দিন পার হচ্ছে ভেজাল খাদ্য খেয়ে!

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মো. ফজলে রাব্বী
বর্তমানে ভেজাল নেই এমন খাদ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। ভেজাল খাদ্য যেন আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। ঢাকাতে পা রাখি এ বছরের শুরুতে। থাকতাম পুরান ঢাকার আজিমপুরের একটি মেসে। প্রথম ১০ দিন বেশ ভালোই কাটল। তারপর হঠাৎ বাস্তবতার শিকার। কাজের বুয়া আসবে না দুদিন। এখন কী করব? মেসের সদস্যদের কাছে জানতে চাইলাম। উওর এলো, হোটেলে খেয়ে নিতে হবে। কিন্তু ঢাকার হোটেল বা রেস্টুরেন্টের নাম শুনলেই আমার মনের মধ্যে অনীহা চলে আসে। অধিকাংশ হোটেলের সামনের পরিবেশ বেশ চাকচিক্য ফিটপাট; কিন্তু ভেতরের অবস্থা সদরঘাট... এসব হোটেলে মানুষকে খাওয়ানো হয় মরা মুরগি সঙ্গে বাসি খাবার। আমি যদিও টুকটাক রান্নাবান্না জানি কিন্তু তা সম্ভব হবে না আমার বিশ্ববিদ্যালয় খোলা। কিন্তু হোটেলগুলোতে যে নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করা হয়। এতে খেয়ে হজম করতে পারব না। একদম বেরিয়ে আসবে। চিন্তা করলাম এসব ভেবে কি লাভ, খেতে যখন হবে তখন চোখ বন্ধ করে নাক টিপ দিয়ে পার করলাম দুদিন। কয়েকমাস আগে আমি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে খাদ্যে ভেজাল নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখি। এসব খাদ্য বানানোর প্রক্রিয়া দেখে আমি আঁতকে উঠি। যে ফুসকা ছাড়া রাতের বা বৈকালিক আড্ডাই অপূর্ণ থেকে যায় সেই ফুসকা তৈরি হচ্ছে পা দিয়ে মাড়িয়ে ভাজা হয় খোলা পাম অয়েলে। কেক, রুটি, আইসক্রিম, সেমাই, চকোলেট, নামিদামি প্রসাধনী তৈরি করার চিত্র আরও ভয়ঙ্কর। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ স্যাকারিন ও কেমিক্যাল। আবার স্বনামধন্য এক অনলাইন নিউজপোর্টালে দেখলাম এক কনফেকশনারি দোকানের বার্গারে পোকা। ওটা দোকানি না দেখেই কাস্টমারকে খেতে দিয়েছে। অন্যদিকে দৈনন্দিন জীবনের রান্নার কাজে ব্যবহারিত মরিচ, হলুদ, মসলাগুলোতে তো ভেজালের অভয়ারণ্য! এগুলোতে মেশানো হচ্ছে পাখির খাদ্য, কাঠের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে। অপরাধীরা সমস্যা হলে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। ফলের কথা আর কি বলব। কলার ভেতরের অংশ পাকা কিন্তু উপরের অংশ সবুজ কাঁচা। ফলকে পাকানো হয় জোর করে। মালটা, আপেল, কমলা, আম ইত্যাদি ফলগুলো ৬ মাস আগে গাছ থাকে ছিঁড়ে নিয়ে এসে দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়। ৬ মাস পরও এগুলো যেন কাস্টমারের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এ কেমন জাদু ...! এ জাদুকর কারা? জাতি তাদের এ জাদুকারিতা আর দেখতে চায় না। তাদের শাস্তি চায়। টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলেই কিছু কিছু নামিদামি কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখেই সময় পার করতে হয়। তাদের নানা ধরনের প্রযুক্তি দ্বারা গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে নিশ্চিত করা হয়। অথচ কিছুদিন আগে দেখলাম বাজার দখল করা সেজান এবং প্রাণ জুসে স্যাকারিন নাকি ৯৫ শতাংশ, ৫ শতাংশও নেই আম। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তবে কেন? \হরাষ্ট্র এ ব্যপারে উদাসীন কেন? এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে। স্থানীয় প্রশাসন কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে না? খাদ্যে ভেজালের জন্য কঠিন আইন প্রয়োগ করতে পারছে না কেন? কেনইবা অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে অধিকাংশ সময় তাদের কারখানাও বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু পরে যখন মুক্তি পায় তখন আবার সেই একইভাবে তারা ভেজাল কারবার চালাতে থাকে। এসব বন্ধে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৫সহ আরও অনেক আইনি কাঠামো রয়েছে। টিসিবি, ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন, বিএসটিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমকে মূলত কার্যকর রাখার দাবি দীর্ঘদিনেরই। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষগুলো নিজ নিজ কাজটি পালন করে গেলে অসাধু মহলের দৌরাত্ম্য এই পর্যায়ে আসত না। হ্যালো মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী এসবের দিকে সুদৃষ্টি দিতে হবে এবং বন্ধ করতেই হবে। সদস্য জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা