ভালোবাসা সুন্দর

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

রুহুল আমিন রাকিব
রাত্রি তখন ৩টা ২৭ মিনিট। জায়নামাজে বসে আদিহার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আলস্নাহর দরবারে কান্নায় ভেঙে পড়েছে আবির। লোকে লোকারণ্য হাসপাতালে সবাই উসখুস চোখে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। আবিরের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই বাচ্চা ছেলের মতো কান্না করেই চলছে। আবিবের এমন পাগলামি দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। ছেলেটা এতটা বদলে গেছে? অথচ আবির আর আদিহার বিয়েটা এতটা স্বাভাবিক ছিল না। বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়ে আদিহার সঙ্গে এক প্রকার জোর করে আবিরের বিয়ে দিয়েছে। একরোখা আবিরের এই বিয়েতে মত ছিল না। থাকবেই বা কি করে? আবিরের মন বারান্দার যে তখন প্রেমের গিটার বাজিয়ে চলছিল ইশা নামের খারাপ চরিত্রের একটি মেয়ে। সুন্দর রূপ যৌবনের আড়ালে লুকিয়ে ছিল স্বার্থের লোভ। আবির সম্পর্কে আমার ছোট ভাই, আমি ওর বড় বোন নিরা। আবির আর ইশার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সব রকমের চেষ্টা করেও সফলতা অর্জন করতে পারেনি আমাদের পরিবারের সদস্যদের কারণে। অবশ্য আমিও তখন চাইনি আমার ভাই একটা খারাপ চরিত্রের মেয়েকে বিয়ে করে এ বাড়ির বউ করে নিয়ে আসুক। আদিহার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার প্রায় তিন বছর হতে চলছে আজ। অথচ বিয়ের পরের কয়েক মাস এতটাই অবনতি হয়েছিল আবির আর আদিহার মাঝে। আমরা সবাই ভেবেছি এই বুঝি ওদের সংসারটা ভেঙে গেল। তবে আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ধীরে ধীরে আবির ও আদিহার সম্পর্কটা ভালোবাসায় পরিণত হলো। বিয়ের পরের ভালোবাসার বিষয়টা আসলেই অন্যরকম। জীবনের প্রথম দেখায় একজন মানুষের সঙ্গে মহান আলস্নাহ তায়ালা সে সম্পর্কে একটা রহস্যময় ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন। কোনো প্রকার স্বার্থ ছাড়াই শুধু কবুল নামে একটি শব্দ। দুই পৃথিবীর দুই মানুষকে এত কাছে এনে দেয় যে, চুল দাড়ি পেকে রূপ যৌবনের লাবণ্য এক সময় ফুরিয়ে গিয়ে দাঁত পড়ে যায়। মুখের মাংস শুকিয়ে দুই চাপার গর্তে ঢুকে যায়। শরীরের হাড় মাংস জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে। এক সময় প্রিয় মানুষটা মারা যাওয়ার পরেও তার প্রতি রয়ে যায় জীবন্ত ভালোবাসা। আলস্নাহ তায়ালা ভালোবাসার যেই বিশুদ্ধতা বিয়ের পরেরটায় রেখেছেন তা বিয়ের আগের প্রেমে কেউ খুঁজে পাবে না। আমি আবারও উপলব্ধি করলাম আবির আর আদিহাকে দেখে। আদিহাকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। ওর প্রেগন্যান্সির নয় মাস কয়েকদিন চলছিল। হঠাৎ আজকে সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পরে মেয়েটা। তারপরেই হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে। মা আমাকে খবরটা দিতেই আমি ছুটে এসেছি। সেই থেকে দেখছি ছেলেটার পাগলামি। আদিহাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর পর থেকে আবির জায়নামাজে বসে আছে। ভাবা যায় এক সময় যেই ছেলেটা ওকে বিয়ে করতেই রাজি হচ্ছিল না আজ সেই ছেলেটাই ওর জন্য চোখের পানি ফেলছে। ওর ব্যথায় কাতরাচ্ছে। পাগলের মতো হসপিটাল জুড়ে পায়চারি করছে। অস্থিরতায় এই শীতের রাতেও শরীর বেয়ে টপটপ করে লোনা পানি পড়ছে। আদিহা ছিল একজন ধার্মিক মেয়ে। নিজের ভালোবাসা দিয়ে বখে যাওয়া আবিরকে পরিবর্তন করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ওদের বিয়ের কয়েক মাস পরে আমি যখন বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। আবির নিজে থেকে আদিহার প্রশংসা করেছে। বলেছে আপু তোমরা আমার জীবনে সব থেকে বড় উপহার দিয়েছ। আদিহার মতো গুণবতী একজন মেয়েকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে এনে দিয়ে। আবির এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। মুখ ভর্তি দাড়ি রেখেছে। মাথায় সব সময় টুপি থাকে। এক সময় যে ছেলেটি ইশা নামের খারাপ চরিত্রের একটি মেয়েকে ভালোবেসে কাটিয়ে দিয়েছে জীবনের চারটি বছর। আজ সেই আবিরের এতটা পরিবর্তন দেখে চোখের কোণে পানি টলমল করতে লাগল। হঠাৎ কেউ একজন বলল, আদিহার একটি সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে সন্তান জন্মেছে। আবির আলস্নাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে পাগলের মতো দৌড়ে আদিহার কাছে গেল। নিজের সন্তান কে দেখে আনন্দের ঢেউ খেলা করল আবিরের অবয়ব জুড়ে। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছু ফিরে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আমার সাহেব বলতাছে নিরা চলো এবার বাড়ি ফেরা যাক। অনেক রাত হয়েছে, তোমার তো আবার রাতে একটু ঘুম কম হলে মাথা ব্যথা করে। আমি সাহেবের হাত ধরে হসপিটাল থেকে বের হয়ে আসছি আর মনে মনে ভাবতাছি। ভালোবাসা সত্যি অনেক সুন্দর যদি কেউ সত্যি কারের ভালোবাসতে জানে।