বিচিত্র

যে কারাগারে নেই কোনো রক্ষী ও অস্ত্র!

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিবিসি অবলম্বনে
কারাগারের দেয়ালে লেখা : ‘ভালোবাসা ত্যাগ করে কেউ পালায় না’
ব্রাজিলে কারাবন্দির মোট সংখ্যা বিশ্বের চতুথর্। কারাগারের ভেতরের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে প্রায়ই তুমুল আলোচনা চলে। পাশাপাশি রয়েছে ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দি এবং কারাগারের ভেতরে গুÐা দলের দৌরাত্ম্য, মাঝেমধ্যেই যা থেকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা তৈরি হয়। তবে দেশটিতে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্স টু কনভিক্টস’ (এপ্যাক) নামে একটি সংস্থা সম্পূণর্ ব্যতিক্রমধমীর্ এক কারাগার স্থাপন করেছে। গাডির্বহীন এই কারাগারটি ব্রাজিলের অন্য কারাগারের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। এখানে নেই কোনো কারারক্ষী। নেই কোনো অস্ত্র। মূল কারাগারে যেখানে বন্দিদের জন্য রয়েছে নিদির্ষ্ট পোশাক, সেখানে এই কারাগারটিতে বন্দিরা তাদের নিজেদের কাপড়ই পরতে পারেন। নারীদের সেলে রয়েছে আয়না ও মেকআপ করার সরঞ্জাম। ব্রাজিলের কারা সঙ্কটের পটভ‚মিতে এপ্যাক পরিচালিত কারাগারগুলো অনেক বেশি নিরাপদ, সস্তা এবং মানবিক বলে স্বীকৃতি পাচ্ছে। গত ২০ মাচর্ ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের রনডোনিয়া এলাকায় এপ্যাক পরিচালিত একটি কারাগারের উদ্বোধন করা হয়। সারা দেশে এ ধরনের ৪৯টি কারাগার রয়েছে। এখানে যে ধরনের বন্দিদের আনা হয় তাদের বেশির ভাগই আসে মূল কারাব্যবস্থা থেকে। এরা যে তাদের অপরাধের জন্য অনুশোচনা করছেন সেটা তাদের প্রমাণ করতে হয়। নিয়মিত শ্রম দেয়া এবং শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে এই কারাগারের যেসব নিয়মকানুন রয়েছে তা কঠোরভাবে পালন করা হয়। কারাগারে রয়েছে ‘কনজ্যুগাল স্যুট’, যেখানে রয়েছে ডাবল বেড খাট। দেখা করতে আসা স্বামীদের সঙ্গে বন্দিরা এখানে ‘ঘনিষ্ঠ সময়’ কাটাতে পারেন। কারাগারের একপাশে দেখা যায় নারীরা সাবানের বোতলে লেবেল লাগাচ্ছেন। বন্দিদের তৈরি এই তরল সাবান বাইরে বিক্রি করা হবে। প্রথম এপ্যাক কারাগার স্থাপন করা হয় ১৯৭২ সালে। একদল ক্যাথলিক খ্রিস্টান এটি তৈরি করেছিলেন। এখন এভিএসআই ফাউন্ডেশন নামে ইতালির একটি এনজিও এবং ব্রাজিলের সাবেক কারাবাসীদের একটি প্রতিষ্ঠানের অথার্য়ন করে থাকে। ব্রাজিলের মূল কারাগারগুলোতে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ নিয়মিত ঘটনা। এভিএসআই ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি জ্যাকোপো সাবাতিয়েলো বলছেন, ‘আমাদের কারাগারের মূল নীতি হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম এবং অন্যের প্রতি ভালোবাসা। আমরা সব বন্দিকে তাদের নাম ধরে ডাকি। নাম্বার দিয়ে কোনো বন্দির পরিচয় দিই না।’ এই কারাগারের বন্দিদের ডাকা হয় ‘রিকুপারেন্দোস’ নামে অথার্ৎ যাদের আরোগ্যলাভের প্রক্রিয়া চলছে। এক্যাপ বন্দিদের পুনবার্সনের দিকে জোর দিয়ে থাকে। বন্দিদের সারাদিন ধরে কাজ এবং পড়াশোনা করতে হয়। কখনো কখনো স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কাজ করতে হয়। কোনো বন্দি পালানোর চেষ্টা করলে মূল কারাব্যবস্থার হাতে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। মি. সাবাতিয়েলো বলছেন, এপ্যাকের কারাগারে মারামারির দু’একটা ঘটনা ঘটলেও খুন রাহাজানির মতো কোনো বড় অপরাধের নজির নেই। তিনি আরও জানান, কারাগারে কোনো রক্ষী না থাকায় উত্তেজনা কম থাকে। এখানে কিছু নারী রয়েছেন যারা যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভয়াবহ অপরাধ ঘটিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলে প্রায়ই নারীদের কারাগারে যেতে হয় তার পুরুষ সঙ্গীর অপরাধের জন্য। এরপর দাগী আসামিদের মধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। অনেকেই কারাগারের মধ্যেই অপরাধের তালিম নেন। ব্রাজিলের একজন বিচারক অ্যান্তোনিও দ্যা করাভালহো বলছেন, মূল কারাব্যবস্থায় কাজ এবং শিক্ষার মাধ্যমে দÐ কমানোর প্রথা থাকলেও এটা প্রয়োগ করা হয় সামান্যই। তিনি এপ্যাক কারাব্যবস্থার একজন সমথর্ক। তার কথায়, ‘মূল কারাব্যবস্থার বতর্মান হাল খুব দুঃখজনক। ব্রাজিলের বিচারব্যবস্থার মধ্যে থেকে বন্দির মানবাধিকার রক্ষা করতে চাইলে এপ্যাক ব্যবস্থাই সবচেয়ে কাযর্করী’। এপ্যাকের এই কারাগারের দেয়ালে লেখা রয়েছে : ‘ভালোবাসা ত্যাগ করে কেউ পালায় না’।