পাকুন্দিয়ায় বার্ষিক বনভোজন

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

হুমায়ুন কবির
ফেব্রম্নয়ারির শেষ সময়, শীত এখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। কখনো ঠান্ডা আবার কখনো হালকা গরম। একেবারে ভ্রমণ উপযোগী সময়। এমন সময়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য বার্ষিক বনভোজনের জন্য গত ২২ তারিখ দৈনিক যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শীত মৌসুমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, বিরিশিরি, দুর্গাপুরের বিজয়পুর ও রানীখংয়ের অসাধারণ চোখ ধাঁধানো সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণ পিপাসুদের। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রম্নয়ারি) সকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের সদস্য ও পরিবারবর্গের অর্ধশতাধিক ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য নেত্রকোনা জেলার সর্বোত্তরে ভারতের গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়ানো ছোট্ট জনপদ সুসং দুর্গাপুর ও বিরিশিরির উদ্দেশে রওনা দিলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজারের হোটেল সৌখিনে নাস্তা করে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবারও যাত্রা করে। বিরিশিরি বাজারে গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করে নেভিবেস্না কালারের গেঞ্জি পরে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা দিয়ে মৃতপ্রায় সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে, নদী পারাপারের জন্য বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি সাঁকো পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে বিজয়পুরের জিরো পয়েন্ট হয়ে বিজিবির ক্যাম্পের সঙ্গের মনমুগ্ধকর কমলা বাগান ও বিজিবি ক্যাম্প দেখি। সোমেশ্বরী নদী স্বচ্ছ পানি আর ধু-ধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত। এদিকে নদী পথে ড্রেজিং করে লাল বালি, কয়লা পাথর উঠানো, নদীর মাঝে বালুচর ঘুরে দেখল দৈনিক যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের সদস্য ও পরিবারের লোকজন। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলা দিয়ে প্রবাহিত। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝরনা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। সাদা মাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরূপ নীলের উৎস এ নদী। যা বর্তমানে লাল বালু, পাথর ও কয়লাখনি হিসেবে পরিচিত। সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য এতটাই মোহনীয় যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব। তারপর আবারও অটোরিকশা যোগে চীনামটির পাহাড় বা সাদামাটির পাহাড়ের উদ্দেশে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুলস্নাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের শসার পাড় ও বহেরাতলী গ্রামে চীনামাটির পাহাড়, সাদামাটির পাহাড়, গোলাপী পাথরের পাহাড়, সবুজ লেকের পাহাড় ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এই চুনাপাথরের অঞ্চলটি পরিচিত। পাশাপাশি ৩-৪টি পাহাড় ও ২-৩টি লেক নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত। এখান থেকে চীনামাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রংয়ের জলাধারগুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার। পাহাড়ের সৌন্দর্য ভাষা দিয়ে প্রকাশ সম্ভব হবে না। আর ক্যামেরার কৃত্রিম লেন্সের পক্ষে কখনই তা ধরে রাখা সম্ভব নয়। লেকের একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মাঠ। ওই স্থানে অবস্থানের আনন্দ শুধু বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই অনুধাবন করা সম্ভব। তবে ভ্রমণের আনন্দ সবসময়ই দ্বিগুণ হয়ে যায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে। দেখতে দেখতে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে, ততক্ষণে ক্ষিদে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিপিনগঞ্জের হোটেল শাহ জালালে এসে সন্ধ্যায় দুপুরের খাবার খেয়ে অটোরিকশা নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে আবারও বিরিশিরির বাস স্টেশনে। ততক্ষণে রাত ৮টা বেজে গেছে। রাস্তায় কিছু যানজট পেরিয়ে গৌরীপুর এসে রাস্তায় চলন্ত বাসে সবার জন্য উন্মুক্ত নো মিস লটারি দিয়ে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। রাত সাড়ে ১২টায় বাস পাকুন্দিয়া এসে পৌঁছানোর পর সবাই বার্ষিক বনভোজন শেষ করে সুন্দরভাবে বাড়িতে ফিরে যায়। এমন সুন্দর বার্ষিক বনভোজন আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ণ তহবিলের উপ-পরিচালক, জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরামের পাকুন্দিয়া শাখার সভাপতি আজিজুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান সোহাগকে ধন্যবাদ জানান। বার্ষিক বনভোজনে হাজি জাফর আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক (গণিত) স্বরজিত কুমার সাহা, সহকারী অধ্যাপক (পরিসংখ্যান) মো. রফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক (ব্যবস্থাপনা) মো. আজিজুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ( হিসাব বিজ্ঞান) আ হ ম মুস্তফা কামাল, সহকারী অধ্যাপক (কম্পিউটার) অসীম কুমার সরকার, প্রভাষক (মার্কেটিং) মো. মিজানুর রহমান, প্রদর্শক (সাচি) তাহমিনা খাতুন, আব্দুল আজিজ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্ণী রানী চৌধুরী, পাকুন্দিয়া পাবলিক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মোছা. স্বর্ণালী আক্তার প্রিয়া, পাকুন্দিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক হোসেন, রবিন আহমেদ, নেহাল বিশ্বাস, মিনহাজ উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, হাফেজ মকবুল হোসেন প্রমুখ ছাড়াও দৈনিক যায়যায়দিনের পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির, জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরামের পাকুন্দিয়া শাখার অর্থ সম্পাদক- মো. ইলিয়াস মিয়া, সদস্য- হোসাইন মো. ফরহাদ, হৃদয় হোসেন, রাকিবুল হাসান হিমেল, রাফসান জামান, মেহেদী, শাকিল প্রমুখ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরামের পাকুন্দিয়া শাখার বার্ষিক বনভোজনে অংশগ্রহণ করেন।