লটারি, আহা কি আনন্দ!

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রাশেদুল হক
নাটোরের লালপুরে গ্রীনভ্যালি পার্কে বন্ধুরা
মার্চ মাস। শীত পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। কখনো ঠান্ডা আবার কখনো হালকা গরম। একেবারে ভ্রমণ উপযোগী সময়। প্রায় সাত দিন আগে থেকে প্রস্তুতি চলছে। বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার সাহিত্য সংগঠন 'উষসি' কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বনভোজন। সেই সংগঠন থেকে আমাদের কয়েকজন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেদিন ছিল শুক্রবার। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে যুগান্তর পত্রিকার শেরপুর উপজেলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর ভাই, সাহিত্য ভাবনার ছোট কাগজ অপরাজিতের সম্পাদক ও প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার শেরপুর উপজেলা প্রতিনিধি নাহিদ হাসান রবিন ভাই, তৃতীয় মাত্রা পত্রিকার প্রতিনিধি আবু বকর সিদ্দিককে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে জাগালাম। জাহাঙ্গীর ভাই শেরপুর পৌর শহরে থাকলেও রবিন ভাই ও আবু বকর অনেকটা দূরে গ্রামে থাকে। তাই ভাবলাম ওদের ফোন দেই। যদি আসতে দেরি হয়। সকাল সকাল আমিও জামা কাপড় পরে তৈরি হয়ে ছিলাম। আমার স্ত্রী মারজিয়া ও ছেলে সাদ আল মাহীকেও দ্রম্নত তৈরি হতে বললাম। জগন্নাথপাড়া আমার বাসার সঙ্গেই মিনিবাস লাগবে। একে একে জাহাঙ্গীর ভাই, রবিন ভাইও স্ত্রী সন্তান নিয়ে এসে পৌঁছেছে গাড়ির কাছে। আমরাও বের হলাম। আমাদের জন্য উপজেলা চত্বরে উষসি সাহিত্য সংগঠনের সদস্যরা অপেক্ষা করছিল। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের সঙ্গে নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহ জামাল সিরাজী কাকাও যাচ্ছে। দেখে খুব ভালো লাগলো। যাই হোক, বনভোজনের সব কিছু বাসে তুলে নিয়ে সাড়ে ৮টায় বাস ছাড়ল নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার 'গ্রীন ভ্যালী' পার্কের উদ্দেশে। শেরপুর থেকে চান্দাইকোনা, সিরাজগঞ্জ রোড হয়ে নাটোরের বনপাড়া বাজার থেকে পশ্চিম দিকে গ্রীন ভ্যালী পার্ক। সারা রাস্তায় কৌতুক আর চুটকিতে আনন্দে মেতে ছিলাম বাসের সবাই। বাসের মধ্যে দেখি আলম ভাই লটারির টিকেট বিক্রি করছে। আমার কপালে কোনো দিন লটারি উঠেনি। স্ত্রী সন্তানের অনুরোধে ১২টি টিকেট কিনলাম। অবশেষে পার্কে গিয়ে পৌঁছালাম দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। সেখানে গিয়ে দেখি শতশত মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সাইকেল নিয়ে অনেক দূর থেকে দর্শনার্থীরা এসেছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পায়ে হেঁটেও এসেছে অনেকে। আমরা খুব অবিভূত হলাম। একটা পার্কে এত মানুষ। আমরা সবাই পার্কের ভেতরে প্রবেশ করলাম। আমাদের জন্য আমবাগান-৬ নামের একটি স্থান আগে থেকেই ঠিকঠাক করে রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ। সেটি অবশ্য করেছিলেন লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জুয়েল ভাইয়ের জন্য। উনি আমাদের জাহাঙ্গীর ভাইয়ের ছোট ভাই। তাই ওই স্পটটা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল। যাই হোক, আমরা সবাই এসে স্পটে পৌঁছলেও রান্নার তৈজসপত্র এখনো ভেতরে এসে পৌঁছায়নি। সবাই ধৈর্যহারা হতে লাগলো। সাবইকে একটু শান্ত হতে বললাম। অবশেষে সেগুলো ভেতরে নিয়ে এলো; তাও আবার ভুল জায়গায়। সবাই একটু রাগান্বিত হলো এই ভেবে যে, পার্কে অন্য সবাই যখন খাওয়া-দাওয়া করবে তখন আমাদের রান্নাই শুরু হয়নি। পরে সব ঠিকঠাক করে দিয়ে আমরা ঘুরতে বের হলাম। বাচ্চারা সব স্পিডবোর্ড, ট্রেইন, নাগোরদোলায় উঠতে পেরে আনন্দে মাতোয়ারা। ক্ষুধার পেটে নিয়ে আমরা মাঝে মাঝে রান্নার খোঁজ নিচ্ছিলাম। কারণ শাহজামাল সিরাজী কাকা খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। অবশেষে সোয়া ৫টায় আমরা খাবার টেবিলে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সূর্য ডোবার মুহূর্তে সবাই ছবি তুলতে তুলতে বাসের কাছে চলে আসলাম। বাস ছাড়লো শেরপুরের উদ্দেশে। বাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে লটারির ড্র। পরিচালনা করছেন আমাদের প্রিয় রবিন ভাই। তিনি খুব মুখরোচক কথা বলতে পারেন। জাহাঙ্গীর ভাই, রবিন ভাই, আবু বকর, শাহ জামাল সিরাজী কাকা, বকুল কাকা, লতিফ ভাই, আলম ভাইয়ের স্ত্রীসহ বাসের প্রায় সবাই লটারি জিতছে কিন্তু আমি পাচ্ছি না। আমার ছেলেতো বাসের সিটের সঙ্গে মাথা ঠুকাচ্ছে। আর বলছে, আমি পাই না কেন? একে একে সব পুরস্কার শেষের দিকে। বাঁকি রইলো প্রথম আর দ্বিতীয় পুরস্কার। আমার স্ত্রী একটু হতাশ হয়ে গিয়েছিল যে আমরা আর হয়তো পাব না। রবিন ভাই মারজিয়াকে দিয়ে কুপন তোলালো। ৩ সংখ্যার একটি টিয়া রংয়ের কুপন। রবিন ভাই শেষের ডিজিট বলতেই মনের ভেতরে কেমন যেন লাগলো। মাঝের ডিজিটটাও মিলে গেল। প্রথম ডিজিট বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমি সিট থেকে লাফিয়ে উঠলাম এবং চিৎকার দিয়ে উঠলাম। সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে আমার চিৎকারে। মুহূর্তের মধ্যেই আমার হাতে এসে পৌঁছে গেল দ্বিতীয় পুরস্কার একটি হাতঘড়ি। বাঁকি রইল প্রথম পুরস্কার। এবার কুপন তুললো জাহাঙ্গীর ভাইয়ের স্ত্রী নাসিমা ভাবি। এটিও ৩ সংখ্যার একটি টিয়া রংয়ের কুপন। রবিন ভাই কুপনের নাম্বার বলার সঙ্গে সঙ্গে আবারো চিৎকার করে উঠলাম। কারণ প্রথম পুরস্কার দেয়াল ঘড়িটিও আমার ভাগ্যে জুটেছে। সবাই আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কারণ সবাই যখন ছোট ছোট পুরস্কার পেয়ে আনন্দে মেতেছিল তখন আমি মন খারাপ করে বসেছিলাম। আর এখন প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কার আমি পেলাম। জীবনে কোনো দিন লটারি জিতিনি তো তাই এমন বাঁধভাঙা উলস্নাস। লটারির ড্র করতে করতে কখন যে শেরপুরের সীমানায় এসে গেছি তা বুঝতেই পারিনি। অনেক আনন্দ ও বিনোদনের পর অবশেষে মহান আলস্নাহতায়ালা আমাদের সহি সালামতে শেরপুরে পৌঁছালো। সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বাস থেকে নেমে যে যার বাড়িতে চলে গেলাম। এমন দিন আসলেই ভোলার মতো নয়! সদস্য সচিব জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম শেরপুর শাখা, বগুড়া।