দশমিনায় উপকূল দিবসের দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মো. মামুন তানভীর
পটুয়াখালীর দশমিনায় মানববন্ধনে বন্ধুরা
উপকূলবাসীর অগ্রগতি ও সুরক্ষার তাগিদে ১২ নভেম্বর উপকূল দিবসের দাবিতে পটুয়াখালীর দশমিনায় মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টায় যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম ও দশমিনা উপজেলা সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে দশমিনা উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন এবং সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় দশমিনা সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন তানভীরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি পি এম রায়হান বাদল। প্রধান অতিথি তার বক্তব্য বলেন, ১২ নভেম্বর উপকূলের জন্য একটি কালো অধ্যায়। ৪৮ বছর আগের সেই দিনের বেদনা বিধুর ইতিহাস বাঙালি জাতি আজও ভুলতে পারেনি। ১৯৭০ সালের এই দিনে সমগ্র উপকূলজুড়ে বয়ে যায় মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বুঝতে না পারার খেসারত দিতে হয়েছে উপকূলের ১০ লক্ষাধিক নিরক্ষর মানুষের প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ভেসে যায় গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠ ফসল এবং অসংখ্য গাছপালা, পশু-পাখি। পুরো উপকূল মুহূর্তেই ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। চারদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে লাশ আর লাশ। বাতাসে লাশের গন্ধ আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ-বাতাস। উপকূলীয় অঞ্চল পটুয়াখালীর দশমিনাসহ, বরগুনা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ কয়েকটি উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস গোর্কী। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সে দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকেলের দিকে বাতাস বাড়তে থাকে। রাতের দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রচার করতে থাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি হারিকেনের রূপ ধারণ করেছে এবং যার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ২০-২৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, উপকূলের বঞ্চিত মানুষের কানে এ সতর্কবাণী পৌঁছেনি। তখন ছিল পবিত্র রমজান মাস। সবাই বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে হঠাৎ মানুষের আত্মচিৎকারে সবাই জেগে ওঠে। বাইরে প্রচন্ড বেগে বাতাস বইছে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই তীব্র গতিতে জোয়ারের তোড়ে প্রথমে উঠোন, সঙ্গে সঙ্গে ঘর ডুবে আসবাবপত্র ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সবাই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত হন। ঘরবাড়ি, গাছ-পালা ভাঙ্গার বিকট শব্দের সঙ্গে যুদ্ধংদেহী প্রকৃতির ভয়ঙ্কর গর্জনে মনে হয়েছে যেন কেয়ামত বুঝি শুরু হয়ে গেল। মানুষের বেঁচে থাকার করুন আকুতি। কেউ ছনের চালায়, টিনের চালায়, কেউ গাছের মগডালে, কেউ হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই ধরে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করেছে। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি অনেকের। জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। শেষ রাতের দিকে মুহূর্তেই প্রকৃতি শান্ত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে পানি নেমে যায়। চতুর্দিকে ভেসে আসে মানুষের আর্তনাদ। সন্তান হারা মায়ের কান্না, মা হারা সন্তানের চিৎকার, ভাই হারা বোনের বুকফাটা ধ্বনিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তিনি ১২ নভেম্বর উপকূল দিবসের দাবি জানান। আলোচনার সভার বিশেষ অতিথি ও দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের সাবেক মেডিকেল অফিসার ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১২ নভেম্বরের মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দশমিনা উপজেলাসহ কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চলের। ওই সময়ে দশমিনার কোথাও বেড়ি বাঁধ কিংবা সাইক্লোন শেল্টার তখনও গড়ে ওঠেনি। গাছপালা তেমন একটা লম্বা বা মোটা ছিল না। সাগর মোহনার ২৫-৩০ ফুট উঁচু ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাসে দশমিনার অনেক তাজাপ্রাণ ও গবাদিপশু সমূলে নিমিষেই স্রোতের টানে ভেসে গেছে উত্তাল সাগরে। প্রকৃতি শান্ত হলে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলে আছে লাশ আর লাশ। যেখানে সেখানে লাশ আর লাশ। সাপ আর মানুষের একসঙ্গে জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টার নিদর্শন দেখে মানুষ যেমন হয়েছে আতঙ্কিত তেমনি হয়েছে অভিভূত। তিনি আরও বলেন, দুঃখের বিষয়, এই লাখ লাখ মানুষ মারা গেলেও এর দিনটি স্মরণে এ দেশে পালনের জন্য নেই একটি দিন। তিনি উপকূলের মানুষের দুঃখ ও নিহতদের স্মরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণার দাবি জানান। পাশাপাশি দশমিনা উপজেলার সাংবাদিকদের উপকূলের সমস্যা ও সম্ভাবনার দিক নিয়ে বেশি বেশি সংবাদ প্রচারের অনুরোধ জানান। তিনি আশা করেন, দশমিনা সাংবাদিক সমিতিতে সংশ্লিষ্টরা বরাবরই উপকূল নিয়ে সংবাদ প্রচার করে থাকেন, সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎতে এর ধারা অব্যাহত থাকবে। উপকূল দিবস ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করায় যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম ও দশমিনা সাংবাদিক সমিতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপস্থিত অতিথিরা। অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সাফায়েত হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য হিরণ আহমেদ, ঠিকাদার ইকবাল হোসেন, মো. টিটু ও ইউপি সদস্য আফজাল প্রমুখ। উপদেষ্টা জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম দশমিনা, পটুয়াখালী