষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।

একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, স্বভাবের বশে চুরি করলে যে শাস্তি হয়, কয়েকদিন অনাহারে থেকে সামান্য খাদ্যদ্রব্য চুরি করলে তদপেক্ষা লঘুদন্ডই হয়। আইন দ্বারা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয় না, কিন্তু নৈতিক সূত্র চায় মানুষের সমগ্রজীবন নিয়ন্ত্রিত করতে এবং তাই এখানে কোনো বাহ্যিক আচরণকেই বাদ দেয়া হয় না। ফলে দেখা যায়, এরূপ অনেক কার্য নীতিশাস্ত্রের দৃষ্টিতে দুর্নীতিমূলক ঘোষিত হয়- যা আইনের দৃষ্টিতে অন্যায় নয়। মিথ্যা কথাকে নীতিশাস্ত্র কখনই সমর্থন করে না বিধায়, মিথ্যা চয়ন দ্বারা যতক্ষণ না কারও ক্ষতি হয় ততক্ষণ ইহা আইনের আশপাশেও আসে না। আইন সাধারণত সামগ্রিক কল্যাণের দিকে দৃষ্টি রাখে নৈতিক বিধি ব্যক্তিকে নিয়ে ব্যস্ত।

এজন্য সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে মানুষের উন্নতি কাম্যের জন্য আইন প্রণীত হয়; কিন্তু নৈতিক সূত্র রচিত হয় সামাজিক ও সামগ্রিক ন্যায়-অন্যায়ের দিকে দৃষ্টি রেখে। আইন নির্দিষ্ট একটি নৈতিক সূত্রে অবশিষ্ট। নৈতিক বিশ্বাস যেমন ব্যক্তিগত তেমনি সামাজিক বিষয়। অনেক সময় সমাজের সঙ্গে ব্যক্তি অথবা ব্যক্তির সঙ্গে সমাজ সমান তালে চলতে পারে না। সুনীতি ও দুর্নীতির মধ্যে সীমারেখা অনেক সময় অতি অস্পষ্ট। আইনের ক্ষেত্রে কিন্তু এরূপ অস্পষ্টতা থাকতে পারে না। থাকলে আইনসভা বা আদালত তাকে সুস্পষ্ট করে তোলে। এই জন্যই বলা হয় আইনের মাধুর্যতা বাড়ায়ন আইনসভা ও মহামান্য আদালত। আইন ও নৈতিক সূত্রের মধ্যে পার্থক্যের কথা বলা গেল, কিন্তু উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আজও বর্তমান।

আইনও সব সময় কুনীতি দূর করে সুনীতিকে আহ্বান করেছে। মানুষকে আইন উপহার দিয়েছে নিয়ন্ত্রণযুক্ত নৈতিকতার এক স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি। আইনের কার্যকারিতা মানুষের নৈতিক বিশ্বাসের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। যেমন: সতীদাহ প্রথা পূর্বে ধর্ম বা নীতির অঙ্গ মনে করা হতো ঠিকই- তবে আইন করে সেই সতীদাহ প্রথাকে বন্ধ করা হয়েছিল। এর গোরাপত্তন ঘটে তখনই যখন জনমত এ আইনকে সমর্থন করেছিলেন। তাই এ আইন কার্যকর হয়েছিল সার্বজনীন সুম্মতভাবে নৈতিক বিশ্বাসের কারণে। আবার যে নৈতিক বিশ্বাস বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন হয়ে পড়েছে আইন দ্বারা তার পরিবর্তন সাধন করা হয়ছে। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো, নৈতিক ব্যক্তিত্বের উপলব্ধিতে মানুষকে বুঝতে সহায়তা করা- যা হতে পারে সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই রাষ্ট্র সর্বদাই আইনকে ধারণ করে নৈতিক আদর্শ সম্মুখে রেখে পথ চলতে চাইবে যার ফলে আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নৈতিকতার স্বচ্ছতা রূপ গ্রহণ করে, কখনই নৈতিক ধারণা থেকে বিচু্যত হতে পারে না। তাই আইনকে বলা হয় নৈতিকতার এক স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি।

ম মো. তসলিম ভূঁইয়া

প্রান্তিক শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে