অভিলাসী মন

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

মো. মাঈন উদ্দিন
একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতার করেন ইমাদ। উচ্চশিক্ষা খতম করা এক যুবক। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির মানসে স্কুলে পাঠদানের পাশাপাশি ভোর বেলা হতে মধ্যরাত অবধি টিউশনি করে বেড়ায়। তারই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ফারিহা। ফারিহাকে সে দেড় বছর যাবত প্রাইভেট পড়াচ্ছে। সেই সূত্রে ফারিহার বড় বোন ফাহিমার সঙ্গেও মাঝে মধ্যে দেখা হয়। তারপর টুকটাক কথা বলা। একদিন যথারীতি সন্ধ্যের পর দুতলার কলিং বেল বাজায় ইমাদ। না, কেউ আসছে না। সে মনে মনে ভাবলো- হয়তো কেহ বাসায় নেই। আবার কলিং বেল চাপল। কেউ আসছে না। আনমনে কি যেন ভাবছে ইমাদ। হঠাৎ রেলিং খুলে ভেতর থেকে ডাক আসে 'স্যার ভেতরে আসেন।' পেছন দিকে ঘুরে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে ইমাদ। ফাহিমাকে সে আরো অনেকবার দেখেছে কিন্তু আজ যেন এ আরেক ফাহিমাকে দেখছে সে। বিদু্যতের স্বচ্ছ আলো ফাহিমার ওড়নার চুমকিতে প্রতিফলিত হয়ে তার বিচ্ছুরণ গিয়ে পড়ল ইমাদের চোখে। সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করল সে। আবার তাকাল। এবার তার ব্যাকুল দৃষ্টি ফাহিমার মুখাবয়বে নিবিষ্ট হলো। যতই দেখছে, ততই যেন বিমোহিত হচ্ছে তার চোখযুগল। এ যেন ঊর্ধ্বাকাশ থেকে নেমে আসা এক অপ্সরী। তালা খোলে রেলিংটা একটু ফাঁক করেছিল ফাহিমা। এরপর হাত দুটো এক সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধ করে নতজানু হয়ে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাহিরে দাঁড়িয়ে এক নির্বাক পুরুষ। অপরূপা এক মেয়ের দু্যতিতে বিমোহিত। ইমাদ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে নিজেকে খুঁজে ফিরছে। ভাবলেশহীন এক মানবকে ফাহিমা বলল, 'স্যার দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আসুন।' ঠিক সেই সময় থেকে সেকেন্ডের ব্যবধানে ইমাদ ফাহিমার প্রেমে পড়ে গেল। এ যেন জেনে শুনেই অগ্নিগর্ভে নিজেকে শপে দেয়া। সময়ের ব্যবধানে, প্রকৃতির খেয়ালিপনায় ফাহিমাও একসময় ইমাদের প্রেমে অবগাহন করতে শুরু করল। এ যেন আগুনের কাছে এসে শক্ত মোমের আত্মগলন। ফারিহাকে পড়ানোর সময় বিভিন্ন অজুহাতে ফাহিমা পড়ার টেবিলে এসে বসে থাকে। গল্প করে। চোখের ভাষায় চলে প্রেম বিনিময়। যদিও তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মুখের বাণী হয়ে ফুটেনি তখনো। ইমাদ যেখানে বেতনের আশায় পড়ানো শুরু করেছিল, আজ সে ফাহিমার এতটুকু দর্শনের আশায় সারাদিন মুখিয়ে থাকে। ফাহিমার দর্শনের কাছে বিনিময় যেন একেবারেই তুচ্ছ। ইমাদ চায় ফাহিমার এতটুকু দর্শন। যে দর্শনে তার হৃদয়ে ভালোবাসার রক্ত সঞ্চালন হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন ফাহিমা তার সামনে এলো না। অন্য রুমে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইল। কেন? সেই ভালো জানে। হয়তো বা মন খারাপ। হয়তো অন্য কোনো কারণে। এক ঘণ্টার স্থলে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, তবুও দর্শন হলো না ভালোবাসার জলপ্রপাতের। রিক্ত হস্তে, শূন্য হৃদয়ে ফিরে এলো ইমাদ। দ্বিতীয় দিনও একই ঘটনা। তৃতীয় দিনও। এদিন কোনো প্রবোধ বাণীই যেন ইমাদের মনকে শান্ত করতে পারল না। তার শূন্য হৃদয় থেকে বিন্দু বিন্দু পানি চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল চৈত্র্যের তপ্ত পিচগলা পথে। যেখানে প্রাণের সঞ্চালন নেই, সেখানে বিনিময় একেবারেই তুচ্ছ। তাই সে চতুর্থ দিন ফারিহাকে পড়াতে যায়নি। পঞ্চম দিনও না। যদিও ফাহিমা তাকে অনেক কল দিয়েছে। সে রিসিভ করেনি। এক পাথর কঠিন জিদ তাকে পেয়ে বসেছে। ষষ্ঠ দিন নির্দিষ্ট সময়ে সে পার্কে গিয়ে নির্জন ]স্থানে বসে রইল। হঠাৎ ইমাদের ফোন বেজে উঠল। মোবাইল ক্রিনে ভেসে উঠল ফাহিমার নাম। সে রিসিভ করেনি, দু'চোখ বন্ধ করে বসে রইল। লাগাতার সাইলেন্ট মোডে কল বেজেই চলেছে; সাইলেন্ট মোডে কেঁদে চলেছে ইমাদের হৃদয়। আবারো রিংটুং বেজে উঠল। এবার আর পারল না ইমাদ, সে আস্তে আস্তে মোবাইলটি কানের কাছে ধরল। ওপাশ থেকে ফাহিমার প্রশ্ন, 'স্যার, আসছেন না কেন?' ইমাদের কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে অভিমানি পাল্টা প্রশ্ন, 'কেন আসব?' ফাহিমার হৃদয় হয়তো এই 'কেন'-এর উত্তর বলে দিয়েছে চুপিসারে। ওপাশ থেকে কোমল কণ্ঠে ভেসে এলো 'সরি স্যার, আপনি এখনই আমাদের বাসায় আসুন। পিস্নস স্যার।' এই একটি মাত্র 'সরি' ইমাদের হৃদয়ে ঝেঁকে বসা পাথর সরে গেল। সমস্তটা আকাশ জুড়ে জমে থাকা কালো মেঘবলয় মুহূর্তেই বিলীন হয়ে গেল। ইমাদ বাম হাতের উল্টো দিকটায় চোখ মুছে বলল-আসছি। সদস্য জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম ময়মনসিংহ