শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমালাপ

মো. মাঈন উদ্দিন
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

নীরু, গোলাপি এই ড্রেসে তুকে যা লাগে না। এক্কেবারে গোলাপি পরীর মতো। আচ্ছা, লাল পরী, নীল পরী, সাদা পরীর কথা অনেক শুনেছি। গোলাপি পরীর কথা শুনিনি তো! আমার মনে হয় কী জানিস- তুই-ই এই দুনিয়াতে একমাত্র গোলাপি পরী। আমার গোলাপি পরী। আর তুই? তুই আমার কাছে বরাবরই রাজপুত্র। আমি প্রতি রাতে স্বপ্নে দেখি, ঘুমের ঘোরে, এমনকি জাগরণে। স্বপ্নে দেখি- তুই রাজপুত্রের মতো পঙ্খিরাজ ঘোরায় চড়ে আসছিস। বর বেশে। মাথায় ইয়া বড় পাগড়ি। গায়ে শেরওয়ানি। আমি বসে আছি বধূ বেশে। ঝলমলে শাড়ি পড়ে। একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে। লজ্জায় আমার মুখ লাল। রক্ত জবার মতো। আর তুই হাসছিস মিটমিট করে। শোনল সখি। আর ক'টা দিন সবুর করো, রসুন বুনেছি। রসুন না ছাই। অনার্স শেষ হয়ে এলো, অথচ আমার প্রতীক্ষার শেষ হলো না। না তুই বর বেশে এলি, না আমি বধূ হতে পারলাম।

আর তো মাত্র একটি বছর। এরপরই আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হবে। দু'জনে মিলে একটা নতুন ইনিংস শুরু করব। একবারে টেস্ট ইনিংস। কী বলিস নীরু?

নীরু চুপ। ওর মুখটাও কেমন যেন কালো হয়ে গেল। বলল, নিরব, আমার মনে একটি শঙ্কা রয়েই গেল। আপু প্রেম করে বিয়ে করেছে। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা নিয়ে আপু রতন ভাইয়ের হাত ধরে বাড়ি ছেড়েছিল। মা-বাবা মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু আপুর জেদের কাছে তারা পরাজিত হয়। সেই আপু আজ সংসার জীবনে অসুখী। বাবা আপুর খবর নেয় না। অভিমানে। মা আপুর কথা বলে বলে চোখ ভেজায়। সবাই বলে-আগের হাল যেদিকে যায়, পেছনের হালও সেদিকে যায়। আসলেই তো তাই-ই হচ্ছে। আমি তোর প্রেমে জড়িয়ে গেলাম। জানি না আমার কপালে কী আছে।

দেখ নীরু, তুকে কত করে বলেছি, এসব অলক্ষণে কথা বলবি না। এই তোর মাথা ছুঁয়ে শপথ করছি- নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোকে সুখী করার চেষ্টা করব।

নিরবের কথায় যেন নতুন করে উলস্নাসের ঢেউ খেয়ে যায় নীরুর মনে। ছোট্ট ছানার মতো তার মন লাফিয়ে ওঠে।

নিরব দেখ, ঐ ডালে দুটি চড়ুই পাখি কী করছে।

কোথায়? অহ! ঐ দুটি চড়ুই? দে আর কিচিং ইচ আদার।

যাহ, তুই না।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিল্ডিং। এর পেছন দিকটায় পার্কের আবহ বিরাজমান। নির্দিষ্ট দূরত্বে বড় বড় গাছ। সর্বত্র গাছের ছায়া। শীতল পরিবেশ। একটু ব্যবধানে দু-দু'টি কৃত্রিম ছাতা। ছাতার নিচে গোলাকার বসার স্থান। ইট-সিমেন্টের তৈরি। একটি ছাতার নিচে বসে আমি এতক্ষণ গল্পের পস্নট নিয়ে ভাবছিলাম। অপর ছাতার নিচে বসে প্রেমালাপ করছে ওরা দু'জন। আমি ওদের চিনি। বহুবার ক্যাম্পাসে দেখেছি। নাট্যকলা বিভাগে পড়ে। ছেলেমেয়ে একই পোশাকে ঘুরে বেড়ায়। কালো পাজামা, কালো টি-শার্ট। লজ্জার বালাই নেই। কিন্তু আজকে মার্জিত পোশাক পরনে। ওদের প্রেমালাপ ও উচ্চ হাসিতে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল। আমি উৎসুক চোখে দেখি গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া এই যুগলকে। তারা ক্রমান্তরে একে অপরের খুব কাছে চলে আসে। আমি চোখ নামাই। কিছুটা লজ্জায়। কিছুটা অকারণে।

এই নীরু। তুর হাতটা দে তো। কেন? আড় চোখে তাকায় নীরু। বারে, তুই আমার বউ হওয়ার পর সুখী হবে না অসুখী- তা হাতের রেখায় লেখা আছে যে। দে না তোর হাতটা। নে। ডান হাত বাড়িয়ে দেয়। পরম যত্নে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নীরুর হাত দেখে নিরব। 'আমি জানি বিয়ের পর কপালে অনেক কষ্ট আছে আমার'। হে তা তো আমিও জানি। বিয়ের পর তোর-আমার দশটা বাচ্চা হবে। এই দশটা বাচ্চাকে লালন-পালন করে বড় করতে তোর কষ্ট তো হবেই। আবার। ঘুষি মেরে তোকে পেছনে ফেলে দিব বললাম। ঠোঁট উল্টিয়ে বলে নীরু। গতকাল রিহার্সেলের সময় তুকে সেই রকম লাগছিল রে। কখন? যখন তুই নেচে নেচে গান গাচ্ছিলে- ঐ যমুনার জল দেখতে কালো, স্নাত করিতে লাগে ভালো...। নিরব গান ধরে। নিরবের সঙ্গে গেয়ে ওঠে নীরুও।

গান শেষে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে দু'জন। নিরব অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে নীরুর দিকে। নীরু নিরবের দিকে। নীরু। তোর গোলাপি ঠোঁট দু'টো খুব সুন্দর লাগছে রে। তোর ঐ সুন্দর ঠোঁটে একটু ছুঁতে দিবে? দিব। যদি তুই আমাকে চকলেট খাওয়াস।

: নিরব ডান হাতে আলতু করে ছুঁয়ে দেয় নীরুর গোলাপি ঠোঁট।

কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি। ভালোবাসা পৌঁছে যেতে চায় আরো সামনে। আরো গভীরে। এ দৃশ্য দেখার আগেই ফুড়ুৎ করে উড়ে যায় গাছে বসে থাকা চড়ুই যুগল। আমিও বসে থাকতে চাইনি। উঠে রওনা দিই প্রশাসনিক বিল্ডিংয়ের দিকে। আমার কর্মস্থলে।

\হসদস্য

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম, ময়মনসিংহ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<87153 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1