পিঠা খাওয়ার আনন্দ

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অতুল কৃষ্ণ দাস
বাংলা বার মাসের ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যের রঙ্গালয় আমাদের বাংলাদেশ। বিভিন্ন ঋতুর অবর্তনের প্রভাব পড়েছে এ দেশবাসীর মনেপ্রাণে। ধর্মে, কর্মে, সাহিত্যে, কাব্যে, উৎসব ও অনুষ্ঠানে। পৌষ মাস শীতকাল, তার মধ্যে অন্যতম। এ সময় শীতের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য গরম কাপড়, শীতবস্ত্র, লেপকাঁথা-কম্বলের নিচে আশ্রয় নেয়। শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে। শীতে জড়সড় হয় মানুষ ও প্রাণিকুল। প্রকৃতি তখন শীর্ণ শুষ্ক ও ম্স্নান। সর্বত্রই রিক্ততায় ভরা। উত্তরীয় হিমেল হাওয়া বয়। তাই শীতের কুহেলী অবলুপ্ত ধূসর প্রকৃতির প্রাণান্ত আড়ষ্টতায় জাগে প্রাণ চঞ্চল বসন্তের পুষ্পিত প্রতীক্ষা। শীত প্রকৃতি মানুষের হৃদয়ে মনকে আলিঙ্গন করে চঞ্চল উদ্যমতায় প্রাণে জাগায় পুলক শিহরণ। শীতের রিক্ততা নতুন জীবন আগমনের ভূমিকা রচনা করে। সকালে ধীরে ধীরে কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে সূয্যিমামা আলো ছড়াতে থাকে। উত্তরের হিমশীতল হাওয়া বইতে থাকে। বনের গাছপালা থেকে টুপটাপ করে ঝরে পড়ে শিশির। এ সময় চাদর বা শাল মুড়ি দিয়ে রোদ পোয়ায় কিংবা আগুন জ্বালিয়ে চারদিকে কুন্ডলী করে আগুন পোয়ায়। রৌদ্র ঝলমলিয়ে উঠলে কৃষক বধূরা পৌষ পার্বণে বিচিত্র শীতের পিঠা তৈরি করে। হেমন্তের নবান্ন উৎসবে প্রতি ঘরে ঘরে পৌষ-সংক্রান্তিতে পিঠে তৈরির ধুমে মেতে ওঠে গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়ি। বিভিন্ন পিঠা তৈরি করে অতিথি ও পরিবারের সবাইকে খাওয়ার উপহার দেয়। কখনো কখনো খেজুরের রসের পায়েস তৈরি করে পরিবেশন করে সবাইকে। শীতের পিঠার সঙ্গে খেজুরের রসের গুড় মিশিয়ে খেতে কতইনা মজা। বিশেষ করে শীতকালে নতুন ধানের চাউলের গুঁড়া আর খেজুরের রসের গুড় দিয়ে বানানো হয় নানা রকম পিঠা। নানা নামে, নানা রূপের বাহারি ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটি শাপটা পিঠা, দুধে রসে ভিজানো পিঠা, তৈলির ভাজা আন্দশা, বড়া পিঠা ও পুলি পিঠা তৈরি হয় পলস্নীগ্রামের ঘরে ঘরে। খেজুরের গুড়ে মাখানো মুড়ি, পায়েস ও ক্ষীর ইত্যাদি মুখরোচক খাবার খাই পৌষ পার্বণে- পৌষ-সংক্রান্তিতে। এ সময় অনেক শহর থেকে মানুষ গ্রামে যায় পিঠা খেতে। তখন গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলো নতুন অতিথিদের আগমনে মুখরিত থাকে। শীতের সময় চুলোর পাশে বশে গরম গরম ভাঁপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে অর্থাৎ পৌষ পার্বণে বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা খাওয়ার মহোৎসব চলে। তাইতো আমাদের মহিলা কবি বেগম সুফিয়া কামালের 'পলস্নী স্মৃতি' কবিতায় পাই,- 'পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে ভীষম খেয়ে, আরো উলস্নাস বাড়িয়েছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে'। তাইতো কবি বেগম সুফিয়া কামাল মনের মনি কোঠায় আজও ধরে রেখেছে পৌষ পার্বণের আনন্দ ঘন পরিবেশকে তার কবিতায়। শীতের পিঠায় কামড় দিতে দিতে কিংবা কোচড় ভরা গুড়মুড়ি দিয়ে মজা করে খাওয়ার দৃশ্যটি পলস্নীগ্রামের সবখানে দেখা যায়। পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান। আমার লেখা 'শীতের পিঠা' কবিতায় শেষের দিকে বলতে চাই- "শীত কাল মানেইতো পিঠা পুলির মৌসুম, পিঠা খাব মজা করে চোখে নেই ঘুম। শীতের দিনে পিঠা পায়েস বল কোথা পাই, তাইতো এবার শহর থেকে পলস্নীতে যেতে চাই।' উপদেষ্টা কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ