চাঁদের রঙ

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

এসএম নূরনবী সোহাগ
রাত ১২.২৭ মিনিট। কিছুতেই ঘুম আসছে না। খাট থেকে নেমে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশের দিকে তাকাতেই চকচকে চাঁদের আলোয় চোখটা ঝলসে যাওয়ার উপক্রম হল। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে হঠাৎ অসহ্য রকম আলো দেখলে এ রকমটা হয়। এমন রূপবতী একটা চাঁদ দেখে আমি বেশ উদাস হয়ে গেলাম। আয়োজন করে অনেকদিন চাঁদ দেখি না। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আকাশে চাঁদ নামক একটা শুভ্র বস্তু থাকে। আমরা যারা ব্যস্ত শহরের নাগরিক, তারা হয়তো রাতের যানবাহনের সার্চ-লাইট এবং সোডিয়াম বাতি ভেদ করে খুব একটা আকাশের দিকে তাকাই না; ছোট্ট বেলার সেই চাঁদ মামাকে দেখার উদ্দেশে। আমার ছোট্ট বেলার সেই জ্যোৎস্না রাতগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। কত না স্মৃতি জড়ানো সেই সমস্ত জ্যোৎস্নায়। আমি গ্রামে বড় হয়েছি, গ্রামীণ রূপবৈচিত্র্য আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি একটা সময়। বিশেষ করে গ্রামীণ জ্যোৎস্না খুব করে উপভোগ করেছি। জ্যোৎস্না রাতে আমরা সকল ভাইবোন উঠোনে পাটি বিছিয়ে পড়তে বসতাম। আকাশে তখন মস্ত থালার মতো একটা ঝকঝকে চাঁদ থাকতো। আমরা ঢুলে ঢুলে পড়তাম, মনে হতো চাঁদটাও আমাদের সঙ্গে সামনে পিছনে ঢুলছে। মা-চাচিরা তখন জ্যোৎস্নার আলোয় ধান মাড়াই করত। সে এক উৎসবমুখর ব্যাপার। দাদাজান হাট থেকে ফিরতেন গরম জিলিপি নিয়ে। আমরা তা নিয়ে লোফা-লুফি করতাম। দাদা মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে খুব গল্প করতেন উঠোনে বসে যেমন রাজা-রানীর গল্প, চাঁদের বুড়ির গল্প আরও কত কি! একদিন দাদা গল্প বলার মাঝে প্রশ্ন করলেন, 'বলতো দাদাভাইরা আজকে চাঁদের রঙ কি?' এত খুব সোজা আমরা চেচিয়ে বললাম 'সাদা'। দাদা বললেন- 'হয়নি। ভালো করে দেখে বলো।' আমরা গভীরভাবে চাঁদ দেখতে লাগলাম। অবশেষে কেউ বললাম হালকা লালচে, কেউ বাদামি, কেউ ফঁ্যাকাসে ইত্যাদি ইত্যাদি। দাদা বললেন- কারো হয়নি। এক সের দুধের মধ্যে আধাসের খেজুরের গুড় ছেড়ে দিলে যে রঙ হবে; চাঁদের হচ্ছে সেই রঙ। পরদিন সকালে বিষয়টার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য, সদ্য দোহন করে রাখা এক সের দুধের মধ্যে দিলাম হাঁড়ির ঝোলগুড় ছেড়ে। দেখো কান্ড, আসলেই তো চাঁদের রংটা এরকম। দাদা ততক্ষণে হুড়মুড় করে লাঠি ভেঙে আমাদের দিল তাড়া। দে দৌড় ... ততক্ষণে ঢং করে একটা আওয়াজ আমায় জানান দিল রাত ১টা। স্মৃতিপটে দৌড়ানো এখন থামাতে হবে। কাল অফিস আছে ... সদস্য, জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম ঝালকাঠি