বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসারে পেঁয়াজের ঝাঁজ

কবির কাঞ্চন
  ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

কামরুল সাহেব একটি বেসরকারি বিমা কোম্পানিতে চাকরি করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে আর ছেলের বউদের নিয়ে তার সাজানো সংসার। বড় ছেলে বাবার সঙ্গে বিমা কোম্পানিতে চাকরি করে। ছোট ছেলে একটি প্রাইমারি স্কুলে অফিস সহকারী পদে চাকরি করে। ছেলেদের নিজে দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলের বউরা শ্বশুর-শাশুড়ির খুব যত্ন নেয়। ছেলের বউদের প্রত্যাশিতরূপে পেয়ে তারা খুবই খুশি। দুই বউ ঘরের সব কাজ মিলেমিশে করে। যৌথ পরিবারে কাজ করা নিয়ে যেন কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য তারা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নেয়। সপ্তাহের প্রথম তিন দিন বড় বউ আর পরের তিন দিন ছোট বউ রান্না করে। প্রতি শুক্রবারে দুজন মিলে রান্না করে। আর তাদের শাশুড়ি তা দেখাশোনা করেন। দুজনের রান্না খুব ভালো হয়। দিনের বেলায় যে যার সুবিধা মতো খেলেও রাতে সবাইকে ১০টার মধ্যে খাবার টেবিলে উপস্থিত হতে হয়। কামরুল সাহেব খাবার খেতে বসে একে একে সবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। সেকারণে কারও সঙ্গে কারও ভুল বোঝাবুঝি হয় না। এক কথায় কামরুল সাহেবের পরিবারটি একটি সুখী পরিবার।

কামরুল সাহেব নিজে প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিন করেন। ফ্রিজে জমিয়ে রেখে খেতে তিনি একদম পছন্দ করেন না। মাছ, মাংস থেকে শুরু করে সবকিছু তিনি পরিমিত পরিমাণে ক্রয় করেন। শুধু আলু, পেঁয়াজসহ অতি দরকারি কিছু জিনিস বেশি করে কিনে রাখেন।

পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দুই বউকে কাছে ডেকে তিনি পেঁয়াজের ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে পরামর্শ দেন। দুই বউ তা মেনে নিয়ে তরকারিতে পেঁয়াজ কম ব্যবহার করার সংকল্প করে।

প্রথম দিকের কয়েক সপ্তাহ দুজনেই এই নীতি মেলে চলে। কিন্তু খাওয়ার সময় সবার চোখমুখ দেখে তাদের বুঝতে বাকি থাকে না তরকারি এখন আর আগের মতো স্বাদ হয় না। প্রতিদিন কিছু ভাত থেকে যায়। আগের তুলনায় রান্নায় চালের ব্যবহারও কমে গেছে।

বড় বউ খুব হিসেব করে চললেও ছোট বউ ইদানীং তা করে না। সে মনে মনে ভাবে, ভাবীর চেয়ে আমার রান্না ভালো হতে হবে। প্রয়োজনে কিছু পেঁয়াজ বাড়িয়ে দেব। যেভাবেই হোক আমার রান্না ভাবীর রান্নার চেয়ে মজার হতে হবে। সবাই তখন আমার রান্নার প্রশংসা করবে।

এই ভেবে ছোট বউ প্রতিদিন রান্নায় পেঁয়াজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে রান্না করতে লাগল। ঘরের সদস্যরা ছোট বউয়ের রান্নার খুব প্রশংসা করতে থাকে। বড় বউ ভাবতে লাগল আগে তো সবাই আমার রান্নার প্রশংসা করত। এখন আমি যেদিন রান্না করি সেদিন সবাই খেয়ে নীরবে উঠে যায়। কিন্তু ছোট বউ যেদিন রান্না করে সেদিন সবাই মজা করে খায়। রান্নার প্রশংসা করে। কিন্তু কেন? জিনিসপত্র তো একই। তবে কি ছোট বউ রান্নায় আগের মতো পরিমিত পেঁয়াজ ব্যবহার করে? আবার ভাবে, না, তা করবে কেন? বাবা যেখানে নিষেধ করেছেন সেখানে এত বড় দুঃসাহস কীভাবে দেখাবে?

যাই হোক আগামী সপ্তাহে আমি পেঁয়াজের হিসাব রাখব।

শুক্রবার। কামরুল সাহেব বাজার থেকে ১৮০ টাকা করে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনে এনে বড় বউয়ের হাতে দিলেন। বড় বউ সেই পেঁয়াজ নিয়ে সমান দুই ভাগ করে এক ভাগ নিজের কাছে রেখে অন্য ভাগ ছোট বউকে বুঝিয়ে দিয়ে বলল,

- এগুলো তুমি ব্যবহার করবে। আর এগুলো আমি। একটু হিসাব করে ব্যবহার করো। ছোট বউ মুখ বেজার করে বলল,

- ভাবী, এ কেমন কথা! আমরা একসঙ্গে থাকি। একসঙ্গে খাই। কোনো কিছুরই যেখানে আলাদা করে হিসাব করি না। সেখানে পেঁয়াজ নিয়ে কেন এমন ভাগাভাগি?

বড় বউ মৃদু হেসে বলল,

- পেঁয়াজের দাম এখন অনেক বেশি। বাবার আদেশ মতে, আমাদের সবাইকে হিসাব করে চলতে হবে। তাই।

- আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? আমি তরকারিতে বেশি পেঁয়াজ দিই? আজ আসুক উনি। আমি এভাবে সন্দেহের মাঝে থাকতে চাই না। প্রয়োজনে আলাদা হয়ে যাব।

- এটা তুমি কি কথা বললে, ছোট বউ? এই সামান্য বিষয় নিয়ে এত বড় কথা বলতে পারলে!

- এটা তোমার কাছে সামান্য বিষয় মনে হলেও আমার কাছে খুব অপমানের মনে হয়েছে। সামান্য পেঁয়াজ নিয়ে ভাগাভাগি শুরু করে দিয়েছেন। না জানি পরে আরও কি শুরু করে দেন। তা আলস্নাহই ভালো জানেন।

- ছোট বউ, তুমি যেভাবে ভেবে নিয়েছো আমি সেভাবে ভাবিনি। সংসারটা তোমার, আমার আমাদের সবার। বাবা কেন বললেন, তরকারিতে পেঁয়াজ কমিয়ে দিতে। সেকথা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। দেখো, বাবার কিংবা আমাদের স্বামীদের বেতন তেমন বাড়েনি। অথচ দ্রব্যমূল্য দিন দিন লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। পেঁয়াজের কথাই ভেবে দেখো না। বিশ-পঁচিশ টাকার পেঁয়াজ এখন কিনতে হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা দামে।

- আপনি কি বলতে চান তা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি রান্নায় বেশি পেঁয়াজ ব্যবহার করি। ঠিক আছে। আমরা আর একসঙ্গে থাকব না। যার যার স্বামীর আয়ে যার যার সংসার চলবে।

দুই বউয়ের কথা কাটাকাটির মাঝে শাশুড়ি এসে বললেন,

- তোমরা কি নিয়ে ঝগড়া করছো, বৌমা?

বড় বউ আগ বাড়িয়ে বলল,

- দেখুন না, মা। ছোট বউ বলছে ওরা নাকি আলাদা হয়ে যাবে। ভিন্ন হয়ে যাবে।

শাশুড়ি অবাক হয়ে বলল,

- একি কথা! ছোট বউ, বড় বউ যা বলছে তা কি সত্যি? ছোট বউ ইতস্তত করে জবাব দিল,

- মা, আপনি যা শুনেছেন তা সত্য। সামান্য পেঁয়াজ নিয়ে ভাবী আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি শুরু করে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে একসঙ্গে কীভাবে থাকব?

শাশুড়ি দুই বউয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, - ওহ্‌! এই কথা।

ছোট বউ শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

-এমন আচরণের পরও কি বলবেন একসঙ্গে থাকতে?

শাশুড়ি বললেন, - শোনো। বড় বউ কেন পেঁয়াজ ভাগ করে দিয়েছে আমি তা বুঝতে পেরেছি। রান্নার সময় ছোট বউ পেঁয়াজ একটু বেশিই দিত। কেউ বুঝতে না পারলেও আমি তা বুঝে গেছি। সবাই ছোট বউয়ের রান্নার খুব প্রশংসা করায় বড় বউয়ের সন্দেহ হয়েছে। তাই সে এমনটি করেছে।

এ নিয়ে আর ঝগড়া করার দরকার নেই। সংসারটা আমাদের সবার। এখানে মিলেমিশে কাজ করে চলতে হবে। পেঁয়াজ বেশি করে আনার জন্য তোমাদের শ্বশুরকে আমি বলব। রান্নার স্বাদের জন্য এখন থেকে দুজনেই তরকারিতে পরিমিত পেঁয়াজ দেবে।

শাশুড়ির কথা শুনে দুই বউ লজ্জিত হয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

সদস্য

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম

চট্টগ্রাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79175 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1