বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রুমার কবিতার খাতা

জোবায়ের রাজু জোবায়ের রাজু
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

তার পুরো নাম মেহেরুন্নেসা রুমা। লোকে তাকে রুমা নামে চেনে। লোকে মানে পাঠকমহলের কথা বলছি। রুমার অসংখ্য পাঠক আছে। কারণ সে একজন মেধাবী লেখক। পত্রপত্রিকায় তার বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। যদিও লেখালেখির সঙ্গে অনেক দিন ধরে যোগাযোগ নেই। রায়হানকে বিয়ে করার পর একের পর এক ঝামেলা পার করতে করতে কলমের সঙ্গে দূরত্ব হয়ে গেছে।

বিয়েটা রুমার ভালোবেসেই। বাবা-মায়ের সামনে যখন রায়হানের প্রসঙ্গ তুলেছে, বাবা-মা বংশ মর্যাদা যাচাই করে দেখলেন রায়হান তাদের জামাই হওয়ার উপযুক্ত পাত্র নয়। বাবা মায়ের এই সিদ্ধান্ত মানেনি রুমা। ফলে রায়হানের জন্য সে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। সবকিছু ছেড়েছুড়ে এক কাপড়ে চলে আসে রায়হানের কাছে। বিয়ে করে সংসার শুরু করার পর রায়হান ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একের পর এক লস হতে হতে সে অনেকটা নিঃস্ব। ফলে সংসারের অভাব অনটনের সঙ্গে রোজ যুদ্ধ করে রায়হান আর রুমা।

২.

সকালে রুমার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল। রিসিভ করতেই ওপার থেকে বয়স্ক কণ্ঠ, 'আমি প্রকাশক আমজাদ হোসেন বলছি। আপনি এবারের বইমেলায় বই করবেন? করলে আমাকে পান্ডুলিপি দিতে পারেন।' কথাগুলো শোনে মুখ থেকে আনন্দে কথা বের হচ্ছে না রুমার। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর উচ্ছ্বাস গলায় বলল, 'অবশ্যই দেব। আপনি ঠিকানাটা দেন। সাতদিনের মধ্যে পান্ডুলিপি পেয়ে যাবেন।' প্রকাশকের কাছ থেকে ঠিকানাটা লিখে রাখে রুমা।

রুমা বিগত দিনের স্মৃতিতে ফিরে গেল। লেখালেখির সেই জীবনে দুই বইমেলায় রুমার দুটি বই বের হয়েছিল। একটির নাম 'অভিলাষী জোছনা' আরেকটির নাম 'ওইখানে যেও নাকো তুমি।' একটি ছিল উপন্যাস আরেকটি গল্প সংকলন। সেই সময়ে বইগুলো পাঠকমহলে দারুণ সাড়া ফেলেছে। তারপরের বছর কবিতার বই বের করার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। খাতায় প্রায় ডজনখানেক কবিতাও লেখা শেষ হয়েছিল। বইয়ের নামও ঠিক করেছিল 'রাত্রি শেষের নির্জনতা।' কিন্তু ওই বছরই রায়হানের জন্য ঘর ছাড়ে রুমা। ফলে তার টেবিলের ড্রয়ারে রয়ে গেল সেই কবিতার খাতা।

৩.

রুমা আজ বাবার বাড়ি যাচ্ছে তার সেই কবিতার বই আনতে। যত্নে লেখা ওই কবিতাগুলোর খাতায় আরো নতুন কিছু কবিতা লিখে প্রকাশককে দেবে। লেখক রুমাকে তার পাঠকরা এবার আবার পাবে বইমেলায়।

এতদিন পর মেয়ে রুমাকে দেখে কোনো আগ্রহ দেখাননি ফরিদা বেগম। যে মেয়ে বংশে চুনকালি মেখে ঘর ছেড়েছে, সে মেয়ের জন্য কোনো সমবেদনা নয়। মায়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারে রুমা। ফলে বাড়তি কিছু না বলে নিজের ঘরে গিয়ে রুমা দেখে তার ব্যবহৃত কোনো কিছুই নেই।

-আমার জিনিসপত্রগুলো কই মা?

-কিছুই নেই।

-মানে?

-কেনো এসেছিস? তোকে আমরা ভুলে গেছি। তুই চলে যাওয়ার পর তোর বাবা তোর ব্যবহৃত সবকিছু আগুনে পুড়ে ফেলেছেন। যা, চলে যা। তোর মুখ দেখতে চাই না আর।

রুমার চোখে পানি চলে এলো। মা এসব কি বলছেন! তার সবকিছু আগুনে পুড়ে ফেলেছে! কবিতার খাতাটাও!

৪.

রিকশায় চেপে বসে চলে যাচ্ছে রুমা। এই বাড়িতে সে আর কখনো আসবে না। রায়হানের ঘরই এখন তার সবকিছু। আজ রাতেই সে কবিতার জন্য নতুন খাতা নিয়ে বসবে। সাতদিনের মধ্যে প্রকাশককে পান্ডুলিপি দিতেই হবে। এবারের বইমেলায় রুমার আরেকটি বই আসবে। এটা ভাবতেই সব দুঃখ ভুলে গেল সে। দুঃখ কষ্ট আর হতাশা ভুলে থাকার আরেক উপায় হচ্ছে লেখালেখি। রুমা লেখালেখি কখনো ছাড়বে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে